এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদহ,১৮জুন : রাস্তার বেহাল অবস্থা দেখে অ্যাম্বুলেন্স আসতে রাজি হয়নি । একটি টোটোকে কোনও রকমে রাজি করিয়ে অসুস্থ বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন পরিবারের লোকজন । কিন্তু খানাখন্দে ভরা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় টোটোর ঝাঁকুনিতে ওই অসুস্থ বৃদ্ধের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ । ঘটনাটি মালদহ জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষীপুর গ্রামের । বৃদ্ধের মৃত্যুর খবর জানাজানি হতেই গ্রামে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয় । শুক্রবার সকালে গ্রামিবাসীরা জড়ো হয়ে রাস্তায় গাড়ির টায়ার জ্বালিয়ে ও ধানের চারা পুঁতে প্রতিবাদ দেখান । চলে বিক্ষোভ প্রদর্শন ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,লক্ষীপুর গ্রাম থেকে মূল সড়কপথে যাওয়ার জন্য প্রায় সাড়ে ৩ কিমি দীর্ঘ একটি রাস্তা রয়েছে ৷ লক্ষীপুর গ্রাম ছাড়াও নসরপুর, ভেলাবাড়ি,চন্ডিপাড়া ও গাররা-ভাটলসহ প্রায় ১০ টি গ্রামের বাসিন্দারা মূলত এই রাস্তার উপর নির্ভরশীল । এছাড়া বিহারের সীমন্তবর্তী এলাকা হওয়ায় পড়শি রাজ্যের অনেক গ্রামের মানুষ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন । জেলা পরিষদের অধীনে এই রাস্তাটি প্রায় দেড় দশক আগে পাকা করা হয়েছিল । তারপর আর সংস্কার না হওয়ায় রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠেছে বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ ।
লক্ষীপুর গ্রামের বাসিন্দা নকুল চন্দ্র ঠোগদার বলেন, ‘২০১৭ সালের বন্যার পর রাস্তাটি আরো খারাপ হয়ে গেছে । রাস্তার মধ্যে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে । বর্তমানে বর্ষার মরশুম চলায় কোথাও হাঁটু সমান জল জমছে । কোথাও আবার বৃষ্টির জমা জল রাস্তার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে । রাস্তার মাঝে মাঝে আবার এত কাদা যে প্রায় দিনই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে । ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভয় করছেন অভিভাবকেরা । গ্রামে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে অ্যাম্বুলেন্স আসতে চাইছে না ।’ তাঁর অভিযোগ, ‘রাস্তা সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্তাদের বহুবার জানানো হয়েছে ।কিন্তু কোনও কাজের কাজ হয়নি । প্রতিবার ভোটের আগে জনপ্রতিনিধিরা গ্রামে এসে রাস্তা মেরামতির আশ্বাস দেয় । কিন্তু ভোটপর্ব মিটতেই আবার যা কে তাই ।’
জানা গেছে, লক্ষীপুর গ্রামের সনাতন ঠোগদার নামে এক বৃদ্ধ দিন পনেরো ধরে অসুখে ভুগছিলেন । বার্ধক্য জনিত সমস্যার পাশাপাশি তাঁর পেটের রোগ ছিল । গত বুধবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে মালদায় এক বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল । বৃদ্ধের ছেলে টিটুন ঠোগদার বলেন, ‘বাবাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে কথা বলি । কিন্তু রাস্তা খারাপের জন্য অ্যাম্বুলেন্সে আসতে চায়নি । তারপর একটা অটোকে কোনও রকমে রাজি করাই । শেষে বাবাকে অটো করে নার্সিংহোম নিয়ে যাচ্ছিলাম । কিন্তু রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে এত ঝাঁকানি হয় যে মাঝ রাস্তাতেই বাবা মারা যান ।’
জানা গেছে,বৃদ্ধের মৃতদেহটি গ্রামে নিয়ে আসতেই স্থানীয় লোকজন ক্ষোভে ফেটে পড়েন । এদিন আন্দোলনে নামেন গ্রামবাসীরা । তাঁদের দাবি রাস্তাটি অবিলম্বে সংস্কারের ব্যাবস্থা করা হোক । অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গ্রামবাসীরা ।।