কথাবাচক কুলভূষণ কুলশ্রেষ্ঠ একটা ভাষণে বলেছিলেন,’ইসলামের মধ্যে জাতি বা দেশের ধারণা বলে কিছু নাই । ইসলাম শুধু ‘উম্মাহ’ কে মেনে চলে । ‘উম্মাহ’-এর লক্ষ্য হল, বিশ্বের যেখানে মুসলমান থাকুক না কেন তার কথা আগে ভাবতে হবে, যে রাষ্ট্রে তুমি আছো সে রাষ্ট্রের কথা না ভাবলেও চলবে । এটা ইসলামের ‘উম্মাহ’-এর নীতি।’
এখন প্রশ্ন ‘উম্মাহ’ কি ?
এই শব্দের অর্থ আরবি ভাষায় জাতি । আল-উম্মাহ আল-আরাবিয়াহ শব্দটি “আরব জাতি”কে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। ইসলাম অনুযায়ী যেকোনো নৃতাত্ত্বিক, ভৌগোলিক বা ভাষাভাষীর মুসলিম ব্যক্তি উম্মাহর সদস্য হিসেবে গণ্য হয় । ‘উম্মাহ’ শব্দের প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ-এর সময় ৬১৫ খ্রিস্টাব্দে ।
বলা হয় যে ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ-এর অনুসারীর সংখ্যা প্রথমদিকে খুবই কম ছিল । মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা ৬১৫ খ্রিস্টাব্দে মক্কা থেকে বিতাড়িত হলে তারা প্রথমে আবিসিনিয়ায় (বর্তমান ইথিওপিয়া) এবং পরে মদিনায় পৌঁছান। এখানে ইহুদীরা তাকে স্বাগত জানায় এবং তা হল উম্মাহ । যার অর্থ ছিল ভ্রাতৃত্বের সাথে বসবাসকারী সমাজ। আশ্চর্যের বিষয় হল যে প্রথম দিকে এই ধারনাটি ছিল অত্যন্ত ধর্মনিরপেক্ষ । উম্মাহর মধ্যে সকল ধর্মকে একত্রে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল ।
কিছু সময় পর নবী মক্কার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন, ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে নবী প্রয়াত হন । কথিত আছে যে তিনি অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন কিন্তু অনেকে এই অসুস্থতাকে ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত করেছেন। নবীর মৃত্যুর পর তার কন্যা ফাতিমাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। মুহম্মদের পরিবারের অনেক লোককে মুসলমানরা অত্যন্ত নির্দয়ভাবে হত্যা করেছিল বলে দাবি করা হয় । এসবের পেছন সহজ কারণ ছিল মুহাম্মদের কোন পুত্র সন্তান ছিল না। অতএব, সিংহাসনে যে কেউ বসতে পারে,সে হবে ইসলামী বিশ্বের রাজা।
সামগ্রিকভাবে,মুহম্মদের শত্রুরা মক্কার রাজার পাশাপাশি তাঁর সৃষ্ট ইসলামের প্রবক্তারাও ছিলেন । মুহম্মদের মৃত্যুর পর উম্মাহর অর্থ পাল্টে যায় । ইহুদিদেরকে বেছে বেছে হত্যা করে সৌদি আরব থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে ৷ ইহুদিদের বিতাড়নের পর সৌদির অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং চরম দারিদ্রের সৃষ্টি হয় । তাই দারিদ্র্য থেকে মনোযোগ সরানোর জন্য উম্মাহর স্লোগান তোলা হয় । এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ইসলামের পতাকা সারা বিশ্বে উত্তোলন করতে হবে অর্থাৎ বিশ্ব জুড়ে ইসলামি শাসন লাগু করা । এ জন্য রক্তনীতি বা জিহাদ গ্রহণ করা হয়, প্রথমে তারা সিরিয়া আক্রমণ করে খ্রিস্টান ও ইহুদিদের হত্যা করে এবং মুসলমানে ধর্মান্তরিত করে।
উম্মতের মধ্যে আরও অনেক পরিবর্তন ছিল । যেমন আপনাকে নবী মুহাম্মদের মতো জীবন যাপন করতে হবে। তিনি যে পোশাক পরতেন আপনাকেও সেই পোশাকই পরতে হবে,তিনি যেভাবে কথা বলতেন সেভাবে কথা বলতে হবে । আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে এই প্রসঙ্গে ভারতের কিছু মুসলমানও কোনো না কোনোভাবে পাঠান ভঙ্গিতে কথা বলার চেষ্টা করে। হিন্দি শব্দ কম ব্যবহার করে যাতে তাদের মধ্যে সৌদি আরবের সংস্কার ফুটে ওঠে ।
যাইহোক, যখনই আরব দেশে কোন রাজাকে যুদ্ধ করতে হতো, তিনি উম্মাহর জন্য সৈন্যদের কাছে আবেদন করতেন। উদ্দেশ্য ছিল ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে সাম্রাজ্য বিস্তার করা । বিজয়ের পর ধনী মুসলমানেরা সম্পদ লাভ করে এবং গরীবরা উম্মাহতে সুখী হয়ে থাকে । একই অবস্থা আজ অবধি চলছে, ইসলামী বিশ্বের আসল শক্তি আরব দেশ এবং তার মধ্যে হল তুর্কিরা, যাদেরকে মুহাম্মদের হত্যাকারীদের বংশধর বলে মনে করা হয় ।
এখন যদি দরিদ্র মুসলমানদের কথা বলা হয়,তাহলে তারা মূলত দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমান। এখানকার মুসলমানরা এই বলে যে আরবরা আমাদের ভাই। এক সময় ছিল যখন জেরুজালেমে খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে যুদ্ধ চলছিল, মোহাম্মদ ঘোরি যদি এতটাই ইসলামপ্রেমী হতেন তাহলে কেন তিনি জেরুজালেমে যাননি এবং কেন উল্টো ভারতে এসেছিলেন? এর উত্তর কি ভারতীয় মুসলিমদের জানা আছে ? ঘোরি পৃথ্বীরাজ চৌহানকে পরাজিত করেন, সম্পত্তি লুট করেন এবং পরে মারা যান।
উম্মাহর নামে কিছু মন্দির ভেঙ্গে গরীব মুসলমানদের ললিপপ দেওয়া হয় এবং তারা বলতে থাকে আল্লাহকে ধন্যবাদ যে মুহাম্মদ ঘোরি এসেছেন। সামগ্রিকভাবে এই বিশ্বের ধনী মুসলমানরা শুধুই ব্যবসায়ী, যারা ইসলামের মুখোশ পরে আছে ।
সৌদি আরবকে দেখুন, যখন তারা লক্ষ্য করল যে বিশ্বের সুপার পাওয়ার আমেরিকার সাথে সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হচ্ছে, তখন তারা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়ে দেয় । আজ আমেরিকার সাথে তার রাজনৈতিক সম্পর্ক মজবুত হয়েছে। আজ এসব দেশের সাথে ইসরায়েলের বাণিজ্য কোটি কোটি ডলারের, অথচ ভারত ও পাকিস্তানের মুসলমানরা ইসরায়েলকে উঠতে বসতে অভিশাপ দিয়ে এবং ইহুদিদের মৃত্যু কামনা করে ইসলামকে বাঁচাচ্ছে !
যদি সত্যিই উম্মাহ বলে কিছু থাকে তাহলে পাকিস্তান কেন আফগানিস্তানে রসদ যাওয়া বন্ধ করছে ? কেন প্রতিদিন দেশ থেকে আফগানিদের তাড়িয়ে দিচ্ছে পাকিস্তান-ইরান-তুর্কি ? তালিবানের সাথে কেন বারবার সংঘর্ষে জড়াচ্ছে পাকিস্তান সেনা ? বাংলাদেশ কেন রোহিঙ্গাদের স্থায়ী নাগরিকত্ব দেয় না? কেন মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ঠাঁই হয় না আরব দেশগুলিতে ? হঠাৎ ভারতপন্থী কথা বলে কেন পাকিস্তানকে চমকে দিল তুরস্ক ? পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে সুন্নিরা কেন শিয়া বা অনান্য ইসলামি সম্প্রদায়ের উপর হামলা করে ? সবচেয়ে বড় কথা হলো সিরিয়া আজ কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে । ৫৬ টি ইসলামি দেশ চাইলেই কি সিরিয়ার বেহাল অর্থনীতির হাল ঘোরাতে পারে না ? সিরিয়ার বেলায় উম্মাহ কোথায় গেছে ?
এই কারনে ভারতের মুসলমানদের উচিত ধর্মীয় বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে এক জাতির ধারনাকে প্রাধান্য দেওয়া । জানা দরকার যে, ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির ৫,৫০০ বছর আগে দিল্লি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । এই পাঁচ হাজার বছরের মধ্যে মুসলমানদের শাসন মাত্র ৫৬৫ বছর। যদি দিল্লির বয়স এক ক্যালেন্ডারের সমান ধরা হয় তাহলে ইসলামি শাসন এক মাসও স্থায়ী হবে না। লাল কেল্লা সহ দিল্লী সর্বদা হিন্দুদেরই ছিল । বিশ্বের ধ্বংসের আগে পর্যন্ত হিন্দুদেরই থাকবে । উম্মাহ নিষ্ক্রিয়, কিন্তু ভারত চিরন্তন, যেদিন মুসলমানরা এই সত্য জানতে শিখবে সেদিন ইহুদি, খ্রিস্টান এবং পার্সিদের মত মুসলিমরাও ভারতীয় হিন্দুদের মনে জায়গা করে নেবে ।
আপনি যদি এখনও উম্মাহকে ভালোবাসেন তবে কাফেরদের সাথে নয়,বরং নিজের সাথে লড়াই করুন। কারণ কাফেররা এখন ১৪০০ বছর এগিয়ে গেছে । কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করতে আপনাকে আরও ১৪০০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। কে জানে কি পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে তখন । ভবিষ্যৎকে কে দেখেছে ?

