জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,উত্তর ২৪ পরগণা,০৮ জুন : দেখতে দেখতে তিন মাসাধিক কাল কেটে গেল। আজও বাড়ি, বিদ্যালয় ও খেলার মাঠে ফেরা হলোনা উত্তর ২৪ পরগণার কাঁচরাপাড়ার অংশুক দাসের। একমাত্র ছেলের সুস্থ অবস্থায় ঘরে ফেরার অপেক্ষায় হাসপাতালের বাইরে উদ্বিগ্ন হয়ে বসে আছেন তার বাবা-মা। ঘন ঘন খোঁজ নিচ্ছেন আত্মীয়রা। কারণ পড়াশোনা ও খেলাধুলায় মেধাবী ১১ বছরের বাচ্চাটি বিরল জিবিএস রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৮ শে ফেব্রুয়ারি থেকে চিকিৎসার জন্য কলকাতার নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি আছে।
জিবিএস অর্থাৎ গুলেন বারি সিনড্রোম। এটি একটি বিরল নিউরোলজিক্যাল রোগ যা শরীরের বিভিন্ন স্নায়ুর নানা অংশকে আক্রমণ করে। শরীরের নিজস্ব ইমিউন সিস্টেম ক্ষতি করে বলে একে অটোইমিউন রোগ বলা হয়। যেকোনো বয়সের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। মোটামুটি প্রতি বছর ১ লাখ মানুষের মধ্যে একজনের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। জীবাণু প্রতিরোধী ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক আচরণের ফলে এই রোগের উৎপত্তি হয়।
আর পাঁচটা দিনের মত সুস্থ, স্বাভাবিক ছেলেটার হঠাৎ দাঁতের যন্ত্রণা শুরু হয়। এই যন্ত্রণাই তার ও পরিবারের জীবনে কালসাপ হয়ে দাঁড়াবে সেটা কেউই বুঝতে পারেনি। ধীরে ধীরে প্যারালাইসিস রুগীদের মত তার সমস্ত শরীরটা অসাড় হতে থাকে। দেরি না করে তার অভিভাবকরা সঙ্গে সঙ্গে তাকে কলকাতার নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করে। যেহেতু এক বিরল রোগ তাই পর্যবেক্ষণের জন্য তাকে আইসিউতে রাখা হয়েছে। সেই থেকে আজও সে ওখানেই আছে।
এদিকে ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে অংশুকের পরিবার আজ কার্যত নিঃস্ব। তার বাবা অরুণকান্তি বাবু সামান্য বেতনে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করেন। মা সুবীরা দাস দত্ত সামান্য গৃহবধূ। ছেলের ভবিষ্যত নিরাপত্তার জন্য যেটুকু সঞ্চয় ছিল সেটাও আজ শেষ। একদিকে ছেলের ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ এবং অন্যদিকে দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন জোটাতে আজ দাস পরিবার হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে তারা অসহায় হয়ে ভাবছেন শেষপর্যন্ত কি অর্থের অভাবে ছেলের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাবে!
অংশুকের খবর পেয়ে ইতিমধ্যে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘জীবন চেতনা’, বিশিষ্ট শিল্পী প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য ও ‘জনচেতনা সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ অংশুকের পরিবারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে এটাই যথেষ্ট নয়। তার ব্যয়বহুল চিকিৎসার জন্য দরকার আরও অর্থের। নিজের সন্তানের প্রাণ রক্ষার জন্য এক অসহায় মা আঁচল পেতে সাহায্যের জন্য সবার কাছে আবেদন করে যাচ্ছেন। হয়তো সবার অল্প অল্প সহযোগিতা মেধাবী ছেলেটিকে আবার তার পরিবারের কাছে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দেবে।
অংশুকের রোগের কথা শুনে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারী হাসপাতালের বিশিষ্ট স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ড. স্নিগ্ধেন্দু ঘোষ বললেন,’বিরল এই রোগের জন্য সময় সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর এবং ব্যয়বহুল। ধীরে ধীরে রুগী সুস্থ হয়ে ওঠে। যেহেতু সে সাড়া দিচ্ছে আশা করা যায় দ্রুত সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবে।’
ইতিমধ্যে চিকিৎসায় অংশুক যথেষ্ট সাড়া দিচ্ছে। সবার আশা এবার সে সুস্থ হয়ে উঠবে। ঠিক এই পরিস্থিতিতে সহৃদয় ব্যক্তিরা কি ওই অসহায় মায়ের পাশে এসে দাঁড়াতে পারেন না? একটু সহযোগিতায় একজন মা তার একমাত্র সন্তানের মুখ থেকে আবার ‘মা’ ডাক শুনতে পাবে। এরই অপেক্ষায় আছেন সুবীরা দেবী।।