এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,১৭ জুন : বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলিম অনুপ্রবেশকারী মূর্তিমান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের জন্য । ভারত সরকার যখন তাদের প্রত্যার্পণের জন্য এনআরসি লাগু করার কথা বলে, তখন বিরোধী দলগুলি অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থনে দাঁড়িয়ে যায় । ফলে দ্রুত হারে দেশের জনবিন্যাসের পরিবর্তন ঘটছে । একটি টিভি চ্যানেলের বিতর্ক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় বলেছেন,’২০১৭ সালে আমি সুপ্রিম কোর্টে পি আই এল ফাইল করেছিলাম । সেই সময় আমি আদালতে ইতিমধ্যে ৫ কোটি অনুপ্রবেশকারী এসে গেছে । যদি জেলা ভিত্তিক দেখেন তাহলে পশ্চিমবঙ্গের ১৪ জেলার জনবিন্যাস পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে গেছে । আসামের ৯ জেলা,ঝাড়খন্ডের ৩ জেলা,বিহারের ৬ জেলা এবং উত্তরপ্রদেশের ১৬ জেলার জনবিন্যাস পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে গেছে । এছাড়া গুজরাটের কচ্ছ ও ভারুচের জনবিন্যাস পরিবর্তন হয়ে গেছে । আমাদের চার ধামের মধ্যে অন্যতম সেই দ্বারকা থেকে ভেট দ্বারকা যাওয়ার পথে জনবিন্যাসের পুরো পরিবর্তন হয়ে গেছে । দেবভূমি উত্তরাখণ্ডের উত্তর কাশির সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলি দখল করে নিয়েছে অনুপ্রবেশকারীরা ।’ তিনি অভিযোগ করেন যে এটা পুরো পরিকল্পনামাফিক হচ্ছে।
অনুমান করা হয় যে ভারতে বর্তমানে অন্তত ৪০,০০০ এরও বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী রয়েছে। আরেকটি হিসেব হল প্রতি মাসে অন্তত ২০০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম অনুপ্রবেশকারী ভারতে প্রবেশ করছে। দেশের এক ডজনেরও বেশি রাজ্যে এই রোহিঙ্গা মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের বসতি স্থাপন করা হচ্ছে পরিকল্পিত ভাবে । একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রও এর সঙ্গে জড়িত। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন টিম (এন আই এ) সম্প্রতি এর মাস্টারমাইন্ড ত্রিপুরার বাসিন্দা জলিল মিয়াকে গ্রেফতার করেছে। বেশিরভাগ রোহিঙ্গাই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে এসেছে। ১৯৮২ সালেই তাদের মিয়ানমার থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় । ২০১৫ সালের পর তাদের মধ্যে ৯ লাখ বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আসে । এক লাখ টাকা পুরস্কার বহনকারী জলিল মিয়া গ্যাংয়ের মূল পান্ডা হল তার সহযোগী জীবন রুদ্র পাল ওরফে সুমন । ইতিমধ্যেই এনআইএ-র হাতে ধরা পড়েছে সে । তার অন্য সহযোগী জজ মিয়া ও শান্ত এখনো পলাতক। এন আই এ এই গ্যাংয়ের ২৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। এমনকি ২০২৩ সালের নভেম্বরে জলিল মিয়াকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হয়েছিল, তবে সে পালিয়ে যায় । রোহিঙ্গা মুসলমানদের ১০-২০ লাখ টাকা প্যাকেজের আওতায় ভুয়া নথিপত্র দিয়ে ভারতে বসতি স্থাপন করা হচ্ছে বলে খবর । কেন্দ্রীয় সরকার তাদের অবৈধ অভিবাসী ঘোষণা করেছে এবং এমনকি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলেও ঘোষণা করেছে।
তবে জাতিসংঘ তাদের শরণার্থী হিসেবে বর্ণনা করে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের ভারতে বসতি স্থাপনের জন্য হিন্দি-আসামিয়ার মতো ভাষায় প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। এটি করা হয় যাতে তাদের কণ্ঠস্বরের কারণে তারা ধরা না পড়ে। এই চক্রটি প্রতিদিন ৫-১০ জন রোহিঙ্গা মুসলিমকে ভারতে পাচার করত। এমনকি তাদের পরিচয় গোপন করতে অনুপ্রবেশকারীদের চেহারাও পরিবর্তন করা হয়। দিল্লিতে এমন অনেক ক্যাম্প রয়েছে, যেখানে রোহিঙ্গারা বসবাস করছে। ভারতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের জনসংখ্যা মাত্র ২ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, দেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কোনো শিবিরের ব্যবস্থা নেই। মুসলিম অধ্যুষিত জম্মু ও কাশ্মীরে তাদের সংখ্যা ১০,০০০ বলে জানা গেছে। এই রোহিঙ্গারা অনেক অপরাধেও জড়িয়ে পড়েছে। শাহানবাগ এবং জাফরাবাদে সিএএ-র বিরুদ্ধে আন্দোলনে তারা প্রচুর পরিমাণে অংশ নিয়েছিল। ভারত ইতিমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ এবং তার উপরে, সন্ত্রাসীরা ক্রমাগত আক্রমণের সন্ধানে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা দেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
বাংলাদেশের সাথে ত্রিপুরার ৮৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। প্রায় ১৬ মাসে, শুধুমাত্র ত্রিপুরা থেকে ১০১৮ জন অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়েছে । ২০২৩ সালে ত্রিপুরা থেকে ৩৩৭ জন বাংলাদেশির মধ্যে ৯৩ জন মহিলা এবং ২৪ জন শিশু ছিল। ২০২৩ সালে, বিএসএফ ৭৪৪ জন অনুপ্রবেশকারীকে ধরেছিল। এর আগে ২০২২ সালে, ৩৬৯ জন অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়েছিল। একইভাবে, ২০২১ সালে ২০৮ জন অনুপ্রবেশকারীকে ধরা হয়েছিল, যার মধ্যে ৯৩ জন জন বাংলাদেশি ছিল । এই অনুপ্রবেশকারীদের সুদূর দক্ষিণে অবস্থিত চেন্নাই পর্যন্ত বসতি স্থাপন করা হচ্ছে বলে এনআইএ-এর তদন্তকারী দল জানতে পেরেছে।।