এইদিন ওয়েবডেস্ক,মেঘালয়,১৯ জুন : মেঘালয় হল ভারতের একটি রাজ্য, ২০১১ সালের জনগননা অনুযায়ী যার জনসংখ্যা ২৯,৬৬,৮৯৯ । মেঘালয়ে ৭ টি জেলা,৩৯ টি তালুক,৬,৮৩৯ টি গ্রাম এবং ২২ টি শহর রয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে মেঘালয়ে খ্রিস্টান ৭৪.৫৯ শতাংশ(২২,১৩,০২৭),হিন্দু ১১.৫৩ শতাংশ (৩,৪২,০৭৮), অন্যান্য ধর্ম ৮.৭১ শতাংশ । কাশ্মীরের মতই স্পেসাল স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে মেঘালয়কে । যার সমস্ত সুবিধা খ্রিস্টানরা পেয়ে থাকে । সংখ্যালঘু হয়েও বঞ্চিত হিন্দু সহ অনান্য সম্প্রদায় । মেঘালয়ের হিন্দুদের দুর্দশার ও খ্রিস্টান সন্ত্রাসীদের বাড়বাড়ন্তের চিত্র তুলে ধরেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় ৷ সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর খ্রিস্টানদের নিপিড়ন বন্ধে অবিলম্বে আইন সংস্কারের দাবিও তুলেছেন তিনি ।
একটি ভিডিও বার্তায় অশ্বিনী উপাধ্যায় বলেন,’আজ আমি মেঘালয়ের কঠিন পরিস্থিতি বর্ণনা করতে যাচ্ছি । আজ মেঘালয় সেই রকম পরিস্থিতি হয়েছে যেটা এক সময়ে হয়েছিল কাশ্মীরে । মেঘালয়ে সংবিধান ব্যর্থ হয়েছে । বিধানসভা নিজের কাজ করছে না । বিচার ব্যবস্থা নিজের কাজ করছে না । আর এটা খুব দুঃখজনক যে সংবাদ মাধ্যমও নিজের কাজ ঠিকমতো করছে না । মেঘালয়ের পুরো সিস্টেমকে হাইজ্যাক করে নিয়েছে খ্রিস্টানরা । চার্চ সমস্ত মানুষের জীবন হাইজ্যাক করে নিয়েছে । মিশনারী,পাস্তর, পাদরীরা মেঘালয়কে পুরোপুরি হাইজ্যাক করে নিয়েছে । যে সমস্ত আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আছে প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তোলাবাজি করছে । আপার গ্রাউন্ড গ্রুপ যেমন এনজিও বা ছাত্র পরিষদ বা আরো কিছু সংগঠন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তোলাবাজি করছে । ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল তোলাবাজির আড্ডা হয়ে গেছে, ভ্রষ্টাচারের আড্ডা হয়ে গেছে । পুলিশ ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দিচ্ছে না । আন্ডারগ্রাউন্ড বা ভ্রষ্টাচারী লোকেদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ। প্রশাসন নিজের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে না । ভ্রষ্টচার চরমে পৌঁছে গেলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না । মেঘালয় হিন্দু শেষ হয়ে যাওয়ার পথে।’
তিনি বলেন,’আমি তিন দিনের জন্য মেঘালয় গিয়েছিলাম । আমাদের ৫১ শক্তি পীঠের মধ্যে অন্যতম হলো জয়ন্তেশ্বরী । আমার খুব দুঃখ হয়েছিল, যখন আমি জয়ন্তেশ্বরি মন্দির গেলাম, সেখানে কেউ ছিলনা, মন্দিরের দরজা বন্ধ ছিল । একবার ভেবে দেখুন, আমাদের ৫১ শক্তি পীঠের মধ্যে অন্যতম জয়ন্তেশ্বরী যেখানে মাতাজির জংঘা পড়েছিল । আর সেই মন্দিরের দরজা বন্ধ । যখন আমি আর আমার পরিবার সেখানে গেলাম অনেক অনুরোধ করে মন্দিরের দরজা খোলালাম । সেই সময় আমি এবং আমার পরিবার মিলে মাত্র চার জন লোক ছিল সেখানে । পূজারীও ছিল না । একজন মহিলা ছিলেন আমরা তাকে অনুরোধ করলাম তিনি দরজা খুললে আমরা পূজাঅর্চনা করলাম ।’
তিনি বলেন,’মেঘালয় হিন্দুদের এমন পরিস্থিতি যে নিজেদের ইচ্ছামত উৎসব উদযাপন করতে পারেন না । ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ, বিবাহ অনুষ্ঠান,হোলি, দীপাবলি ঠিকমতো পালন করতে পারেন না। মেঘালয়ের হিন্দুরা আতঙ্কের পরিবেশের মধ্যে আছেন । মেঘালয়ের সংবিধান পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে কারণ যে ২৭ শতাংশ ওবিসি সংরক্ষণ আছে সেটা মেঘালয়ে লাগু হয়নি । ১৫ শতাংশ সিডিউল কাস্ট রিজার্ভেশন পাচ্ছেন না । সংরক্ষণের পুরোপুরি কোঠা শিডিউল ট্রাইবদের দেওয়া হচ্ছে যাদের বাস্তবিক কোন অস্তিত্বই নেই । মার্সিডিজ গাড়িতে চড়ছে, বড় বড় দোকানের মালিক, কোটি কোটি টাকার মালিক, তারাই সিডিউল ট্রাইব সেজে সংরক্ষণের সমস্ত সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে ।’ অশ্বিনী উপাধ্যায় বলেন,’বিধায়িকা,কার্য পালিকা, ন্যায়পালিকা এবং খবরপালিকা কেউই মেঘালয় নিজেদের কাজ করছে না । দুঃখের বিষয় হলো এ নিয়ে কোন সার্বজনীকভাবে আলোচনা হয় না । দিল্লির মেইনস্ট্রিম মিডিয়া, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া, বড় বড় চ্যানেলগুলো মেঘালয়ের বিষয়ে কোনোদিন আলোচনার কথা ভাবেই না ।’
এই পরিস্থিতি থেকে মেঘালয়কে মুক্ত করতে তার পরামর্শ,’সবচেয়ে প্রথম শিডিউল ট্রাইবকে চিহ্নিত করতে হবে । সিডিউল ট্রাইবের নামে অসংখ্য স্কীম রয়েছে । সিডিউল ট্রাইবের নামে আশি শতাংশ সংরক্ষণ দেওতা হচ্ছে । কিন্তু কারা সিডিউল ট্রাইব হবে সেটা চিহ্নিত করা হয়নি । মার্সিডিজে চলা, ১০-২০ টা গাড়ির মালিক, শত শত বিঘা জমির মালিক, ৫০০ কোটি টাকার মালিকদের কি সিডিউল ট্রাইব বলবেন ? সিডিউল ট্রাইব তাদের বলা হয় যাদের ভাষা সংস্কৃতি, জীবনযাপনের পদ্ধতি প্রভৃতি সবকিছু আলাদা । ইংরেজিতে কথা বলা, কনভেন্টে পড়াশোনা করা লোকজন মেঘালয় শিডিউল ট্রাইব হয়ে গেছে । তাই সবচেয়ে প্রথমে শিডিউল ট্রাইবকে চিহ্নিত করতে হবে । আমি মনে করি যারা ধর্মান্তরিত হয়ে গেছে, বিদেশি ধর্মকে স্বীকার করে নিয়েছে, তারা তো শিডিউল ট্রাইব হতেই পারে না । সিডিউল কাস্ট, শিডিউল ট্রাইব কেবল সনাতন ধর্মেই আছে । হিন্দুরাই সিডিউল কাস্ট, শিডিউল ট্রাইব, ওবিসি ও দলিত তালিকাভুক্ত হবে । যারা খ্রিস্টান বা ইসলাম প্রভৃতি বিদেশী ধর্ম স্বীকার করে নিয়েছে তারা কখনোই শিডিউল ট্রাইব হতে পারে না । তাই মেঘালয়ের ধর্মান্তরিতদের শিডিউল ট্রাইব স্বীকৃতি কেড়ে নিতে হবে ।
দ্বিতীয়ত সংখ্যালঘুদেরকে চিহ্নিত করতে হবে । মেঘালয়ে যাদের সংখ্যা ৯০ শতাংশ সেই সম্প্রদায় নিজেদেরকে সংখ্যালঘু বলে । এটা চলতে পারেনা । মাইনোরিটি তাদের বলা হয় যাদের জনসংখ্যা শতাংশের বিচারে এক,দুই বা একের নিচে । নব্বই শতাংশ সম্প্রদায় তারা সংখ্যালঘু কি করে হয় ? যারা ওখানকার সংস্কৃতি মানে, ওখানকার উৎসব উদযাপন করে, তারাই একমাত্র সংখ্যালঘু । যারা বিদেশি সংস্কৃতি চিন্তাভাবনাকে স্বীকার করে নিয়েছে তারা শিডিউল ট্রাইব কি করে হয়? তাই সর্ব প্রথমে সিডিউল ট্রাইবকে চিহ্নিত করতে হবে, সংখ্যালঘুদের চিহ্নিত করতে হবে । মেঘালয়ের ৯০% খ্রিস্টানদের সংখ্যালঘুর তকমা কেড়ে নেয়া দরকার।’
তৃতীয়তঃ মেঘালয়ের ট্যাক্সে যে ছাড় দেওয়া হয় সেটা বন্ধ করতে হবে । দেশের বাকি রাজ্যে পাঁচ থেকে দশ লাখ টাকা রোজগার করলে ট্যাক্স দিচ্ছে অথচ মেঘালয় ১০ কোটি টাকার রোজগার করলেও ট্যাক্স দিতে হচ্ছে না । এটা কেন হবে? মেঘালয় ইউনিফর্ম ট্যাক্স কোড হওয়া দরকার । দেশের সব রাজ্যে এক ট্যাক্স নীতি লাগু করা দরকার। কোন ছাড় নয় ।’
তিনি বলেন,’মেঘালয়ে ইউনিফর্ম ব্যাংকিং কোড লাগু করা দরকার। কারণ ওখানে যে চার্চ আছে, মিশনারীজ আছে, পাদ্রি আছে বিদেশ থেকে তাদের কাছে প্রচুর টাকা আসছে । শুধু হাওয়ালার মাধ্যমে নয়, ব্যাংকের মাধ্যমেও অর্থায়ন হচ্ছে । নগদ বা কালো টাকায় ফান্ডিং হচ্ছে । বিদেশি ব্যাংকগুলো আরটিজিএস, এনএফটিজিএস-এর মাধ্যমে ফান্ডিং করছে । সরকারও তাদের ধরতে পারছিনা । এই কারণে ইউনিফর্ম ব্যাংকিং কোড লাগু করা দরকার । এই কারণে ইউনিফর্ম ট্যাক্স কোড দরকার ।’
অশ্বিনী উপাধ্যায় বলেন,’ইউনিফর্ম অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কোড দরকার । মেঘালয় ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের দরকার নেই। ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল করা হয়েছিল কারণ বাস্তবিক যারা সিডিউল ট্রাইব গাড়ো,জয়ন্তীয়া,খাসিদের নিরাপত্তার জন্য । তারা পুরোপুরি ধর্মান্তরিত হয়ে গেছে, তাদের সংস্কার পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তাহলে ডিসট্রিক্ট কাউন্সিল কেন? আর ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল অস্থায়ীভাবে লাগু করা হয়েছিল, স্থায়ীভাবে নয় । যেমন ৩৭০ ধারা, ৩৫ এ ধারা বিলুপ্ত করা হয়েছে ঠিক সেই ভাবেই ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলকে বিলুপ্ত করে দেয়া হোক ।’
তিনি আরও বলেন,’মেঘালয় যে কাস্টমারি প্র্যাকটিস চলছে তাকে বিলুপ্ত করা দরকার । ৫০০ বছর আগের আইন বাতিল করে ইউনিফর্ম জুডিশিয়াল কোড লাগু করা দরকার মেঘালয় । সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মেঘালয় নির্বাচন ব্যবস্থা বিভিন্ন রকম । মেঘালয়ের নন ট্রাইবালরা ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের ভোটে ভোট দিতে পারে না । অথচ ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল তাদের দিয়ে সব কাজ করিয়ে নেয় । ওয়ান নেশন ওয়ান লেজিসলেটিভ কোড,ওয়ান নেশন ওয়ান বিজনেস কোড,ওয়ান নেশন ওয়ান সিভিল কোড লাগু করা দরকার৷ মেঘালয়কে যে স্পেশাল স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে তারজন্য সন্ত্রাসবাদ বাড়ছে । পাশাপাশি অ্যান্টি কনভার্সন আইন করা বিশেষ ভাবে প্রয়োজন ৷ যদিও মেঘালয়ে ৯০ শতাংশ খ্রিস্টান হয়ে গেছে । তবুও যে ১০ শতাংশ হিন্দু রয়েছে তাদের বাঁচাতে অ্যান্টি কনভার্সন আইন খুব জরুরি । আর এটা তখনই সম্ভব যখন ওয়ান নেশন ওয়ান পেনাল কোড লাগু হবে ।’
পরিশেষে তিনি বলেন,’মেঘালয়ে অনুপ্রবেশ খুব দ্রুত হারে হচ্ছে । হু হু করে বাংলাদেশি, রোহিঙ্গা ঢুকছে । কিন্তু দুঃখের বিষয় হল বাকি ভারতের লোক যখন মেঘালয়ে বসতি স্থাপন করতে যায় তখন ওখানকার ধর্মান্তরিত খ্রিস্টানরা বিরোধিতা করে । কিন্তু বাংলাদেশি বা রোহিঙ্গারা এলে ওরা বিরোধিতা করে না৷ বর্তমান সময়ে নন ট্রাইবাল সাংসদ নেই মেঘালয়ে৷ কিন্তু মুসলিম সাংসদ হচ্ছে । মেঘালয়কে বাঁচাতে নিয়ম কানুন বদল করতেই হবে । বিশেষ সুবিধা দিয়ে,লোভ দেখিয়ে ওদের খুশি করে আমরা কখনো মেঘালয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারব না । যতক্ষণ না পর্যন্ত সম্পত্তির সঙ্গে আধার সংযোগ না হবে ততক্ষণ জানাই যাবে না যে মেঘালয়ে কিভাবে ৫০০ কোটি টাকার মালিক ট্রাইবাল হয়ে সংরক্ষণের সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে । যদি আইন বদল না করা হয় তাহলে পাদরিদের জিহাদ বন্ধ হবে না এবং জম্মু-কাশ্মীরের মতই হিন্দুরা মেঘালয় থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হবে । ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়েও ভারতের সংবিধানের কোনো গুরুত্ব থাকবে না মেঘালয়ে ।’।