এইদিন ওয়েবডেস্ক,কেতুগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),০২ জুলাই : উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া কান্ডের মাঝেই পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামের সীতাহাটি পঞ্চায়েতের এক তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্যের মারধরে মৃত্যু হল এক বৃদ্ধার । মৃতার নাম বিন্দুবালা মজুমদার(৬২) । পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়েরের পর ঘাতক পঞ্চায়েত সদস্য বিশ্বজিৎ আচার্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । কেতুগ্রামের নৈহাটি গ্রামে তাঁর বাড়ি ।
জানা গেছে,কেতুগ্রাম-২ ব্লকের সীতাহাটি পঞ্চায়েতের এনায়েতপুর গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধূ ইতি দাস এই ঘটনার অভিযোগকারী । ইতিদেবীর স্বামী দীপক দাস পেশায় ক্ষুদ্র চাষি । তাঁদের দুই মেয়ে । বড় মেয়ে পূজা একবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর অকৃতকার্য হয়। ছোট মেয়ে ক্লাস ওয়ানের ছাত্রী । রবিবার দুপুর একটা নাগাদ পূজা বাড়ি থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়। বাড়ির লোকজন খোঁজাখুঁজি করার সময় জানতে পারেন যে মেয়ে পাশের নৈহাটি গ্রামের বাসিন্দা অর্জুন দেবনাথের ছেলে অভি দেবনাথের সঙ্গে প্রেম আছে এবং সে প্রেমিকের বাড়িতে চলে গেছে । এই খবর পেয়ে নৈহাটি গ্রামে অভি দেবনাথের বাড়িতে যান ইতি দাস,তার স্বামী দীপক দাস,তাদের ছোট মেয়ে ।
ইতিদেবীর অভিযোগ,আমরা ওখানে গিয়ে বুঝতে পারি পূজা ওদের বাড়িতেই রয়েছে । কিন্তু অর্জুন ও তাঁর বাবা আমার মেয়ের সঙ্গে কিছুতেই কথা বলতে দিতে চাইছিল না । তখন ওই গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য বিশ্বজিৎ আচার্য সেখানে চলে আসে। সে আমাদের হুমকি দিয়ে বলে মেয়ের সঙ্গে দেখা হবে না, বাড়ি চলে যাও ।’
জানা গেছে,তৃণমূল নেতার শাসানির পর ইতিদেবীরা ভয় পেয়ে বাড়ি ফিরে আসছিলেন । তারা টোটোয় চড়ে বাড়ি ফেরার পথে ইতিদেবীর মা বিন্দুবালা মজুমদারের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় । হুগলির জিরাটে বাড়ি বৃদ্ধা বিন্দুবালাদেবীর । ওই বৃদ্ধা তার নাতনিকে ফিরিয়ে আনতে ফের ইতিদেবীর সঙ্গে করে নৈহাটি গ্রামে অভি দেবনাথের বাড়ির সামনে চলে আসেন । ইতি দাসের কথায়,বিশ্বজিৎ আচার্য প্রথমে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে । প্রতিবাদ করে আমার মা বলেন, ‘গাধা কোথাকার, তোমার বাড়ির মেয়ে হলে কি করতে ?’ মায়ের এই অপরাধে বিশ্বজিৎ আচার্য মাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয় । তারপর সে তার পায়ের জুতো খুলে মায়ের বুকে সজোরে আঘাত করে । এই আঘাত সহ্য করতে পারেননি আমার মা । সেখানেই তার মৃত্যু হয়।’
জানা গেছে,বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি । নিহত বৃদ্ধার মেয়ে এনিয়ে কাটোয়া থানায় বিশ্বজিৎ আচার্য, অর্জুন দেবনাথ এবং অভি দেবনাথের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন । রবিবার রাতেই বিশ্বজিৎ আচার্যকে গ্রেপ্তার করা হয় কিন্তু বাকি দুজন অবশ্য পলাতক বলে জানা গেছে । সোমবার ধৃতকে কাটোয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে তাকে ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে । যদিও এই ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিকাশ বিশ্বাসের সাফাই, ওই বৃদ্ধার হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে । বিশ্বজিৎ আচার্যকে ফাঁসানো হয়েছে ।।