প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৮ মে : ভোট মিটতেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ঝরলো রক্ত। জখম হলেন পাঁচ নেতা কর্মী।আর তা নিয়েই সোমবার রাতে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বিষ্ণুপুর লোকসভা অধীন পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের উখরিদ অঞ্চলে । জখমদের রাতে ভর্তি করা হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । জখমদের মধ্যে রয়েছেন উখরিদ অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সেখ হাবিবুর রহমান ও তাঁর ছেলে সেখ মেহবুব রহমান ওরফে আকাশ এবং ভাইপো সেখ মাইনুল রহমান।পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুর করেছে।ফের যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্যে এলাকায় পুলিশি তৎপরতা জারি রয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার আমান দীপ মঙ্গলবার জানান,”খণ্ডঘোষের উখরিদের ঘটনায় খুনের চেষ্টার ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। তিনজনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ষষ্ঠ দফায় বিষ্ণুপুর লোকসভার ভোট অনুষ্ঠিত হয় ।ভোটের দিন এই লোকসভা অধীন খণ্ডঘোষ বিধানসভায় ভোট নির্বিঘ্নেই সমাপ্ত হয় । কিন্তু ভোট শেষ হবার পর দু’দিন কাটতে না কাটতেই সোমবার রাতে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তপ্ত হয়ে ওঠে খণ্ডঘোষের উখরিদ অঞ্চলের শেরপাড়া।আক্রন্ত মেহবুব রহমান দাবি করেন,“তাঁরা খণ্ডঘোষের তৃণমূল বিধায়ক নবীন চন্দ্র বাগের অনুগামী। উখরিদ অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি হাবিবুর রহমানের স্ত্রী আসমতারা বেগম খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষা।তাই এই অঞ্চলে রাজনৈতিক দখলদারি কায়েম করতে ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অপার্থিব ইসলাম ওরফে ফাগুনের নির্দেশে তার অনুগামীরা হঠাৎই সোমবার রাতে তাঁদের উপর সশস্ত্র আক্রমণ চালায়।
মেহবুব রহমানের অভিযোগ তারা গ্রামের একটি দাওয়ায় বসে ছিলেন। সেই সময় হঠাৎই ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অপার্থিব ইসলামের নির্দেশে একদল লোক মোটরবাইকে এসে আমাদের উপর হামলা চালায়। তাদের হাতে ছিল রড, লাঠি ও টাঙ্গি। ব্লক সভাপতির ভাই ও ছেলে ঠিকাদারি করছে।ঠিকাদারি নিয়ে অপার্থিব ইসলামের সঙ্গে অঞ্চল সভাপতির দ্বন্দ্ব রয়েছে।গোটা ব্লকের সব ঠিকাদারি কাজ অপার্থিব ইসলামের ছেলে ও ভাইপো করতে চায়।সেটা নিয়ে বাধা দেওয়াতেই অপার্থিব ইসলাম বদলা স্বরুপ এই আক্রমণ চালানো করায় ।
এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আলি হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘বিধায়কের গোষ্ঠীর সঙ্গে ব্লক সভাপতি অনুগামীদের দ্বন্দ্বের জন্যই গ্রামে মারপিট ও অশান্তি হয়। শেরপাড়ায় অতর্কিতে হামলা চালায় ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতির লোকজন।জখম পাঁচজনকে প্রথমে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় খণ্ডঘোষ প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। সেখান থেকে প্রথমে তিনজনকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।’
এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া পাবার জন্য বিধায়ক নবীন চন্দ্র বাগকে ফোন করা হলে তিনি বলেন,’উখরিদ অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি হাবিবুর রহমানের উপর আক্রমণ মানে দলের উপর আক্রমণ।এটা মেনে নেওয়া যায় না। হাবিবুর রহমানের স্ত্রী তথা খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষা আসমতারা বেগম এই আক্রমণের ঘটনা নিয়ে ১৭ জনের নামে খণ্ডঘোষ থানায় এফআইআর দায়ের করছেন।’ আক্রমনকারীরা যাঁরই অনুগামী হোক না কেন ,তাঁদের কঠিন শাস্তি হওয়া দরকার বলে বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ মন্তব্য করেছেন। আর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অপার্থিব ইসলাম বলেন,’আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, উখরিদের ঘটনার গোষ্ঠী কোন্দল বা বিবাদের কোন বিষয়ই নেই। সবটাই গ্রাম্য বিবাদ।এর সঙ্গে দলের কোন সম্পর্ক নেই। আমিও চাই ঘটনার পুলিশ ঘটনার সত্যতা উদঘাটন করুক ।’
জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,’২৫ মে ভোট মিটতে না মিটতে খণ্ডঘোষের গুইর গ্রামের দুই বিজেপি কার্যকতা পরমেশ্বর মাঝি ও পিন্টু রুইদাস কে ব্যাপক মারধোর করে তৃণমূলের লোকজন। এরপর একদিন কাটতে না কাটতে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি গোষ্ঠীর বেপরোয়া লোকজনের আক্রমণে বিধায়ক গোষ্ঠীর লোকজন রক্তাত হলেন,জখম হলেন।’ তৃণমূলের সন্ত্রাস খণ্ডঘোষে কোন পর্যায়ে পৌছেচে তা এইসব ঘটনাই প্রমাণ করে দিচ্ছে বলে মৃত্যুঞ্জয় বাবু দাবি করেছেন।।