এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাঁথি(পূর্ব মেদিনীপুর),০৪ জুন : ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে যে ১৮ টি আসন বিজেপি পেয়েছিল ২০২৪ সালের ভোটে তার থেকে ৬ টি আসন কম পেয়েছে বিজেপি । তমলুক ও কাঁথির ফলাফল ঘোষণার পর কাঁথি সাংগঠনিক জেলা কার্যালয়ে বসে দলের এই ভরাডুবির কারণ ব্যাখ্যা করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন যে ১০০ জন মুসলিমের মধ্যে ৯২ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে আর সিপিএম হিন্দু ভোট কেটেছে, যে কারনে তার দলকে আজ এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে । পাশাপাশি তিনি লক্ষ্মীর ভান্ডার কেড়ে নেওয়ার হুমকি এবং ভোটে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ।
শুভেন্দু বলেন,’তৃণমূলের এই জয় সম্ভব হয়েছে কারণ পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা চাকরি চান না । তাদের জীবন উন্নত হোক এটা তারা চান না । তারা পাকা বাড়িতে থেকে পরিশুদ্ধ পানীয় জল আর হাসপাতাল চান না । তারা চান যে তাদেরকে তোষামোদ করুক আর তোষামোদকারীদের তারা ভোট দেবেন । সেই কারণে ১০০ জন মুসলিমের মধ্যে বিরানব্বই জন মমতা ব্যানার্জির পার্টিকে ভোট দিয়েছে । তাই তিনি এবারও ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছেন । আর সিপিএম ও কংগ্রেসের যে ১২-১৩ শতাংশ ভোট ছিল,এবারে তারা দশ শতাংশের নিচে ভোট পেয়েছে, ২-৩ শতাংশ ভোট সরাসরি টিএমসির দিকে গেছে ।’
সিপিএমের প্রসঙ্গে তিনি বলেন,’তাদের যে বর্ষীয়ান পার্টি মেম্বার রয়েছে, তাদের কিছু বয়স্ক লোকজন রয়েছে, যারা অন্ধভাবে সিপিএমকে ভোট দিচ্ছেন । মূলত তারা হিন্দু ভোট কেটেছেন । মুসলিম কমরেডরা অধিকাংশ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে । যেহেতু মমতা ব্যানার্জির সম্পূর্ণভাবে তোষামোদের কথা বলেন । তারা মুসলিমদের ইকোনোমিকাল, এডুকেশন, জীবনজীবিকা, উন্নয়নের কথা বলে না। সম্পূর্ণভাবে তোষামোদের রাজনীতি করে । সিপিএম কিছু হিন্দু ভোটারদের ভোট কেটে মমতা ব্যানার্জির সুবিধা ২০২১ সালেও প্রায় ৫০-৫৫ টা আসনে করেছিল । এই লোকসভা তো প্রায় ৮-১০টা আসনে সুবিধা করে দিয়েছে । দমদম, উত্তর কলকাতা এরকম বহু আসন আছে । যেখানে কুড়ি থেকে চল্লিশ হাজার ভোটে বিজেপি হেরেছে । সেসব জায়গায় তৃণমূলের ওরা সুবিধা করে দিয়েছে । যে কারণে ওরা ২৯টা পেয়েছে । তা না হলে ওদের ১৭ টা পাওয়ার কথা ছিল ।’
শুভেন্দু বলেন,’ বিজেপির ২০২১ সালে যে ভোট ৩৮.১৩ তা থেকে ১ শতাংশের বেশি ভোট আমরা বাড়াতে পেরেছি এবং প্রায় একশ বিধানসভায় আমাদের বিজেপি প্রার্থীরা লিড রয়েছে । আমরা হয়তো একুশ প্লাস সিটের আশা নিয়ে কাজ করেছিলাম । আমাদের আশা ও ছিল । এ কথা আমরা একাধিক বার বলেছি যে তৃণমূলের থেকে আমরা একটা হলেও আসন বেশি পাবো । আমরা হয়তো যোগ বিয়োগের অংকে ১২ তে আটকে গেছি ।’
পাশাপাশি তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ তুলে বলেছেন,’চতুর্থ দফা থেকে পুলিশের অত্যাচার এবং কিছু নির্দিষ্ট বুথে অনুপস্থিত ও মৃত ভোটারদের ভোট বিকেলের দিকে দিয়ে যাওয়া হয়েছে । শেষের দিকে অনেক হিন্দু ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দান করা, আই কার্ড কেড়ে নেওয়া এইসব হয়েছে৷ এ বিষয়ে আমরা ষষ্ঠ দফতাও বলেছি, সপ্তম দফাতেও জানিয়েছি।’সরকারি স্কিম বন্ধ করার অপপ্রচার করে মানুষদের প্রভাবিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী ।
তিনি বলেন,’আমরা ২১ প্লাস আসন পাবো এটা আশা করেছিলাম । অল্প মার্জিনে আমাদের কিছু আসনে হারতে হয়েছে । কিন্তু আমরা যে কারণে পশ্চিমবঙ্গের ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞ তা হল তারা ২০২১ সালের নির্বাচনে থেকে আমার এক শতাংশ বেশি ভোট দিয়েছে । দ্বিতীয়তঃ ২০২১ সালে আমরা ৭৭ টা বিধানসভায় জিতেছিলাম । তার থেকেও বেশি সংখ্যক বিধানসভা, প্রায় একশোর কাছাকাছি বিধানসভাতে তারা আমাদের এগিয়ে রেখেছেন । চোখ বিয়োগের অংকে আপাতত আমরা বারোটা আসনে জয়লাভ করেছি ।’
পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আমরা এই অপশাসন কুশাসন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ২০২১ সালের পর থেকে যে সর্বাত্মক লড়াই চলছে, সেই লড়াই আমাদের জারি থাকবে । আমাদের যারা ভরসা করে ভোট দিয়েছেন তাদের আশা পূরণে বিজেপি সক্রিয়ভাবে কাজ করবে । একটা মুহূর্ত আমরা নষ্ট করতে চাই না ।’ তিনি জানান আগামী কাল থেকেই ফের তিনি রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়বেন ।
তিনি দলীয় কর্মীদেরকে পরামর্শ দিয়েছেন, ‘বিজয় মিছিলে নামে যেন অন্যের বিরক্তির কারণ না হন । কোনে ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের প্ররোচনায় পা না দিতে আবেদন করব । কোথাও যদি ২০২১ সালে নির্বাচন পরবর্তী হিংসার মতো ঘটনা ঘটে বা তেমন কোন পরিস্থিতি তৈরি হয় আপনারা আমাদেরকে জানাবেন । নির্বাচন পরবর্তী হিংসা হবে ধরে নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে জেলায় জেলায় আমরা কন্ট্রোল রুম খুলেছি । আমরা নির্বাচন কমিশরের কাছে কৃতজ্ঞ
যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কথা ভেবে ৪০০ কোম্পানি কেন্দ্র বাহিনীকে ১৫ দিনের জন্য এই রাজ্যে রেখেছেন ।’ দিলীপ ঘোষের পরাজয় প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’দিলীপদা কে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে । একটা লোকসভা কেন্দ্রে সাড়ে সাত লাখ ভোটে জিতছে, কি পপুলার ক্যান্ডিডেট! এত পুরনো দিনের আরামবাগের কথা আমাদের মনে পরিয়ে দিচ্ছে । কেশপুরের নন্দরানী ঢোলের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে । আরামবাগের বিনয় দত্তের কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে । গরবেতার সুশান্ত ঘোষের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে । সম্পূর্ণভাবে ভয় এবং আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল৷ আর মানুষের হাতে সরকারী যে সমস্ত অনুদানের টাকা তুলে দেওয়া হচ্ছে সেটা কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেখানো হয়েছে । একদিকে মুসলমান ভোট গুলোকে একজোট করা হয়েছে অন্যদিকে লক্ষ্মীর ভান্ডারের মত কিছু প্রকল্প কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেখানো হয়েছে । আর নির্লজ্জভাবে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করেছে । তার ফলে দিলীপদার মতো লোককেও বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে অল্প ভোটে হারতে হয়েছে ।’
অভিষেক ব্যানার্জির বিপুল ভোটে জয়লাভের বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’একটু আগে জানতে পারলাম মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী এবং তার স্বনামধন্য ভাইপো যিনি গিনেস বুক অফ রেকর্ডে নাম তুলে সাত লক্ষ-এর বেশি ভোটে জিতেছেন । এই প্রহসনের নির্বাচন সবাই দেখেছে । আমরা নির্দিষ্ট করে বলেছিলাম, আমরা ক্যানিং পূর্বের কথা বলেছিলাম সেখানে কি হয়েছে দেখেছেন । আমরা ঘাটালের কেশপুরের কথা বলেছিলাম, সেখানে দেখেছেন বিরোধী পক্ষের প্রার্থী এক পারসেন্টও ভোট পায়নি। ডায়মন্ড হারবারে কি হয়েছে আমরা বলেছিলাম ।
এই দম্ভ ঔদ্ধত্য অহংকার এবং রিগিং,সন্ত্রাস করে ক্ষণিকের শান্তি পাওয়া যায় কিন্তু স্থায়ী শান্তি পাওয়া যায় না। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অনিল বসু ছয় লক্ষের বেশি ভোটে আরামবাগ থেকে জিতে বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন । ২০০৯ সালে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি । জনগণ বিসর্জন দিয়েছিল । স্বাভাবিক ভাবেই এই অহংকারের পতন জনগণের দ্বারাই হবে এটা আমাদের বিশ্বাস ।’।