এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০২ জুলাই : পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়ায় ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক হামিদুল রহমানের ঘনিষ্ঠ তাজেমূল ইসলামের ‘ইনসাফ’ সভার আরেকটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। ভিডিওটি নিজের এক্স হ্যান্ডেলের শেয়ার করেছেন শুভেন্দু অধিকারী । সেই ভিডিওতে দেখা গেছে এক মহিলা এবং এক পুরুষের কোমরের দড়ি বাধা অবস্থায় রয়েছেন । হাতে একটি লাঠি নিয়ে তাদের শাসিয়ে যাচ্ছেন তাজিমূল ইসলাম । দড়ি বাধা মহিলা-পুরুষকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । দুজনকে লাঠিপেটাও করা হয়। তালিবানি কায়দায় সেই শাস্তির দৃশ্য দেখছেন অনেকে । আক্রান্ত যুগলকে একটি গাছের কাছে মাটিতে বসিয়ে মারধর করা হয়। তারপর মহিলা এবং পুরুষটিকে একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে মাটিতে শুইয়ে মারধর করা হয়, এই সময় তারা চিৎকার করতে থাকে। কেউ তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করে না। উপস্থিত দর্শকের মধ্যে কেউ কেউ মোবাইলে সেই ভিডিও করে ।
এর আগে চোপড়ার লক্ষ্মীপুরের প্রেমিক যুগলকে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে মারধরের ভিডিও সামনে এসেছিল । যা ঘিরে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে গোটা দেশ জুড়ে । নেটিজেনরা কেউ কেউ পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার দাবি তুলেছেন । কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী মনে করছেন যে একটা নির্বাচিত সরকারকে তার সময়কাল শাসন করতে দেওয়া উচিত । তবে ৩৫৫ ধারা প্রয়োগ করে মুখ্যমন্ত্রীর মমতা ব্যানার্জির হাত থেকে রাজ্যের পুলিশ ব্যবস্থাকে কেড়ে নেওয়ার দাবি তুলেছেন তিনি ।
সোমবার রাতে কলকাতায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে চোপড়ার ঘটনা প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘পুলিশের এখানে ভূমিকা কি সবাই জানে ।আমি মাননীয় রাজ্যপালকে বলবো দিল্লি থেকে ফিরে এসে তিনি সরাসরি যেন কেন্দ্রীয় সরকারকে লেখেন যাতে পশ্চিমবঙ্গে ৩৫৫ ধারা প্রয়োগ করে । মমতা ব্যানার্জি ২০২৬ অব্দি মুখ্যমন্ত্রী আছেন তাকে থাকতে দেওয়া হোক কিন্তু , তার অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতায় হাত দেওয়ার দরকার নেই, কিন্তু তার কাছ থেকে পুলিশটাকে কেড়ে নেওয়া হোক । এটাই হলো উপযুক্ত সময় । ৩৫৫ ধারা সুপারিশ করে উপদ্রুত ঘোষণা করে মনিপুরের মত সমস্ত থানা গুলোকে নিয়ন্ত্রণের নিয়ে নেওয়া উচিত ।’ তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে আইন-শৃঙ্খলার জন্য পরামর্শ দাতা নিয়োগ করা উচিত । যেমন মণিপুর সিআরপিএফ এর প্রাক্তন ডিজি কুলদীপ সিং আছেন তেমনি এখানেও কাশ্মীরের অভিযানে সফল হয়েছেন এমন সেনাকর্তাদের মধ্যে কাউকে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত পরামর্শদাতা নিয়োগ করা হোক ।’ তবে তিনি এটাও জানান যে ৩৫৫ ধারা গোটা রাজ্যে লাগানো যায়না । কতগুলো নির্দিষ্ট এলাকাকে চিহ্নিত করে লাগানো যায় । সেই সমস্ত এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে ৩৫৫ ধারা প্রয়োগের পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেছে । শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’নির্দিষ্ট করে বললে আমি ৪০ থেকে ৪৫ টা থানার নাম দিয়ে দেব৷ ওই সমস্ত থানা এলাকার আইন-শৃঙ্খলা কে পুরোপুরি সিজ করে দেওয়া উচিত। তাই রাজ্যপালকে বলব সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করুন । আপনি চাইলে পারেন । আপনি দিল্লি থেকে ফিরে এসে কেন্দ্র সরকারকে ৩৫৫ ধারা প্রয়োগের সুপারিশ করুন । আমরা আপনার পাশে আছি ।’
পাশাপাশি তিনি চোপড়া ও কোচবিহারের ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন,’একটা লোকের নামে বারোটা মামলা । তার মধ্যে তিনটে খুনের মামলা৷ আগে ‘খাপ পঞ্চায়েত’ এর কথা শুনতাম,আর এখানে চলছে ‘তৃণমূল পঞ্চায়েত’। সেই পঞ্চায়েত চালাচ্ছে সরাসরি টিএমসির নেতা, গুন্ডা, মাস্তান, পশ্চিমবঙ্গকে মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করা হামিদুর রহমানের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার । আমি মুখ্য সচিবকে লিখব কোচবিহারের অপরাজিতার ঘটনা এবং চোপড়ার মেহেরুন্নিসার ঘটনার কথা । এই দুটো ঘটনাই সিবিআই কে হস্তান্তর করার জন্য বাংলার মহিলা মুখ্যমন্ত্রী যেন সুপারিশ করেন৷ মুখ্য সচিব যদি গ্রহণ না করেন প্রয়োজন হলে আইনের আশ্রয় নেব ।’
এদিকে আজ মঙ্গলবার চোপড়ায় যাচ্ছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (C V Ananda Bose)। কোচবিহারেও তাঁর যাওয়ার কথা রয়েছে বলে রাজভবন সূত্রে খবর । তবে শুভেন্দু অধিকারী মনে করছেন যে রাজ্যপাল সেখানে গিয়ে কোন সাক্ষী পাবেন না । তিনি বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরে মহামান্য রাজ্যপাল পরিদর্শন করতে গিয়ে কিছু পাবেন না। লক্ষ্মীপুর বা চোপড়া কে হামিদুর রহমান কার্যত ভারতের মধ্যে এক আর একটা রাষ্ট্র বানিয়ে রেখেছে৷ তাই রাজ্যপাল সেখানে গিয়ে খুব বেশি সাক্ষী পাবেন না ।’ তার অভিযোগ,’এবারও লোকসভা নির্বাচনে কিভাবে ওখানে ছাপ্পা হয়েছে এবং প্রায় এক লক্ষের বেশি ভোট লিড তৃণমূলের প্রার্থী গোপাল লামা পেয়েছেন। পঞ্চায়েতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খুন করেছে তাজামূলরা । মনোনয়ন করতে দেওয়া হয়নি । বিরোধী দলের তিন থেকে চার জন খুন হয়েছে । যাদের লোকেরা দিল্লিতে ইন্ডিজোটে আছে । দিল্লিতে দোস্তি আরা এখানে কুস্তি । মহামান্য রাজ্যপালের উদ্যোগ ভালো তবে এর একটা শেষ দেখে ছাড়তে হবে ।’ শুভেন্দুর কথায়, ‘পশ্চিমবাংলায় এখনো যেটুকু গণতন্ত্র আছে সেটা বিচার ব্যবস্থার জন্য টিকে আছে।’।