এইদিন ওয়েবডেস্ক,পাটনা,২০ জুন : এনইইটি-ইউজি পেপার ফাঁস কাণ্ড নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে লাগাতার আক্রমণ করে যাচ্ছে বিরোধী দলগুলি । সংসদের প্রথম অধিবেশনেও কেন্দ্র সরকারকে বেকায়দা ফেলতে ইতিমধ্যেই কোমড় বাঁধছে ইন্ডি জোট শরিকরা । এদিকে তার আগেই এনইইটি-ইউজি পেপার ফাঁস কাণ্ড নিয়ে দেশ জুড়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী বিজয় সিনহা । আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে সিনহা দাবি করেছেন, পেপার ফাঁস কেলেঙ্কারির মূল পরিকল্পনাকারী সিকান্দার যাদভেন্দু বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের পিএস প্রীতম কুমারের ঘনিষ্ঠ । তেজস্বী যাদবের পিএস প্রীতম কুমার সিকান্দারের নামে রুম বুক করার জন্য বারবার কল করেছিলেন । তিনিই মন্ত্রীর নামে বুকিং করেছিলেন। তেজস্বী যাদব এর আগে একজন মন্ত্রী ছিলেন, তাই অনুরাগ নামের প্রার্থীর জন্য যে ঘরটি বুক করা হয়েছিল, সেটির বুকিংয়ের পাশে বন্ধনীতে (মন্ত্রী জি) লেখা আছে ।
উপ-মুখ্যমন্ত্রী বিজয় কুমার সিনহা গেস্ট হাউস বুক করার জন্য তেজস্বী যাদবের পিএস প্রীতম কুমার এবং সড়ক নির্মাণ বিভাগের কর্মকর্তা প্রদীপ কুমারের মধ্যে কথোপকথনের রেকর্ডও প্রাকাশ্যে এনেছেন । তিনি সাংবাদিকদের বলেন,পয়লা মে রাত ৯.০৭ মিনিট নাগাদ তেজস্বী যাদবের ব্যক্তিগত সচিব প্রীতম কুমারের মোবাইল নম্বর ৭৪৮৮০৬১৮১৩ থেকে সড়ক নির্মাণ বিভাগে কর্মরত প্রদীপ কুমারের মোবাইল নম্বর ৯৪৩০৪৬৯৯২৪-এ সিকান্দার যাদবেন্দুর জন্য এনএইচএআই গেস্ট হাউসে বুকিংয়ের জন্য একটি কল এসেছিল। প্রদীপ কুমার সে দিন বিষয়টি নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। তারপর ৪ মে, সকাল ৮.৪৯ নাগাদ প্রীতম কুমারের মোবাইল নম্বর ৭৪৮৮০৬১৮১৩ থেকে প্রদীপ কুমারের মোবাইল নম্বরে সিকান্দার কুমার যাদভেন্দুর জন্য রুম বুক করার জন্য একটি কল করা হয়েছিল। এবার রাস্তা নির্মাণ বিভাগে কর্মরত প্রদীপ কুমার বুকিংয়ের জন্য সিকান্দার কুমারের নামে এন এইচএআই-এর গেস্ট হাউসে কর্মরত জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি বার্তা পাঠান। প্রীতম কুমার আগে এখানে পিএস ছিলেন, যখন তেজস্বী যাদব দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন, সেই কারণেই তিনি মন্ত্রী শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। দুই কর্মকর্তাই লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। উপ-মুখ্যমন্ত্রী বিজয় কুমার সিনহা বলেন, কক্ষ বরাদ্দের জন্য কোনো চিঠি পাইনি। ফোনে এই বুকিং করা হয়েছিল, যার তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ইতিমধ্যে, এনইইটি পেপার ফাঁস কেলেঙ্কারির অভিযুক্তরা স্বীকার করেছে যে তারা প্রতিটি প্রার্থীর সাথে ৩০-৪০ লক্ষ টাকার চুক্তি করেছিল । পেপার ফাঁস কাণ্ডে গ্রেফতার অনুরাগ যাদব তার অপরাধ কবুল করেছেন। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন গ্রেপ্তার প্রার্থীও তাদের অপরাধ কবুল করেছেন। অনুরাগ যাদব জানিয়েছেন যে তাঁর কাকা সিকান্দার যাদভেন্দু তাঁকে ডেকে বলেছিলেন যে ‘সম্পূর্ণ সেটিং করা হয়েছে।’
নিট কেলেঙ্কারিতে জড়িত সিকান্দারের সহযোগী অমিত আনন্দও তার অপরাধ স্বীকার করেছে। তিনি তার স্বীকারোক্তিতে বলেছেন যে নিট পরীক্ষার একদিন আগে পেপার ফাঁস হয়েছিল। পরীক্ষার এক দিন আগে, পরীক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নপত্র আটকে দেওয়া হয়েছিল এবং প্রশ্নপত্রের বিনিময়ে প্রার্থীদের কাছ থেকে ৩০-৩২ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছিল। এর আগেও তিনি কাগজপত্র ফাঁস করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। পেপার ফাঁসের মাস্টারমাইন্ড অমিত মুঙ্গের জেলার বাসিন্দা। তবে তিনি বর্তমানে পাটনার এজি কলোনিতে একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকতেন।
অমিত তার বিবৃতিতে বলেছেন,দানাপুর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন অফিসে একজন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার সিকান্দারের সাথে আমার বন্ধুত্ব ছিল। আমি ব্যক্তিগত কাজে তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। নীতীশ কুমারও আমার সঙ্গে ছিলেন। আলাপচারিতায় আমি সিকান্দারকে বলেছিলাম, যে কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আমি প্রার্থীদের পাস করিয়ে দিই। সিকান্দার আমাকে এই বিষয়ে বলেছিলেন যে আমার ৪-৫ জন প্রার্থী আছে যারা নিট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, দয়া করে তাদের পাস করিয়ে দিন । ছেলেমেয়েদের পাস করার বিনিময়ে বলেছিলাম ৩০-৩২ লাখ টাকা লাগবে বলে তিনি জানান । এতে সিকান্দার রাজি হন এবং বলেন, তিনি আমাদের ৪ জন প্রার্থীর সুযোগ করে দেবেন। এদিকে, নিট পরীক্ষার তারিখ এসে গেছে। সিকান্দার জিজ্ঞেস করল কখন ছেলেদের নিয়ে আসবে। আমি বললাম ৫ মে পরীক্ষা। ৪ঠা মে রাতে প্রার্থীদের নিয়ে আসুন। ৪ মে রাতে,নিট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায় এবং সমস্ত পরীক্ষার্থীকে উত্তর মুখস্ত করতে শেখানো হয় ।
পুলিশের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে এই কাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড অমিত আনন্দ বলেছেন,সিকান্দারকে পুলিশ ধরেছিল এবং তারপরে তার তথ্যে আমরাও ধরা পড়ি । পুলিশ আমাদের ভাড়া করা ফ্ল্যাট থেকে নিটসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রবেশপত্র, নিট-এর প্রশ্নপত্র এবং উত্তরপত্রের পুড়ে যাওয়া অংশ বিশেষ উদ্ধার করেছে। পুলিশ তা বাজেয়াপ্ত করেছে। এর আগেও আমার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছি । আমি আমার অপরাধ স্বীকার করছি।
উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত এই মামলায় ৪ প্রার্থীসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই মামলায় সিকান্দার জড়িত থাকার পর বিহারে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কারন সিকান্দার তেজস্বী যাদবের ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ করেছেন বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী বিজয় কুমার সিনহা। তেজস্বী যাদবের পিএসও এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ফলে এনইইটি-ইউজি পেপার ফাঁস কাণ্ডে এখন কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে ইন্ডি জোট ।।