এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১০ জুন : পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিভিন্ন রূপে ভোট পরবর্তী হিংসা অব্যাহত রয়েছে । বিজেপিকে ভোট দেওয়ার অপরাধে কোথায় মারধর,ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে । কোথাও দলবেঁধে আবাসনের সামনে বাহুবল প্রদর্শন, কোথাও আবাসনের সামনে দুর্গন্ধ যুক্ত নোংরা আবর্জনা ফেলে আবাসিকদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে । পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার বিধানসভার নিত্যানন্দপুর গ্রামের ৪৮ ও ৪৯ নম্বর বুথ এলাকায় সজলধারা প্রকল্পের জল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ
তুলেছে গ্রামবাসীরা । গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ‘ এবারের লোকসভা ভোটের ফলাফলে আমাদের এই দুই বুথে বিজেপি এগিয়ে আছে । আর সেই অপরাধেই পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ করে আমাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে । এখন তীব্র দাবদহের মধ্যে পানীয় জলের জন্য আমাদের চরম সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে ।’ আজ সোমবার দুই বুথের ৭০ জন বাসিন্দার স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি ভাতারের বিডিওর কাছে জমা দিয়ে অবিলম্বে সজলধারা প্রকল্পের জল সরবরাহের জন্য দাবি জানানো হয়েছে ।
নিত্যানন্দপুর গ্রামের ৪৮ ও ৪৯ নম্বর বুথের নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য সিদ্ধেশ্বর মাজি ও ঝর্ণা সিংও স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন। ঝর্ণা সিং বলেন,’ আমাদের পাম্পের মোটর পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয় আমাদের । এরপর লোকদেখানো করে দুদিন পর মোটর তোলা হল। কিন্তু এখনও মোটর নিয়ে আসা হয়নি। ফলে তীব্র দাবিদহে আমরা জলকষ্টে ভুগছি ।’
উল্লেখ্য,নিত্যানন্দপুর গ্রামের ৪৮ নম্বর বুথে তৃণমূল ১৪০ ও বিজেপি পেয়েছে ৫০৬ ভোট । ৪৯ নম্বর বুথে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ৩৩৭ এবং তৃণমূল পেয়েছে ১৪৬ ভোট । দুই বুথ মিলে ৫৫৭ ভোটে এগিয়ে আছে বিজেপি । ফলাফল ঘোষণা হয় ৪ জুন । আর ৫ জুন থেকেই বন্ধ হয়ে যায় সজলধারা প্রকল্পের জল সরবরাহ । গ্রামবাসীরা অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন, কিছু মানুষের প্ররোচনায় ৫ জুন থেকে সজলধারা প্রকল্পের জল বন্ধ করে দেওয়া হয় । সাবমার্সিবল পাম্প মেশিন খারাপ হয়ে গেছে দেখানোর জন্য ৭ জুন মিস্ত্রী নিয়ে গিয়ে পাম্পটি তুলে নিয়ে চলে যায় কয়েকজন । তারপর থেকে এযাবৎ আর পাম্পটি বসানো হয়নি । গ্রামের বধূ শেফালি মাঝি সঞ্জিতা সামন্তরা বলেন,’গ্রামের খুব কম টিউবওয়েল চালু আছে । পানীয় জলের জন্য মূলত সজলধারা প্রকল্পের জলের উপরেই নির্ভর করতে হয় আমাদের । এখন জল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানীয় জলের জন্য গ্রামে হাহাকার পড়ে গেছে ।’ অবিলম্বে জল সরবরাহ করার জন্য তাঁরা কাতর আবেদন জানিয়েছেন ।
বিজেপি যুব মোর্চার বর্ধমান বিভাগের কনভেনার সৌমেন কার্ফা বলেন,’শুধু সজল ধারার জল বন্ধ নয়, অনেক জায়গায় আমাদের কর্মীদের মারধর করা হচ্ছে । তাদের দোকান খুলতে দেওয়া হচ্ছে না,কৃষি কাজে অসুবিধা করা হচ্ছে,বাড়িতে আক্রমণ করা হচ্ছে। বিজেপি নেতাকর্মীর বাড়ির মহিলাদের অশ্লীল ভাষায় ভাষায় গালিগালাজ করা হচ্ছে । এমনকি মহিলাদের কুপ্রস্তাবও দিচ্ছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ।’ তিনি বলেন,’আমরা প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে এলাকায় শান্তি এবং নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাস আটকানোর দাবি জানাচ্ছি ।’ যদিও শাসকদল নেতৃত্বের দাবি, নিত্যানন্দপুর গ্রামের সাবমার্সিবল পাম্পটি খারাপ হয়ে গেছে এবং মেরামত করতে দেওয়া হয়েছে । মেরামত হলেই জল সরবরাহ করা হবে । নিত্যানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জুলফিকার আলীর কথায়,’সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে । মোটর পুড়ে যাওয়ায় এই সমস্যা হচ্ছে । উন্নতমানের মোটর হওয়ায় মেরামত করতে দেরি হচ্ছে।’।