প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৬ জুন : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারিতেই যেন ভাগ্যের শিকে ছিড়লো সহায় সম্বলহীন বৃদ্ধা পুষ্পার।তাঁর ঘর দখল করে তৃণমূলের পার্টি অফিস বানানো নেত্রী এতদিন ঘর না ছাড়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে শেষ অব্দি পিছু হঠলেন। বুধবার পূর্ব বর্ধমানের বড়শুলে বিডিও অফিসে বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত হল জবরদখল করা বৃদ্ধার ঘর ছেড়ে দেবেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মিতা দাস।এর জন্যে মুখ্যমন্ত্রী সহ প্রশাসনের কর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছেন অসতীপর বৃদ্ধা পুষ্পা চক্রবর্তী ও তাঁর বেন মমতা দেবী ।
বৃদ্ধার পু্ষ্পা চক্রবর্তীর তাঁর বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের বৈকন্ঠপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের হ্যাচারি রোডে।বৃদ্ধার বাড়ি ভাড়া নিয়ে ২০১৯ সালে তৈরি হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা মিতা দাস। পর পর দু’বছর নিয়মিত ওই বাড়ির ভাড়া পেয়েছেন পুস্পা দেবী। অভিযোগ, “তারপর থেকে তিনি তাঁর ঘরের ভাড়া আর পাচ্ছেন না। কার্যত তাঁর ঘর জবর দখল করে রাখা হয়েছে বলেই বৃদ্ধার দাবি ।
বৃদ্ধা পুষ্পা দেবীর কথা অনুযায়ী, বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ।তিনি এক প্রকার শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন। এই অবস্থায় তাঁর বোন মমতা দেবী মাঝে মধ্যে এসে তাঁর দেখাশোনা করেন। বোনের বাড়ি বুদবুদ এলাকায়। ভাড়া না পাওয়ায় চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছেন বলে পুষ্পা দেবী জানান। তিনি এও বলেন ,ঘরের ভাড়া না মেলার কথা তিনি পঞ্চায়েতয় সদস্যা মিতা দাসকে একাধিক বার জানিয়েছেন।বাড়ি ভাড়ার জন্যে বারবার মিতা দাসের কাছে দরবারও করেছেন। কিন্তু লাভ হয়নি। ভাড়ার টাকা চাইলেও মিলে না।অসহায় হয়ে পুস্পা দেবী গোটা বিষয়টি জানিয়ে বর্ধমান ২ নম্বর ব্লকের বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতি, থানা ও পঞ্চায়েত অফিসে জানান।কিন্তু তাতেও সুরাহা হয় না। এমত অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তার পর আশান্বিত হয়ে দিদি পুষ্পাদেবীর পাশে দাঁড়িয়ে এখন ঘর ফেরতের আর্জি জানাচ্ছেন বোন মমতা দেবীও।
মঙ্গলবার ফের বর্ধমান ২ নম্বর বিডিও অফিসে যান পুস্পা চক্রবর্তীর বোন মমতা দেবী।বাড়ি জবরদখল করে থাকা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্যা মিতা দাসের বিরুদ্ধে ওই দিনও অভিযোগ জানান। ঘর জবর দখল মুক্ত করে দেওয়ার আর্জিও তিনি বিডিওর কাছে রাখেন।
সেই অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসেন বিডিও দিব্যজ্যোতি দাস। তিনি পঞ্চায়েতকে দায়িত্ব দেন গোটা বিষয়টি তদন্ত করার জন্য। পঞ্চায়েত তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেবার পর বুধবার বিডিও দপ্তরে বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিডিও ছাড়াও প্রধান মনুশ্রী মণ্ডল, অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যা মিতা দাস, বাড়ির মালিক পুষ্পা চক্রবর্তী ও তার বোন মমতা দেবী। বৈঠকে শেষে বিডিও দিব্যজ্যোতি দাস জানান, পঞ্চায়েতের প্রাথমিক তদন্তে পর ফাস্ট হেয়ারিং হয়েছে। দ্বিতীয় হেয়ারিংয়ের পর সব সমস্যা মিটে যাবে। অর্থাৎ পার্টি অফিসের নামে দখল করে রাখা ঘরটি ছেড়ে দেওয়া হবে“। পুষ্পা চক্রবর্তী ও তার বোন মমতা দেবী বলেন,”১৫ দিনের মধ্যে দখল করে রাখা ঘর ছেড়ে দেওয়া হবে বলে বিডিও অফিসের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। মিতা দাস ঘর ছেড়ে দেবেন বলে বৈঠকে জানিয়েছেন ।
তবে ঘর না ছাড়ার ব্যাপারে এতদিন অনড় মনোভাব দেখানো তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যা মিতা দাস এদিনের বৈঠকের পর সংবাদ মাধ্যমের কাছে কিছু বলতে চাননি ।।