প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৮ জুন : সন্তানের জন্ম দিয়েই মারা গিয়েছে মা।সেই শোকে আত্মহত্যা করে বসেছে বাবা।এমন এক অনাথ শিশু সন্তানের দায়িত্ব নিতে চায়নি পরিবারের কোন সদস্য।এমন এক শিশু কন্যাকে এখন মাতা পিতার স্নেহেই আগলে রেখেছেন পূর্ব বর্ধমানের কালনা হাসপাতালের নার্স ও ডাক্তার বাবুরা।এখন তাঁদেরই নয়নের মণি হয়ে উঠেছে দেড় মাস বয়সী শিশুটি। তবে বাধ সেধেছে আইনের জাঁতাকল । তাই আর কিছু দিনের মধ্যেই হাসপাতাল ছেড়ে শিশুটির আবাসস্থল হবে জেলা চাইল্ড প্রোটেকশন ওয়েলফেয়ার কমিটির আবাস।তাই হাসপাতালের নার্স ও ডাক্তার বাবুদের মনও বড় ভারাক্রান্ত।
কালনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথায় জানা গিয়েছে, অন্তঃসত্বা অবস্থায় গত ১৬ ই এপ্রিল কালনা হাসপাতালে ভর্তি হন হুগলীর সোমড়া এলাকার বধূ অন্তরা বিশ্বাস।পরদিন তিনি একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।জন্মের পরেই শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে । তাই তাকে হাসপাতালের এসএনসিইউতে ভর্তি রাখা হয়।এর কয়েক ঘন্টা পরেই মৃত্যু হয় শিশুটির মায়ের। তার কারণে শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েন শিশু কন্যার বাবা। তিনি তাঁর কন্যাকে হাসপাতাল থেকে আর বাড়িতে নিয়ে যান না।এমন অবস্থায় শিশুটির ভবিষ্যৎতের কথা ভেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটির আত্মীয় পরিজনে সঙ্গে যোগাযোগ করেন।তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন, শিশুটির মায়ের শোকে আত্মঘাতী হয়েছেন বাবা।এমনটা জেনে হতবাক হয়ে পড়েন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে দুধের শিশুটির দিক থেকে তাঁরা মুখ ঘুরিয়ে নেন নি।
জন্মের পর অনাথ হয়ে পড়া দুধের শিশুটিকে সযত্নে লালন পালনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকরা। নার্সরাই শিশু কন্যাকে কোলে তুলে নিয়ে খাওয়ানো ঘুম পাড়ানো, সবই করছেন একেবারে মাতৃ স্নেহে । শিশুটি কান্নাকাটি করলে তাকে কোলে তুলে নিয়ে ভোলান নার্সরা। আদর করে তাঁরা শিশুটির নাম রেখেছেন “কথা“। কথার আধো আধো মায়াবি কথার মায়ার পড়ে গিয়েছেন হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য কর্মীরাও । তবে তাদের সবার মন এখন বড়ই ভারাক্রান্ত । কেননা আর কয়েক দিনের মধ্যে ’কথা’কে’ তুলে দিতে হবে শিশুদের সরকারী হোমে ।
হাসপাতালের দুই সহকারী সুপার শামিম মল্লিক ও গৌতম বিশ্বাস জানান,’জন্মানোর পরে অসুস্থতা ধরা পড়ায় শিশু কন্যাটিকে এসএনসিইউতে ভর্তি করা হয়। এর কয়েক ঘন্টা পরেই শিশুকন্যার মা মারা যায়।তার বাবাও সেই শোকে আত্মহত্যা করে বসেন বলে পরিবারের লোকজন জানায়।শিশুটি এখন সুস্থ হয়ে উঠেছে।এতদিন হাসপাতালের সবাই আন্তরিক ভাবে শিশুটির দেখভাল করেছে । তবে দুঃখের বিষয় তাদের পরিবার কেউ শিশু কন্যাটিয় দায়িত্ব নিতে চায় না । তাই জেলা চাইল্ড প্রোটেকশন ওয়েলফেয়ার কমিটিকে চিঠি করা হয়েছে । তাদের হাতেই শিশুকন্যাকে তুলে দেওয়া হবে।’।