এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৬ জুন : ফুটপাতের উপর অবৈধ দোকানপাট নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । তারপর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কলকাতা ও সল্টলেক জুড়ে শুরু হয়ে যায় হকার উচ্ছেদ। গড়িয়াহাট থেকে নিউ মার্কেট, সল্টলেক থেকে রাজারহাট কোথাও যাওয়া চলবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে পুলিশ । আজ বুধবার কলকাতার রাস্তায় রীতিমতো বুলডোজার নিয়ে অভিযান চালাল পুলিশ। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে প্রচুর দোকানপাট । তবে শুধু কলকাতাই নয়,রাজ্য হকার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে রাজ্য পুলিশ । ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়ে পরিবার নিয়ে কার্যত পথে বসেছেন । পথে বসা মানুষের কান্নার রোলের মধ্যে জমছে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ।
এদিকে আজ নির্বাচনী জনসভার মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপিংস নিজের এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করে মমতা ব্যানার্জির এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । ভিডিওতে মমতা ব্যানার্জিকে বলতে শোনা গেছে,’১০০০ টাকা জোগাড় করে একটা কেটলি কিনুন আর কয়েকটা মাটির ভাড় নিন । সাথে কিছু বিস্কুট নিন । আস্তে আস্তে বাড়বে । প্রথম দিন আপনি বিস্কুট নিলেন, প্রথম সপ্তাহে, তারপরের সপ্তায় মাকে বললেন মা একটু ঘুগনি তৈরি করে দাও’ । তারপরের সপ্তাহে একটু তেলেভাজা করলেন । একটা টুল আর একটা টেবিল, নিয়ে বসলেন । এইতো পুজো আসছে সামনে । দেখবেন লোককে দিয়ে কুলোতে পারবেন না, আজকাল এত বিক্রি আছে ।’
প্রতিক্রিয়া শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন, ‘ভোটের আগে তো টুল টেবিল নিয়ে ব্যাবসা করার উপায় আপনি বলেছিলেন মাননীয়া, আজ এদের উচ্ছেদ করছেন কেনো? দখলদার উচ্ছেদ অভিযানের নামে মুখ্যমন্ত্রী যে ‘খাঁড়ার ঘা’ অভাবী পরিশ্রমী হকার ও দোকানদারদের ওপরে নামিয়ে আনলেন, সেই বিষয়ে আমার কয়েকটি পর্যবেক্ষণ :-
১) এই দোকানদারদের বসার অনুমতি কে দিয়েছিলো? মুখ্যমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী ওনার দলের নেতারা। আজ শাস্তি একা এই গরিব মানুষগুলো ভোগ করবে কেনো? তৃণমূল নেতা মন্ত্রীদের কি সাজা হবে?
২) পুলিশ প্রশাসন বছর বছর তোলা নেওয়ার বিনিময়ে ব্যাবসা করার অবৈধ অনুমতি দিয়েছে। সেই তোলার টাকা কোথায় গেলো? কে ভাগ পেলো? সেই টাকা উদ্ধার হবে? পুলিশ কর্তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে?
৩) যে গরিব লোক গুলো এত বছর ধরে ব্যবসা করে সংসার চালাচ্ছে পুলিশ প্রশাসনের মদতে তাদের হঠাৎ একদিন বিনা আগাম সূচনা দিয়ে উচ্ছেদ করে দিলে, তাদের সংসার চলবে কি করে?
তাদের পুনর্বাসনের কি পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের?
৪) অবাঙালিদের ওপর রেগে গিয়ে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলো, বিনা সমীক্ষা করে, তার খেসারত মূলত বাঙালিদের দিতে হচ্ছে না তো? যদিও আইন ও আমাদের সংবিধান অনুযায়ী অবাঙালি হলেও পশ্চিমবঙ্গে এসে জীবিকা অর্জনের অধিকার ভারতের অন্য প্রদেশের লোকেদের ও সমান ভাবে রয়েছে। তাই কাউকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্তই অসংবিধানিক।
৫) সরকার যে বল প্রয়োগ করছে উচ্ছেদ করতে গিয়ে, এই দৃশ্য রাজাবাজার, মেটিয়াবুরুজ, তোপসিয়া, গার্ডেনরিচ, পার্ক সার্কাস ইত্যাদি এলাকায় কবে চাক্ষুষ করা যাবে? সরকারের ক্ষমতা আছে এই এলাকা গুলোতে বল প্রয়োগ করার? নাকি এই সব আস্ফালন অন্যত্র চলবে?
সর্বশেষে আপনার বুদ্ধিতে যারা টুল টেবিল পেতে ব্যবসা করতে উদ্যত হয়েছিলেন সেই জবরদখলের নৈতিক দায় আপনি নেবেন তো মাননীয়া? এই শিল্পহীন ও কর্মহীন রাজ্যে যারা সংসার চালাচ্ছেন আপনার নেতাদের মতো কাটমানি খেয়ে নয়, পরিশ্রম করে সৎ পথে, তাদের উচ্ছেদ করতে গিয়ে আপনার পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মচারীরা যে ভাবে দোকানের মালপত্র, খাওয়ার সামগ্রী লাথি মেরে ঠেলে ফেলে দিচ্ছে, তাদেরকে এই আসকারা কি আপনি দিয়েছেন?’
পাশাপাশি আজ বিকেলে কলকাতায় বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করেন শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’মমতা ব্যানার্জির উচ্ছেদ অভিযানের নির্দেশ অমানবিক । বিভিন্ন পুরসভা এলাকায় মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তদের সামান্য রোজগারের উপরে ভয়াবহ অর্থনৈতিক অবরোধ নামিয়ে আনা হয়েছে। বিজেপির তরফে এর বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’ সেই সাথে তিনি জানান যে প্রয়োজনে তিনি নিজে বুলডোজারের সামনে দাঁড়াবেন । তাঁর অভিযোগ, ‘সরকারি জমি দখলের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের উদ্যোগকে প্রথমে আমরা মহৎ বলে মনে করেছিলাম। কিন্তু পরে দেখলাম, সরকারি জমি আদৌ উদ্ধার হচ্ছে না। বিশেষ কয়েকটি এলাকায় সাধারণ গরিব মানুষের ক্ষতি করা হচ্ছে। সবটাই হচ্ছে ক্যামেরার সামনে। অর্থাৎ, কাজের চেয়ে প্রচারের তাগিদ বেশি ।’।