প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২২ জুন : ‘গ্রামই ভারতের প্রাণ।গ্রামের উন্নতি ছাড়া দেশের উন্নতি সম্ভব নয়’।এটাই ছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপলব্ধি ও গ্রাম নিয়ে ভাবনা। যার প্রকাশ আজও বহুলাংশে মেলে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মাওলিনং গ্রামে।এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে ’পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন’ গ্রাম হিসাবে ’মাওলিনং’ বিশ্বের দরবারে পরিচিতি লাভ করেছে।সেই ’মাওলিনং গ্রামই’ এখন অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে এই বঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার রায়না ২ ব্লকের ’নন্দনপুর গ্রামের’ বাসিন্দাদের।তাঁরাই এখন নন্দরপুর গ্রামের পথঘাট সংস্কার থেকে শুরু করে গ্রামকে সবুজায়নে ভরিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এক ’নির্মল গ্রাম’ হিসাবে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছেন।এমন প্রশংসনীয় কাজে পঞ্চায়েতও দিয়েছে সবুজ সংকেত।
কৃষিতে সম্বৃদ্ধ জেলা হিসাবেই পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলা।রাজ্যের শস্য গোলা হিসাবেও এই জেলার পরিচিতি।এমন এক জেলার রায়না ২ ব্লকের উচালন গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত প্রত্যন্ত গ্রাম নন্দনপুর। গ্রামের সিংহভাগ মানুষই কৃষিজীবী। তবে মেঠো পথঘাটে ঘেরা এই গ্রামের মানুষজন নিজেদের গ্রামের প্রতি খুবই আন্তরিক।নিজেদের গ্রামকে এক ’স্বনামধন্য’ গ্রাম হিসাবে দেশ ও রাজ্যের মানচিত্রে তুলে ধরার ব্যাপারে এককাট্টা নন্দনপুর গ্রামের মানুষজন। গ্রামের মানুষজনের এই স্বপ্নকে স্বার্থক করতে সাথী হয়েছেন গ্রামেরই গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ এবং গ্রামের ’মাতৃগেহ‘ প্রতিষ্ঠান ।
রামকৃষ্ণদেব,সারদা মা এবং স্বামী বিবেকানন্দের মত ও পথের পূজারী ’মাতৃগেহ’প্রতিষ্টানটি। যার প্রতিষ্ঠাতা নন্দনপুর গ্রামেরই গৃহবধূ ইন্দ্রানী ভট্টাচার্য্য চৌধুরী। তিনি ছিলেন ডাক্তার। কয়েক বছর হল তিনি প্রয়াত হয়েছেন।ইন্দ্রানীদেবীর স্বামী উদয় চৌধুরীও প্রখ্যাত চিকিৎসক।তিনি জানান,গ্রামে যাতায়াতের রাস্তাটির অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।ওই রাস্তা দিয়ে মানুষজনের হাঁটাচলায় সমস্যা হচ্ছিল।তবে এই পথই তাঁদেরকে এবং গ্রামের সকল মানুষকে এক নতুন পথের দিশা দেখায়।নন্দনপুর গ্রামকে প্রকৃত অর্থেই দৃষ্টি নন্দন গ্রাম হিসাবে গড়ে তোলার ব্যাপারে সবাই ঐক্যমতে পৌঁছান।
নন্দনপুর গ্রামকে দৃষ্টিনন্দন গ্রাম হিসাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মেঘালয়ের মাওলিনং গ্রামকেই ’আইকন’ হিসাবে ধরে নেন গ্রামবাসীরা।সেই মত প্রথম যে কাজটিতে গুরুত্ব আরোপ করা হয় সেটি হল গ্রামের বেহাল পথের সংস্কার।সেই কাজই এখন পুরোদমে চলছে।এই কাজের জন্যে গ্রামের সাধারণ বাসিন্দাদের পাশাপাশি গণ্যমান্য বক্তিরা সাধ্যমত অর্থ সাহায্য করেছেন।সাথে সাথে ইন্দ্রানীদেবীর রেখে যাওয়া অর্থও কাজে লাগানো হচ্ছে । ইট ও মোরাম দিয়ে রাস্তার সংস্কার কাজে গ্রামের মানুষজন হাত লাগিয়েছেন বলে ডাক্তার উদয় চৌধুরী জানিয়েছেন।
প্রশংশনীয় এই কাজের অন্যতম উদ্যোক্তা স্বপন সেন জানান,নন্দনপুর গ্রামের সাধুর ঢাল থেকে ডাক্তার ঢাল পর্যন্ত রাস্তাটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কারর কাজ হচ্ছে। এছাড়াও অন্য যে রাস্তাগুলি অবহেলিত রয়ে গিয়েছে সেই রাস্তা গুলিও নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে।উচালন গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ রাস্তা সংস্কারের অনুমতি তাঁদের দিয়েছে।এমনকি রাস্তার সংস্কার খরচের টাকা পরবর্তী সময়ে দিয়ে দেবেন বলেও পঞায়েত কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছেন ।
সে না হয় হল। কিন্তু নন্দনপুর গ্রামকে দৃষ্টি নন্দন গ্রাম হিসাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মেঘালয় রাজ্যের মাওলিনং গ্রামকেই কেন আইকন ধরা হল ? এই প্রশ্নের উত্তরে চিকিৎসক উদয় চৌধুরী বলেন, মেঘালয় রাজ্যের মাওলিনং গ্রামটি এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে ’পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন’ গ্রাম হিসাবে বিশ্বের দরবারে পরিচিতি পেয়েছে মাওলিনং গ্রামে সাধারণ মানুষই নিজেদের গ্রামকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রেখেছে। এই কাজে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে সেখানকার সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসন ও গ্রাম পঞ্চায়েত।উদয় বাবু বলেন,“এই কারণেই মাওলিনং গ্রামটি আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা।
এই পথে হেঁটে আমরা আমাদের নন্দনপুর গ্রামকে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নির্মল ও সম্বৃদ্ধ গ্রাম হিসাবে গড়ে তোলার ব্যাপারে উদোগী হয়েছি।গ্রামে সবুজায়ন ঘটাতে প্রচুর বৃক্ষরোপন করা হবে।উদয় বাবুর প্রত্যাশা এই উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাকে আঁকড়ে থেকে একদিন নন্দনপুর গ্রামও ভারতের সবচাইতে পরিচ্ছন্ন গ্রামের শিরোপা পাওয়াল লক্ষে পৌঁছে যাবে ।
এই প্রসঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম বলেন,নন্দনপুর গ্রামের বাসিন্দাদের ভাবনা ও কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করতেই হয় । নিজের গ্রামকে দেশের শেরা হিসাবে গড়ে তোলার এমন ভাবনা কজনেরই বা থাকে । গ্রামের মানুষজন যদি এইভাবে উদ্যোগী হন তবেই স্বার্থক হবে ’নির্মল বাংলা’ গড়ার ভাবনা। সত্য এ এক অনবদ্য উদ্যোগ ।।