এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),২১ জুন : পুরুষদের মদের নেশার কারনে গ্রাম বাংলার খেটে খাওয়া পরিবারগুলির মহিলারা কি অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে কাটাচ্ছেন তার প্রমাণ পাওয়া গেল আজ শুক্রবার পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারে । সকালের দিকে দুই পুত্রবধূকে সঙ্গে নিয়ে আজ থানায় এসেছিলেন ভাতার থানার বামুনাড়া গ্রামের বাসিন্দা পেশায় জনমজুর বছর পঞ্চান্নের প্রৌঢ়া সীমা মাঝি । দুই পুত্রবধূর মধ্যে একজনের মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা । মদ্যপ স্বামী পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে তার । সীমাদেবী বলেন,’আমার স্বামী অরুণ মাঝি,বড় ছেলে রাণা এবং ছোট ছেলে ছোট্টু মদের নেশায় আসক্ত । জনমজুরির কাজ করে তারা যেটুকু আয় করে তার সব নেশা করতে গিয়ে উড়িয়ে দেয় । আমার ও দুই বউমার উপার্জনেই সংসার চলে । এছাড়া নেশা করার পর স্বামী ও দুই ছেলে বাড়ি ফিরে রোজ অশান্তি করে । আমাদের মারধর করে । নাবালক নাতিনাতনিদের পর্যন্ত রেহাই দেয় না । সেই কারনে আজ পুলিশের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়েছি ।’ ভাতার থানার জনৈক এক পুলিশ আধিকারিক তাদের সমস্যার কথা শুনতে এলে সীমাদেবী করুন গলায় তাদের বলেন, ‘স্বামী ও ছেলেদের মদের নেশা ছাড়ান স্যার,অত্যাচার আর সহ্য হয়না ।’
জানা গেছে,ভাতার থানার বামুনাড়া গ্রামের বাসিন্দা সীমা মাঝির বাড়িতে রয়েছেন স্বামী, দুই ছেলে,দুই পুত্রবধূ মণিমালা ও রীতা এবং নাবালক দুই নাতি ও দুই নাতনি । ওই হতদরিদ্র পরিবারটির মূল পেশা জনমজুরি । সীমাদেবীর স্বামী ও দুই ছেলে বেশ কিছু দিন ধরে মদের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে । নেশার কারনে তারা বাড়ির খরচ খরচা দেওয়া বন্ধ করে দিলে বড় পুত্রবধূ মণিমালা,ছোট পুত্রবধূ রীতাদেবীকে সাথে নিয়ে জনমজুরির কাজ করতে শুরু করেন সীমাদেবী ।
রীতাদেবী বলেন,’আমরা ৩ জন মিলে জনমজুরি করে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া থেকে পরিবারের খরচ জোগাচ্ছি । আর আমার শ্বশুর, ভাসুর ও স্বামীরা মদের নেশা করে টাকাপয়সা উড়িয়ে দিচ্ছে। তারউপর বাড়িতে অত্যাচার করছে। অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়ে গেছে ওরা ।’
জানা গেছে,বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে সীমাদেবীর স্বামী ও দুই ছেলে মদ্যপবস্থায় বাড়ি ফেরে । তাদের খেতে দেওয়ার পর ছোট ছেলে ছোট্টু প্রথমে খাবার নিয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে । তারই মাঝে সে স্ত্রীকে মারধর শুরু করস । সেই সময় সীমাদেবী ও মণিমালাদেবী ছাড়াতে গেলে বড় ছেলে রাণা,ছোট ছেলে ছোট্টু ও স্বামী অরুণ মাঝি মিলে তিন মহিলাকে বেদম পেটাতে থাকে মাকে বাঁচাতে গেলে জখম হয় রীতাদেবীর ১২ বছরের মেয়েও । মারধরে রীতাদেবীর মাথা ফেটে যায়, তাঁর মেয়ের চোখের নিচে আঘাত লাগে, সীমাদেবীরও মাথায় আঘাত লাগে । জখম হন মণিমালাদেবীও ।
জানা গেছে,বৃহস্পতিবারেই সীমাদেবীরা থানায় এসে বিষয়টি জানিয়ে যান । কিন্তু থানা থেকে বাড়ি ফেরার পর পরিবারের পুরুষ সদস্যদের ফের অত্যাচার শুরু হলে আজ সকালেই ফের দুই পুত্রবধূ ও নাতি- নাতনীদের সঙ্গে নিয়ে ফের পুলিশের দ্বারস্থ হন ওই প্রৌঢ়া ।।