জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা(পূর্ব বর্ধমান), ২৪ মে : ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুডে অভ্যস্ত বর্তমান প্রজন্মের কাছে মৌসুমী ফল বা সিজন্যাল ফ্রুট শব্দটা অপরিচিত হলেও আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু সহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল শুধু আমাদের রসনার তৃপ্তি আনেনা এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী। চিকিৎসকদের মতে যেকোনো মৌসুমি ফল শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। এগুলি নির্দিষ্ট ঋতুতে শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। প্রতিটি ফলের মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবণেল ঘাটতি পূরণ করে।তালের শাঁস হলো এরকমই একটি উপকারী মৌসুমী ফল।
ফলের ঋতু গ্রীষ্মকালে খুব অল্প সময়ের জন্য তালশাঁস পাওয়া যায়। সময় অনুযায়ী এগুলি নরম, অল্প নরম ও শক্ত প্রকৃতির হয়ে থাকে। ব্যক্তি বিশেষে খাওয়ার তারতম্য দেখা যায়। কেউ খুব নরম পচ্ছন্দ করে তো কেউ অল্প নরম বা শক্ত প্রকৃতির। তালশাঁস খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর মধ্যে আছে অনেক পুষ্টিগুণ।
তালের শাঁসের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ জল আছে যেটা গ্রীষ্মকালে শরীরের জলের ঘাটতি পূরণ করে শরীরকে ঠান্ডা রাখে। এমনকি জলের ঘাটতি জনিত এলার্জির হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এছাড়াও এতে আছে কার্বোহাইড্রেট, অল্প পরিমাণ প্রোটিন ও ফ্যাট, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। তাল শাঁসে আছে শরীরের পক্ষে প্রয়োজনীয় পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন সহ বিভিন্ন খনিজ উপাদান যেগুলি মানব দেহের ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ফলে গরমের সময় ক্লান্তি দূর হয় ও শরীর সতেজ থাকে।এছাড়াও আছে ফাইবার ও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে । লো- ক্যালরির খাবার তালশাঁসে জল ও ফাইবার থাকায় এটা অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
তালশাঁস উপকারী হলেও অতিরিক্ত খাওয়া হলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। শহরের লোকেরা সেভাবে তাল শাঁসের সঙ্গে পরিচিত নাহলেও এক সময় গ্রীষ্মকালে গ্রামের মানুষদের দল পাকিয়ে তাল শাঁস খেতে দেখা যেত। বর্তমান প্রজন্মের তাল শাঁসের প্রতি অনীহা ও তালগাছ কেটে ফেলার জন্য অতীতের সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর দেখা যায়না। তার মাঝেও গ্রীষ্মকালে গ্রামের অনেক সাধারণ মানুষ তাল নিয়ে জাতীয় সড়কের ধারে অথবা শহরের কোনো এক জায়গায় বসে তাল শাঁস বিক্রি করতে শুরু করেন। স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে সঙ্গে দূরদূরান্ত থেকে আগত ব্যক্তিরা গাড়ি থামিয়ে তাল শাঁসের স্বাদ আস্বাদন করে। বিক্রিও হয় ভাল।
তাল শাঁস বিক্রেতা অমিয় মণ্ডল বললেন,’প্রতিদিন গড়ে ৭০-৮০ পিস তাল শাঁস বিক্রি হয়। কখনো কখনো একটু বেশি হয়। সব বয়সী নারী-পুরুষ তাল শাঁস খায়।’ দুর্গাপুরের বিশিষ্ট চিকিৎসক কবিতা চৌধুরী বললেন, ‘সব ধরনের মৌসুমী ফলের একটা নিজস্ব গুণ আছে যেগুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ফলে প্রত্যেকের খাদ্য তালিকায় তাল শাঁস সহ মৌসুমী ফল অবশ্যই থাকা উচিত।’ সুদূর স্পেন থেকে কঙ্কনা ব্যানার্জ্জী বললেন,’আমি গ্রামের মেয়ে। তাল শাঁস সহ যেকোনো মৌসুমী ফলের প্রতি আমার আলাদা টান আছে। এখানে সেই সুযোগ না থাকলেও গ্রামের বাড়িতে গেলে এগুলো খেতে ছাড়িনা।’ পেশাগত কারণে গত তিন বছর গ্রামে ফিরতে না পারায় তাল শাঁস সহ অন্যান্য মৌসুমী ফল খাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তার মনের মধ্যে একটা আক্ষেপ থেকে গেছে। তার কণ্ঠস্বরে সেই আক্ষেপ ধরা পড়ে।।