ছায়াঘেরা সবুজ বনানীর পাশে
একটা মাধবীলতার সংসার থাকবে জড়িয়ে।
উঠোনে তুলসী তলার গায়ে থাকবে
রজনীগন্ধার বেড়া।
তোর মা রোজ স্নানের পর ভেজা চুল আর আটপৌরে শাড়ি পরে ধীর পায়ে এগিয়ে যাবে আগে।
হাতে তার ফুলের সাজি, চোখের তারায় মায়া।
তোর বাউন্ডুলে বাপটাকে আটকে রাখতে
এর বেশি আর কি চেয়েছি বল!
কিছু না রে, কিচ্ছু না,
রান্নাঘরের তাকে সাজিয়ে রাখা
যত পুরনো মশলাদানির গায়ে কাগজ সেঁটে,
নাম লিখে লিখে নতুন বানাবে খোকা।
তোর মা বসে থাকবে তার পাশে,
হাতে হাতে এগিয়ে দেবে কাগজ, কলম, আঠা…
আমি ডাক পাঠাবো জোরে,
বলি গেরস্ত বাড়িতে সন্ধ্যাবাতি কখন জ্বলবে?
তোর মা ত্রস্ত পায়ে বেরিয়ে আসবে দ্রুত।
খোকা কোথায়? ঘরে? আমি হাঁক লাগাব জোরে।
তোর মায়ের ঈষৎ নত মুখে লজ্জা দেখব চেয়ে।
স্বস্তির শ্বাস ফেলে পান ভরবো গালে।
আমার ঠাম্মি, তার এই মা হারানো উত্তরসূরীর গালে
অকৃপণের মতো স্বপ্নবীজ বুনে দেয়,
ঢেলে দেয় জীবনের অমৃতকথন।
সুখ… বুঝলি দিদা, একেই বলে সুখ।
শাঁখ বাজলো, প্রদীপ জ্বললো, সংসার হলো ভরা
সবই তো হলো নিয়ম মেনে,
এক একে দুই আবার দুয়ে একে তিন।
তোর অ-সংসারী বাবা
কবে যেন এবাড়ির কর্ত্রী হয়ে আগলে রাখল সুখ, তোর মা হয়ে মুছিয়ে দিল আমাদের চোখ
তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বাললো
মাধবীলতার সংসার ভরলো,
তুই এলি, কথা বললি,
সাজিয়ে তুললি উঠোন থেকে ঘর, অঙ্গন, সংসার।
এক ঘোরতর অসংসারী মানুষ কেমন
আদ্যপান্ত এক সংসারী হয়ে গেল।
পুত্র হলো, পিতা হলো, কর্তা হলো, কর্ত্রী হলো, এমনকি সময়ে অসময়ে মাও হয়ে উঠলো আমাদের,
কত সাবলীলভাবে, কত সহজে…
শুধু তোর মা ছাড়া, একা একাই…