এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৯ জুন : ৩৪ বছরের বামফ্রন্টের রাজত্বকালে পশ্চিমবঙ্গের বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে । সৃষ্টি হয়েছিল প্রচুর বেকার । সেই সময় রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে চিকিৎসা,বিদ্যুৎ, পানীয় জলসহ বিভিন্ন মৌলিক সুবিধাগুলি থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত ছিল বলে অভিযোগ ওঠে । রাজ্যের বামফ্রন্টের জমানাতেই ঘটে আমলাশোলের মত মর্মান্তিক ঘটনা । ঝাড়গ্রামের ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন, শবর-মুন্ডা অধ্যুষিত এই অখ্যাত আদিবাসী গ্রামটিতে ২০০৪ সালে ৫ জন হতভাগ্য মানুষ মারা গিয়েছিলে কার্যত না খেতে পেয়ে। ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়ের কথায়, মানুষকে গরীব রেখে চাহিদা কমিয়ে দিলে সে চাহিদা মেটানোর সহজ পন্থা উপলব্ধি করেছিল সিপিএম । আর বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেস সরকার যে সিপিএমকে অন্ধের মতো অনুসরণ করে সেটা সবার জানা । অর্থাৎ তিনি রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের বিভিন্ন নীতি নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে কার্যত তুলোধুনো করেছেন । তিনি চাহিদার ক্রমপর্যায় তত্ত্বের প্রবক্তা মার্কিন মনোবিজ্ঞানী আব্রাহাম মাসলোর (Abraham Maslow) পিরামিডের প্রসঙ্গও উত্থাপন করেছেন।
আজ বুধবার সকালে তথাগত রায় টুইট করেছেন, ‘মানুষকে যত গরীব করে রাখা যাবে তার চাহিদা তত কমবে, সরকারের পক্ষে সে চাহিদা মেটানো তত সহজ হবে। এই সহজ সত্যটা বুঝেছিল সিপিএম, যেজন্য তারা কারখানায় কারখানায় শ্রমিক অশান্তি তৈরী করে ষাট হাজার কারখানা তুলে দিয়েছিল। এর একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে, মাসলোর পিরামিড (Maslow’s pyramid) , সেটা বোঝাবার পরিসর এখানে নেই। তৃণমূল যে অন্ধের মতো সিপিএমকে অনুসরণ করে সেটা সবাই জানে। সিপিএম মানুষকে গরীব বানিয়ে কাজের অর্ধেকটা করে রেখেছিল, এখন তৃণমূল তাদের ভাতা ভিক্ষা দিয়ে ভোট কিনছে, বাকি অর্ধেকটা করছে। আর পশ্চিমবঙ্গের বাকি নেতারা ভাবছে, পশ্চিমবঙ্গ শাসন করার এই যদি উপায় হয় তাহলে চল, আমরাও তাই করি !’
তথাগত রায়ের এই টুইটের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সামনে আসছে৷ অসীম দে হিন্দুস্থানী লিখেছেন, ‘মানুষকে যত গরিব নিঃস্ব করে রাখা যাবে, ততো তারা কম খাবে, কম খেলে শস্য ভাণ্ডারে টান পড়বে না। যে হারে জন্ম দিচ্ছে,তাতে আগামী পাঁচ সাত বছরের মধ্যে খাদ্যের যোগান দেওয়া যাবে না, বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। মেয়েদের কাজে ক্যারিয়ার গড়তে ব্যাস্ত করে দিলে বিয়ে দেরিতে করবে,বাচ্চা কম নেবে।’ তার এই প্রতিক্রিয়ার উত্তরে তথাগত রায় লিখেছেন, ‘শুধু হিন্দু মেয়েরা। মুসলমানরা সীমাহীন প্রজনন করে যাবে, করেই যাবে।’ অসীম দের কথায়,’মুসলমানরা এই দেশের ক্ষমতা অর্জন করে ওদের ধর্মের আইন চালু করবে বলেই তাদের এতো জন্ম দেবার হিড়িক উঠেছে।কিন্তু এটা বিরোধীদের পছন্দ নয়, ব্যতিক্রমী ছিলেন সঞ্জয় গান্ধী, শুরু করেছিলেন, কিন্তু তাঁকে আকাশ থেকে ছুঁড়ে নিচে ফেলে মেরে দেয়া হলো।’
রয় কেকে-এর প্রশ্ন, ‘ষাট হাজার কারখানা কবে ছিল? সিপিএমকে আমি আপনার চেয়েও বেশী ঘৃণা করি, তাই বলে যেটা বাস্তব নয় সেটা কি বলা যায় ? ৬০০০০ যদি হয় সেটা সারা বিশ্ব জুড়ে হবে।’ উত্তরে তথাগত রায় লেখেন,’কারখানা মানে শুধু বার্ন বা ডানলপের মত কারখানা নয়। একটা গেরাজের মধ্যে একটা লেদ মেশিন নিয়ে কাজ করলেও কারখানা হয়।’
সুভাষ স্পিকিং এর প্রতিক্রিয়া হল,’সব ধরলে ৬০ হাজারের বেশি হবে। আমার একটা প্লাস্টিকের জিনিস পত্র তৈরির মেশিন ছিল। ৮ জন ওয়ার্কার ছিল। তাই ইউনিয়ন বাজি করে বন্ধ করে দিল ৯০-এর দশকে। আমি নিজে সাক্ষী মিষ্টির দোকানের কর্মচারীরা ধর্মঘট করে দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ।’
প্রসঙ্গত,মাসলোর চাহিদার শ্রেণিবিন্যাস হল মনোবিজ্ঞানের একটি ধারণা যা মার্কিন মনোবিজ্ঞানী আব্রাহাম মাসলো তার ২৯৪৩ সালের ‘সাইকোলজিক্যাল রিভিউ জার্নালে’-এ ‘থিওরি অফ হিউম্যান মোটিভেশন’-এ প্রস্তাব করেছিলেন। মাসলো পরবর্তীকালে মানুষের সহজাত কৌতূহল সম্পর্কে তার পর্যবেক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ধারণাটি প্রসারিত করেন । মাসলোর উপলব্ধি হল,ব্যক্তির চাহিদা ও তা পূরণ – যা ব্যাক্তির প্রেষণার উপর বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। ব্যক্তির উপর দুটি শক্তি ক্রিয়াশীল।একটি ব্যক্তির বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং অপরটি বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। প্রথমটি ব্যক্তির মধ্যে আত্মশক্তি, আত্মপ্রত্যয়, নিজস্বতা,ক্ষমতা ইত্যাদিকে শক্তিশালী করে এবং বিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করে। দ্বিতীয়টি ব্যক্তির বৃদ্ধিতে বাধা দেয়, তাকে আতঙ্কগ্রস্থ করে তোলে, সুযোগ গ্রহণ করতে ভীত করে তোলে এবং নিজস্বতাকে বাধা দেয়। মাসলো তার তত্ত্বে ব্যাক্তি চাহিদাকে একটি পিরামিডের আকারে প্রকাশ করেছেন। যার পাঁচটি স্তর রয়েছে। এই পিরামিডের সবচেয়ে নিচের স্তরে রয়েছে অস্তিত্ব রক্ষার চাহিদা বা শারীরবৃত্তীয় চাহিদা। যার মধ্যে রয়েছে খাদ্য,জল, আশ্রয়, নিদ্রা ইত্যাদি। দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে নিরাপত্তা চাহিদা, যা দৈহিক বা মানসিক উভয় প্রকার হতে পারে। সুরক্ষা, ভয়থেকে মুক্তি, অস্তিত্ব ইত্যাদি নিরাপত্তা চাহিদার অন্তর্গত।মাসলোর চাহিদার ক্রমপর্যায় তত্ত্ব-এর তৃতীয় স্তরে রয়েছে ভালোবাসা ও একাত্মতার চাহিদা । চতুর্থ স্তরে রয়েছে আত্ম শ্রদ্ধা বা আত্মসম্মানের চাহিদা এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে আত্মপ্রতিষ্ঠা বা আত্মপ্রকাশের চাহিদা। এই সমস্ত চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ধরনের প্রেষণার সৃষ্টি হয়। মাসলোর মতে, প্রত্যেক মানুষ চায় তার মধ্যে যে সমস্ত ক্ষমতা ও সুপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে তার বাস্তবায়ন।।