এইদিন ওয়েবডেস্ক,রিয়াধ,০২ জুন : ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধের মাঝে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব । পাঠ্য পুস্তকের ভৌগোলিকভাবে মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে ফিলিস্তিনের নাম ।২০২২ সালে সৌদি আরবের নবম শ্রেণির সামাজিক শিক্ষা বইয়ে মানচিত্রে ফিলিস্তিনের নাম রাখা হলেও পরে এটি মুছে ফেলা হয় । মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে । পাশাপাশি বাদ দেওয়া হয়েছে কোরান শিক্ষার পাঠক্রম । শুধু সৌদি আরবই নয়,একই রাস্তায় হাঁটতে চলেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত । আর এতে বেজায় চটেছে ইয়েমেনের কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হুতির সর্দার আব্দুল মালেক আল-হুতি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদির পাঠ্যবইয়ে গত পাঁচ বছরে কী ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে তা নিয়ে বিস্তর এক গবেষণা করেছে ইম্প্যাক্ট-সি নামে ইসরাইলি একটি এনজিও ও পর্যবেক্ষক সংস্থা। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত সৌদি আরবের সাড়ে তিনশোর বেশি পাঠ্যবই পর্যালোচনা করে কী কী বাদ দেওয়া, পরিবর্তন করা এবং কোন বিষয়গুলো রাখা হয়েছে তা বিস্তারিত জানিয়েছে সংস্থাটি। ইম্প্যাক্ট-সি আরও জানায়, সৌদির দ্বাদশ শ্রেণির সামাজিক শিক্ষার বইয়ে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বর্ণবাদী বলে উল্লেখ ছিল। সেই বইটি ২০২৩ সাল থেকে পড়ানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আরেকটি বই এখনো পড়ানো হচ্ছে তবে সেটি থেকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে ফিলিস্তিনি আন্দোলনের বিষয়টি ।
গবেষণা প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, ২০২২ সালে পঞ্চম ও নবম শ্রেণির সামাজিক শিক্ষা বইয়ে মানচিত্রে ফিলিস্তিনের নাম রাখা হলেও পরে এটি মুছে ফেলা হয়। রাখা হয়নি ইসরাইলের নামও। বেশিরভাগ পাঠ্যবই থেকে সৌদির সঙ্গে সীমান্ত নেই এমন দেশের নাম মুছে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে ফিলিস্তিনও রয়েছে। শুধু তাই নয়, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা এবং ভূগোল বই থেকেও মুছে ফেলা হয়েছে ফিলিস্তিনের মানচিত্র । গত কয়েক বছর ধরেই সৌদি আরবের গবেষকরা দেশটির পাঠ্যবইগুলোতে নারী-পুরুষের ভূমিকা থেকে শুরু করে শান্তি ও সহিষ্ণুতার বার্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে ধারাবাহিকভাবে কিছুটা উদারতার ইঙ্গিত পাচ্ছে । গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইসরাইলের মধ্যে কূটনীতিক সম্পর্ক সৃষ্টির পর, ইহুদি ও খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মধ্যে অব্যাহত সংঘাতসহ কিছু জটিল ও সংবেদনশীল বিষয়ে সৌদি পাঠ্যপুস্তকের বর্ণনার পরিবর্তন সবার মনোযোগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে।
ইরানের আধাসরকারি বার্তাসংস্থা মেহের নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছর ধরেই সৌদি আরবের পাঠ্যবইতে আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে । সৌদি আরবের পাঠ্যপুস্তক থেকে কোরান শিক্ষা বাদ দেওয়ায় হুথির সন্ত্রাসী আব্দুল মালেক আল-হুতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ওই সন্ত্রাসবাদী অভিযোগ করেছে যে কোরানের যেসব আয়াতে ইহুদিদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে সেই আয়াতগুলো পাঠ্যপুস্তক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে । এটি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বড় অবিচার । তার সন্দেহ যে সম্ভবত ইসরাইলি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সৌদি সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতও পাঠ্যপুস্তক থেকে কোরানের শিক্ষা বাদ দেওয়ার এই নীতি অনুসরণের কথা ভাবছে বলে অভিযোগ করেছে আল হুতি।
গত বছরের মে মাসে ইসরাইল ও লন্ডনভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর মনিটরিং পিস অ্যান্ড কালচারাল টলারেন্স ইন স্কুল এডুকেশন (ইমপ্যাক্ট-এসই) প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয় যে সৌদি পাঠ্যপুস্তকের সর্বশেষ সংস্করণগুলোতে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের সম্পর্ককে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করার প্রচলিত ধারা থেকে বের হয়ে এসেছে । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে । অমুসলিম দেশগুলি সৌদির এই উদ্যোগের ব্যাপক প্রশংসা করলেও সন্ত্রাসীদের আঁতুরঘর পাকিস্তানের মত রাষ্ট্রগুলি বেজায় চটেছে।।