সূচনা গাঙ্গুলী,দমদম,২৩ জুন : ওদের পরিচয় ওরা অনাথ। এই বিশাল পৃথিবীতে ওরা বড্ড অসহায়। কীভাবে দিন চলবে, কে ওদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দেবে সেটা বোঝার মত বয়স ওদের হয়নি। যখন ভাবা হচ্ছিল খাদ্যহীন, আশ্রয়হীন অবস্থায় পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়ার জন্যই হয়তো ওদের জন্ম, ঠিক তখনই ওদের মনে আশার আলো জাগিয়ে হাজির হলেন দমদমের যুবক পেশায় ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী চন্দন বোস। মা গৌরী দেবীর আশীর্বাদকে পাথেয় করে গড়ে তুললেন ‘নালটা অরিন্দম ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’। সমাজের সহৃদয় মানুষদের সহযোগিতায় আজ সেখানে ৫৪ জন বাচ্চা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে। এবার চন্দনবাবু পাশে পেলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের হলদিয়ার ‘জন গণ মন’ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টকে। এই অসহায় বাচ্চাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় সংস্থাটি। সংস্থার পক্ষ থেকে শনিবার (২২ জুন ২০২৪) ছোট্ট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ওদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সামান্য কিছু খাদ্য সামগ্রী।
একইদিনে ওদের পাশে এসে দাঁড়ান টালিগঞ্জ চক্রের অন্তর্গত কালিকাপুর আর.এফ.পি বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তথা বাচিক শিল্পী ও বিশিষ্ট কবি তনুশ্রী নন্দী। সাত সকালেই নিজের একমাত্র কন্যা শ্রেয়াকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়ে যান চন্দন বাবুর আশ্রমে। তারপর মেয়ের জন্মদিন পালন করলেন ঐসব বাচ্চাদের সঙ্গে।
আপাত গম্ভীর শ্রেয়া নিজের গাম্ভীর্য ভুলে ঐসব শিশুদের মাঝে জন্মদিনের কেক কেটে ওদের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠে। একে একে সমস্ত শিশুর মুখে নিজের হাতে তুলে দেয় কেকের টুকরো। এর আগে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। সেখানে মনের আনন্দে সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন করে কচিকাচারা। এদের সঙ্গে ট্রাস্টের সদস্যরাও মেতে ওঠে। সবমিলিয়ে এক আনন্দঘন মুহূর্তের সৃষ্টি হয় ।
ট্রাস্টের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সুকোমল প্রধান, অনুপ কুমার পাঁজা, মতিলাল দাস, রাজেশ শাসমল, শুভঙ্কর সরকার, সুরজিৎ করন, তনুশ্রী দাস সহ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা তথা সম্পাদক অরিন্দম দাস। অন্যদিকে শ্রেয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন তার বাবা উত্তম কুমার নন্দী এবং দিদিমা স্বপ্না ভট্টাচার্য্য। চন্দন বাবু বললেন,’সবার সহযোগিতায় আমি এই সংস্থাটি চালিয়ে যাচ্ছি। আমার আশা আগামীদিনের আরও বহু সহৃদয় মানুষের সহযোগিতা আমি পাব।’ তিনি আরও বলেন, মা এর উৎসাহের সঙ্গে সঙ্গে আমার পরিবারের প্রত্যেক সদস্য সহ স্ত্রী অর্পিতার সহযোগিতা আমি পেয়েছি। ধীরে ধীরে এই বাচ্চাগুলো আমাদের পরিবারের সদস্য হয়ে উঠেছে।
লাজুক হেসে শ্রেয়া বলল,’আত্মীয় ও বন্ধুদের মাঝে জন্মদিন পালন করলে হয়তো কিছু দামি উপহার পেতাম ঠিকই কিন্তু আজ যেটা পেলাম সেটা কিন্তু অমূল্য।’অন্যদিকে ‘জন গণ মন’ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা তথা সম্পাদক অরিন্দম দাস বললেন, ’একটা মহতী লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমি এই ট্রাস্ট গড়ে তুলি। সবার সহযোগিতায় প্রত্যন্ত গ্রামের অসহায় শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আগামী দিনেও আমাদের এই প্রচেষ্টা বজায় থাকবে।’।