শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, আমাদের অতি পরিচিত, বিশ্বনন্দিত পবিত্রতম গ্রন্থ। ভগবান যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধের প্রাক্কালে শোকাকূল অর্জুনকে এই কালজয়ী জ্ঞান প্রদান করেন । শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা সম্বন্ধে আমরা সবাই মোটামুটি ধারণা রাখি। কিন্তু শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা সম্বন্ধে খুব মৌলিক কিছু প্রশ্ন আমাদের অনেকের মনে থাকে। আমরা সেগুলো সম্বন্ধে পরিস্কার জানিনা। যেমন গীতা কীভাবে বলা হলো এবং কীভাবে সঞ্জয় তা ধৃতরাষ্ট্রকে জানালেন? আমাদের অধিকাংশের ধারণা কুরুক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন কথা বলছিলেন এবং তার থেকে অনেক দূরে হস্তিনাপুরের রাজ্যমহলের একটি কক্ষে বসে সঞ্জয় দিব্যদৃষ্টিতে তা দেখতে পাচ্ছিলেন আর সরাসরি ঘটনার বর্ণনা করছিলেন ধৃতরাষ্ট্রকে । এটা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেন যে এ কীভাবে সম্ভব ! আসলে বাস্তবে নাকি এটা হয়ই নি! মূল মহাভারতের ইতিহাস সত্য ও বাস্তব ইতিহাস.দুই রাজবংশের যুদ্ধের স্বাভাবিক ইতিহাস । ইতিহাস আর পৌরাণিক রূপকথা এক নয় । মহাভারতের শান্তিপর্বে (৩৪৮/৫১-৫২) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ইতিহাসের উল্লেখ আছে ।
“ত্রেতাযুগাদৌ চ ততো বিবস্বান্ মনবে দদৌ ।
মনুশ্চ লোকভূত্যর্থং সুতায়েক্ষ্বাকবে দদৌ ।
ইক্ষ্বাকুণা চ কথিতো ব্যাপ্য লোকানবস্থিতঃ ।।”
‘ত্রেতাযুগের প্রারম্ভে বিবস্বান মনুকে ভগবৎ-তত্ত্বজ্ঞান দান করেন। মানব-সমাজের পিতা মনু এই জ্ঞান তাঁর পুত্র সসাগরা পৃথিবীর অধীশ্বর এবং রঘুবংশের জনক ইক্ষ্বাকুকে দান করেন। এই রঘুবংশে শ্রীরামচন্দ্র আবির্ভূত হন।’ সুতরাং,শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা মহারাজ ইক্ষ্বাকুর সময় থেকেই মানব-সমাজে বর্তমান। এই পৃথিবীতে এখন কলিযুগের পাঁচ হাজার বছর চলছে। কলিযুগের স্থায়িত্ব ৪,৩২,০০০ বছর। এর আগে ছিল দ্বাপরযুগ (৮,০০,০০০ বছর) এবং তার আগে ছিল ত্রেতাযুগ (১২,০০,০০০ বছর)। এভাবে প্রায় ২০,০৫,০০০ বছর আগে মনু তাঁর পুত্র এই পৃথিবীর অধীশ্বর ইক্ষ্বাকুকে এই ভগবদ্গীতার জ্ঞান দান করেন। বর্তমান মনুর আয়ু ৩০,৫৩,০০,০০০ বছর, তার মধ্যে ১২,০৪,০০,০০০ অতিবাহিত হয়েছে। আমরা যদি মনে করি, মনুর জন্মের সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিবস্বানকে ভগবদ্গীতার জ্ঞান দান করেছিলেন, তা হলেও গীতা প্রথমে বলা হয় ১২,০৪,০০,০০০ বছর আগে এবং মানব-সমাজে এই জ্ঞান প্রায় ২০,০০,০০০ বছর ধরে বর্তমান। পাঁচ হাজার বছর আগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই জ্ঞান পুনরায় অর্জুনকে দান করেন। গীতার বক্তা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বর্ণনা অনুযায়ী এই হচ্ছে গীতার ইতিহাস।
ভগবান সর্বপ্রথম এই জ্ঞান বিবস্বানকে দান করেন, কারণ বিবস্বানও হচ্ছেন একজন ক্ষত্রিয় এবং সূর্যবংশজাত সমস্ত ক্ষত্রিয়ের তিনিই হচ্ছেন আদি পিতা। ভগবানের কাছ থেকে আমরা ভগবদ্গীতা প্রাপ্ত হয়েছি বলে ভগবদ্গীতা বেদেরই মতো পরম তত্ত্বজ্ঞান সমন্বিত জ্ঞান অপৌরুষেয়। বৈদিক জ্ঞানকে যেমন যথানুরূপভাবে গ্রহণ করতে হয়,মানুষের কল্পনাপ্রসূত ব্যাখ্যা সেখানে প্রযোজ্য হয় না, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা তেমনই জড় বুদ্ধিপ্রসূত ব্যাখ্যার কলুষমুক্ত অবস্থায় গ্রহণ করতে হবে। প্রাকৃত তার্কিকেরা ভগবানের দেওয়া ভগবদ্গীতার উপর তাদের পাণ্ডিত্য জাহির করার চেষ্টা করে,কিন্তু তা যথাযথ ভগবদ্গীতা নয়। ভগবদ্গীতার যথার্থ মর্ম উপলব্ধি করতে হয় । গুরু-পরম্পরার ধারায় এবং এখানে বর্ণনা করা হয়েছে যে, ভগবান এই জ্ঞান প্রথমে বিবস্বানকে দান করেন। বিবস্বান তা দেন মনুকে, মনু ইক্ষ্বাকুকে এভাবেই গুরু-শিষ্য পরম্পরাক্রমে এই জ্ঞান প্রবাহিত হয়ে আসছে।।
প্রাপ্ত হয়েছি বলে ভগবদ্গীতা বেদেরই মতো পরম তত্ত্বজ্ঞান সমন্বিত জ্ঞান অপৌরুষেয়। বৈদিক জ্ঞানকে যেমন যথানুরূপভাবে গ্রহণ করতে হয়,মানুষের কল্পনাপ্রসূত ব্যাখ্যা সেখানে প্রযোজ্য হয় না, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা তেমনই জড় বুদ্ধিপ্রসূত ব্যাখ্যার কলুষমুক্ত অবস্থায় গ্রহণ করতে হবে। প্রাকৃত তার্কিকেরা ভগবানের দেওয়া ভগবদ্গীতার উপর তাদের পাণ্ডিত্য জাহির করার চেষ্টা করে,কিন্তু তা যথাযথ ভগবদ্গীতা নয়। ভগবদ্গীতার যথার্থ মর্ম উপলব্ধি করতে হয় । গুরু-পরম্পরার ধারায় এবং এখানে বর্ণনা করা হয়েছে যে, ভগবান এই জ্ঞান প্রথমে বিবস্বানকে দান করেন। বিবস্বান তা দেন মনুকে, মনু ইক্ষ্বাকুকে এভাবেই গুরু-শিষ্য পরম্পরাক্রমে এই জ্ঞান প্রবাহিত হয়ে আসছে।
★ ভক্তি বেদান্ত বুক ট্রাস্ট, ইসকন, মায়াপুর দ্বারা মুদ্রিত ‘শ্রীমদ্ভাগবত গীতা মাহাত্ম্য’ থেকে সংগৃহীত ।