এইদিন ওয়েবডেস্ক,বার্লিন,২৫ জুন : ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসের মধ্যে যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইউরোপসহ এশিয়ার অমুসলিম দেশগুলিতে কার্যত তান্ডব চালাচ্ছে হামাস সমর্থকরা । ফ্রান্স, সুইডেন,নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশে একের পর এক নাশকতার ঘটনা ঘটেছে । যেকারণে ওই সমস্ত দেশের আদি বাসিন্দাদের বৃহৎ অংশ কট্টর ডানপন্থী দলগুলির দিকে ঝুঁকছে । নিউজিল্যান্ডে ইতিমধ্যেই ক্ষমতায় এসে গেছে গির্ট ওয়াল্ডার্সের ডানপন্থী দল । ফ্রান্সেও বামপন্থীদের হঠিয়ে কট্টর ডানপন্থী দল ক্ষমতায় আসার মুখে । দেশগুলিতে নির্বাচনের মূল ইস্যুই হচ্ছে অনুপ্রবেশ রোধ । ভারতের মতই ইউরোপের আর এক দেশ জার্মানিও অনুপ্রবেশ সমস্যায় জর্জরিত । ভারতের তথাকথিত সেকুলার রাজনৈতিক দলগুলি বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে যেমন নরম মনোভাব রেখে চলে, তেমনি জার্মানিতেও বর্তমান শাসকদল ও বামপন্থী দলগুলি ভোটব্যাঙ্ক বাড়াতে অনুপ্রবেশকারীদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে ।এদিকে জার্মানির আইনশৃংখলা পরিস্থিতি কার্যত তলানিতে চলে এসেছে । নিত্যদিন নাশকতা চালাচ্ছে শরণার্থীরা ৷ এমনকি সমাবেশ করে জার্মানিতে শরিয়া শাসন লাগু করার দাবিও তুলছে তারা । এদিকে শরণার্থীদের এসব কর্মকাণ্ড দেখে বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠছে জার্মানির নাগরিকরা । বাড়ছে মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা ।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে, সেই ঘৃণা থেকে জার্মানির বোচুমের একটি মসজিদে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল সম্প্রতি । মসজিদে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল কালো রঙের স্বস্তিকা চিহ্ন । স্যাক্সনির একটি মুসলিম পরিবারের দরজায় একজন ডানপন্থী জার্মানি প্রতিবেশী গুলি চালায় । একজন মহিলাকে বার্লিনে ট্রেনের ট্র্যাকে ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি হামাসের অন্তর্গত কিনা । মুসলিম বিদ্বেষ নিরীক্ষণকারী এনজিওগুলির দাবি শুধুমাত্র ২০২৩ সালে ১৯২৬ টি মুসলিম বিদ্বেষী ঘটনা ঘটেছে ৷ গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মুসলিম বিদ্বেষ ঘটনা ১১৪ শতাংশ বেড়েছে বলে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে । যদিও জার্মান সরকার এই দাবি মেনে নেয়নি । এদিকে ডানপন্থী দলগুলি এই পরিস্থিতিতে ইসলাম বিরোধী ও শরণার্থীদের তাড়ানোর ইস্যুকে সামনে রেখে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ।
দ্য অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) কর্ণধার রিমা হানানো সোমবার বার্লিনের এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন,ইসলাম জার্মানির অন্তর্গত নয়, কিন্তু গত এক বছরে জনসংখ্যার নিরিখে ইসলাম দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে । যেকারণে মূলধারার দলগুলোকে অভিবাসনের বিষয়ে আরও কঠোর কথা বলার জন্য প্ররোচিত করেছে । মুসলিমদের জন্য রাস্তা, বাস বা মসজিদ এখন আর নিরাপদ নয় ৷ মুসলিম- বিদ্বেষী বর্ণবাদ আজকের মত জার্মানিতে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল না । এটা সমাজের মধ্য ভাগ থেকে আসছে ।’
ক্লেইম(CLAIM) নামে একটি সংস্থার অভিমত, যে ঘটনাগুলি রেকর্ড করা হয়েছে, সম্ভবত সামনে আসার ভয় এবং মনিটরিং প্রতিষ্ঠানের অভাবের কারণে মোটের একটি ভগ্নাংশ মাত্র । ইসলামিক ধর্মীয় স্থান, কবরস্থান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে আরও অন্তত ৯০ টি আক্রমণ এর বাইরে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ব্যক্তিদের উপর বেশিরভাগ আক্রমণ মৌখিক অপব্যবহার নিয়ে গঠিত এবং মহিলাদেরকে কেন্দ্র করে। চারটি খুনের চেষ্টাও হয়েছে।
জার্মানিতে মুসলিম জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে ২০১৫-১৬ সালে অভিবাসীদের আগমনের পর থেকে, যা মোট ৫.৫ মিলিয়ন বা সামগ্রিক জনসংখ্যার ৬.৬ শতাংশ । ক্লেইমের রিপোর্টটি গত বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দ্বারা নথিভুক্ত ইসলামোফোবিক অপরাধে ১৪০ শতাংশ বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়েছে । একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে দুই জার্মানির মধ্যে একজন ইসলামকে ঘৃণা করে। জার্মান সরকার এবং এনজিওগুলির মতে, ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী জঙ্গিদের আন্তঃসীমান্ত আক্রমণ এবং গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের পরে ইহুদি বিদ্বেষ বেড়ে যায় । জার্মান অর্থনীতি মন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক, একটি আবেগঘন ভিডিওতে জার্মানির কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের গোষ্ঠীকে হামাস বা ইহুদি-বিরোধী বিদ্বেষ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে “খুব দ্বিধাগ্রস্ত” বলে অভিযুক্ত করেছেন৷
জার্মান সরকার গত বছর বৈষম্য মোকাবেলার জন্য একাধিক সুপারিশ সহ বিশেষজ্ঞদের দ্বারা গঠিত একটি কমিশনের দ্বারা ইসলামের প্রতি ঘৃণার উপর তার প্রথম স্বাধীন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পারিবারিক মন্ত্রী লিসা পাউস বলেছেন যে সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিম-বিরোধী এবং ইহুদি-বিরোধী উভয় ঘটনাই নাটকীয় ভাবে বেড়ে ছিল এবং সরকার এই সমস্যা নিয়ে কাজ করা সুশীল সমাজের প্রকল্পগুলিকে অর্থায়ন করে অল্প বয়স থেকেই প্রতিরোধের কাজ করার চেষ্টা করছে । হানানো বলেছেন, তবে এখনও পর্যন্ত অপর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা বছরের পর বছর ধরে এই পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে আসছি, এটি এখনও খুব কমই গ্রহণ করেছে মানুষ । মুসলিম বিরোধী বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সত্যিকার অর্থে লড়াই করার জন্য আমাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।’।
ছবি : ‘ইসলাম যেকোনো গনতন্ত্রের কফিনে পেরেক’ প্লাকার্ড হাতে জার্মানির এএফডি পার্টির কর্মীরা ।