এইদিন ওয়েবডেস্ক,উত্তর দিনাজপুর,০১ জুলাই : উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়ার তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তাজিমূল ইসলাম ওরফে জেসিবির ‘ইনসাফ সভা’য় এক যুবক ও যুবতীকে তালিবানি কায়দায় শাস্তির ভিডিও ফুটেজ নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে । যদিও বিষয়টি নিয়ে দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হলে উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুর রহমানের ‘ঘনিষ্ঠ সহযোগী’ বলে পরিচিত তাজিমূলকে গ্রেফতার করে পুলিশ । পুলিশ তার বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছিল । সেই মামলায় রয়েছে খুনের চেষ্টা, গুরুতর জখম করা, শ্লীলতাহানি, মহিলার সঙ্গে অভব্য আচরণ, যড়যন্ত্র করে অপরাধ ঘটনোর সহ মোট সাতটি ধারা । তার মধ্যে দুটি জামিন অযোগ্য এবং তিনটি জামিনযোগ্য ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে । ধৃতকে আদালতে তুলে ১০ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়েছিল পুলিশ । কিন্তু বিচারক ৫ দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেছেন । উত্তর দিনাজপুর জেলার লক্ষ্মীকান্তপুর এলাকার ওই ঘটনার পর পুলিশের বিরুদ্ধেও উঠেছিল নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ । যেকারণে শোকজ করা হয়েছে চোপড়া থানার আইসিকে । আজ রাজ্য পুলিশের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডলে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে ।
এদিকে গ্রেফতারের পর তাজিমুল ইসলাম ওরফে জেসিবির একের পর এক কুকীর্তি প্রকাশ্যে আসছে । শোনা যাচ্ছে যে চোপড়াকে কার্যত নিজের মুক্তাঞ্চলে পরিনত করে রেখেছিল সে । তোলাবাজি থেকে শুরু করে একাধিক গুরুতর অভিযোগে তাজিমুলের বিরুদ্ধে রয়েছে মোট ১২ টি মামলা । কেউ নতুন বাড়ি নির্মান করলে তাজুমূলকে উপঢৌকন দিতে হত ৷ এমনকি শষ্য বিক্রির জন্যও সে কৃষকদের কাছ থেকে তোলা তুলতো বলে অভিযোগ । এক সিপিএম নেতাকে খুনের অভিযোগেও অভিযুক্ত তাজিমূল । গ্রেফতারও হয়েছিল । সম্প্রতি সে জেল থেকে ছাড়া পায় এবং ফের এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে । অভিযোগ, এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেও চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুর রহমানের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাজিমুলের টিকি ছুঁতে পারত না পুলিশ ! উলটে লক্ষ্মীপুরের ঘটনার পর বিধায়ক সাফাই দেন, ‘ইসলামি রাষ্ট্রে এই ধরনের আচার বিচার আছে ।’ তার এই মন্তব্যের পর নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে৷
রবিবার দুপুরে সিপিএমের নেতা মহম্মদ সেলিম উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর থানার লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দিঘলগাঁও এলাকায় তাজিমূল ইসলামের ‘ইনসাফ সভা’র ভিডিও শেয়ার করলে দেশ জুড়ে তোলপাড় পরে যায় । আজও এক্স-এ ট্রেন্ড করছে সেই ভিডিও । যদিও ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি এইদিন । ভিডিওতে দেখা গেছে, হলুদ-শাদা শালোয়ার কামিজ পরা একজন ভীতিসন্ত্রস্ত মহিলা মাটিতে বসে আছেন । মহিলার পাশে হাঁটু মুড়ে বসে আছেন প্যান্ট-শার্ট পরা এক ব্যক্তি । তাদের মাঝে এক গোছা কাঁচা কঞ্চি হাতে দাঁড়িয়ে আছে প্যান্ট ও কালো গেঞ্জি পরা এক ব্যক্তি । তাদের গোল হয়ে ঘিরে আছে জনতা । জনতার সামনে চেয়ারে বসে আসে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি । কঞ্চি হাতে ব্যক্তিটি মহিলার পাছা,পা,বুকে নির্মমভাবে পেটাচ্ছে । যন্ত্রায় চিৎকার করতে করতে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন ওই মহিলা । মহিলা নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে না নিস্তেজ হয়ে পড়লে তার পাশে বসে থাকা পুরুষকে কঞ্চি দিয়ে বেদম পেটাতে শুরু করে কালো গেঞ্জি পরা ব্যক্তি । নির্ম্লম প্রহারে যুবক ব্যক্তি লুটিয়ে পড়লে ফের সে মহিলাকে কঞ্চি দিয়ে পিটিয়ে,লাথি মেরে এবং চুল ধরে ঠেলে ফেলে দিয়ে শাসায় । আর মহিলা বা ওই পুরুষকে উদ্ধার করার পরিবর্তে কার্যত ‘তামাসা’ দেখে জনতা । বেশ কিছুক্ষণ পাশবিক অত্যাচার চলার পরে ‘ইনসাফ’ করা ব্যক্তির হাত থেকে কঞ্চির গোছা কেড়ে নেয় । শোনা যাচ্ছে যে আক্রান্ত যুবক-যুবতীর মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল এবং তারা পালিয়ে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন । আর তাদের এই অপরাধের সাজা তালিবানি কায়দায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাজিমূল । আক্রান্ত যুবক-যুবতীর বয়ান পুলিশ রেকর্ড করেছে বলে জানা গেছে ।।