তুমি বললে বিয়ের পর
হানিমুনে কোথায় যেতে চাও
সমুদ্র পাহাড় নাকি জঙ্গল?
আমি বললাম সমুদ্র
তুমি বললে কেন সমুদ্র কেন?
আমি বললাম নির্জন সৈকত আমার ভীষণ ভালো লাগে তাই!
তুমি বললে বেশ তাই হবে।
সেইভাবেই আমি স্বপ্ন আঁকছিলাম একটু একটু করে
আমার দু’চোখ তখন বিভোর সমুদ্র আর আকাশের নীল অঞ্জন মেখে।
আমি পাগলের মত ছুটে চলেছি তোমার হাত ধরে বালির উপর দিয়ে
সমুদ্র এসে আমাদের পা ভিজিয়ে দিচ্ছে আর তুমি জল ছিটিয়ে দিচ্ছ আমার সর্বাঙ্গে
উফ! কি শিহরণ!আমার সারা শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল
কখন যেন এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল।তিরতির করে বয়ে যাওয়া ঠান্ডা বাতাস, বৃষ্টি ফোটা, উত্তাল সমুদ্রের গর্জন আমার কামনার ঘোরকে উষ্কে দিয়ে গেল।
আমি তোমাকে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরলাম।
তোমার ঠোঁট গাঢ় চুম্বনে আবিষ্ট করল আমার ঠোঁটকে
তোমার সুঠাম বাহুবন্ধনে আমার সারা শরীর যেন শিথিল হয়ে এল
আমি ভেসে চলেছি অজানা কোন সুরলোকে. . . .
আর ঠিক তখনই তুমি বলে উঠলে
না না সমুদ্র নয় সমুদ্র নয় আমরা বরং পাহাড়ে যাব
বরফের চাদর গায়ে জড়িয়ে পাহাড়ের কোলে বেড়ে ওঠা
পাইন গাছের শোভা দেখতে দেখতে
মেঘ, বৃষ্টি আর ঝরনায় অবগাহন করব।
আমি খানিকটা বিরক্ত হয়েই বললাম বেশ তাই হবে!
ঠিক তখনই আমার মন সমুদ্রের পার ছেড়ে
আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে মেঘেদের ঠান্ডা হাওয়া গায়ে মাখতে মাখতে পাহাড়ি কন্যার মত ছুটতে লাগল অজস্র নুড়ি পাথর কুড়াতে।
কুড়িয়ে নিতে লাগল তোমায় দেব বলে
কারণ সে শুনতে চায় তোমার মুখে
তুমি হেসে বলবে পাগলী কোথাকার!
কিন্তু তুমি এবার ও আমায় থামিয়ে দিয়ে বললে
না না পাহাড়ে নয় তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে
তার চেয়ে বরং আমরা ডুয়ার্সের জঙ্গলে যাই
সেখানে কত গাছগাছালি আর কত বনের পশুপাখি
তাদের সাথে আমাদের সখ্যতা হবে।
আমি মনে মনে রেগে গিয়ে বললাম
যাও…তোমার যেখানে ইচ্ছে সেখানে নিয়ে যাবে
আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা কোর না।
তবু দুরন্ত মন কখন বন্য হরিণী হয়ে
ছুটতে লাগল অলীক মধুচন্দ্রিমার সেই মিষ্টি মধুর রাতে
স্বপ্নে অনুভব করলাম তোমার মাথা আমার কোলের পরে
চারিদিক কি নিঃসীম শান্তি, রূপালী চাঁদ যেন মাটিতে নেমে এসে কোন মায়াজাল সৃষ্টি করেছে! বাতাসে অচেনা ফুলের মিষ্টি গন্ধ। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর
তুমি গান ধরেছ রবি ঠাকুরের সেই গান
“আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে…..
আর ঠিক তখনই ঠিক তখনই আমার সমস্ত আসায় জল ঢেলে বললে
না না জঙ্গলে নয় জঙ্গলে নয়
আমি অফিসের ছুটি পাবো না
তাছাড়া পরের দিন মা বাপি মুম্বাই যাচ্ছে দিদির বাড়ি
আমরা নতুন মামা মামী হব কিনা!
আমি এবার প্রচন্ড রেগে গিয়ে যেই কিছু বলতে যাব
অমনি তুমি আমার মুখ চেপে খানিকটা নিজের কাছে টেনে নিয়েই চোখে চোখ রেখে বললে. . . .
“নীড় ছোট ক্ষতি নেই আকাশ তো বড়”….
এরপর এরপর আমরা দুজনেই খিলখিল করে হেসে উঠলাম একসাথে।।