জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বিষ্ণুপুর,২০ মে : ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে অর্ধাঙ্গিনী হিসাবে বিজেপি প্রার্থী স্বামীর অনুপস্থিতিতে প্রচারের ময়দানে দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন স্ত্রী । এসেছিল সাফল্যও । কিন্তু দু’বছরের মাথায় দাম্পত্য কলহের জেরে ভেঙে যায় তাদের সম্পর্ক । সম্পর্ক ভাঙার পর শিবির বদল করেন স্ত্রী । যোগ দেন মমতা ব্যানার্জির ঘাসফুল শিবিরে । এবারের লোকসভা ভোটে ফের প্রচারের ময়দানে নেমেছেন ওই প্রাক্তন দম্পতি । তবে এবারে তারা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী । বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁয়ের এবারের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল । প্রাক্তন দম্পতির এই লড়াই এর জন্য এবারের ভোটে নজরকাড়া কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বিষ্ণুপুর লোকসভা আসনটি ।
প্রসঙ্গত, কোনো একটি মামলাকে কেন্দ্র করে আদালতের নির্দেশে গত লোকসভা নির্বাচনে বিষ্ণুপুরের কিছু অংশে প্রচার করতে সক্ষম হননি সৌমিত্র । প্রচারে এলাকা চষে বেড়ান সুজাতা । স্বামীর জয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি । কিন্তু বিবাহ বিচ্ছেদের ২ বছর পর সুজাতা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলে সৌমিত্র খাঁ তৃণমূলকে “তাঁর স্ত্রী চুরি” করার জন্য অভিযুক্ত করেন । এবারের ভোটে সেই সুজাতাকেই বিষ্ণুপুরে টিকিট দিয়েছে তৃণমূল । ফলে এবারের ভোটের ময়দানে প্রাক্তন স্বামীর সম্মুখ সমরে সুজাতা । নিজের জয় নিশ্চিত করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে সুজাতা দিনরাত এক করে ছুটে বেড়াচ্ছে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। প্রচারে মোটামুটি ভিড়ও হচ্ছে । পাশাপাশি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং নিজেদের মত করে প্রচার করে যাচ্ছেন তারা।
এবার তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আসরে নেমেছেন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস । তার নেতৃত্বে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত গলসী ২ নম্বর ব্লকের কুলগড়িয়ায় একটি কর্মীসভা হল আজ সোমবার । ব্লকের অন্যতম নেতা তথা প্রাক্তন ব্লক সভাপতি সুজন মণ্ডল সহ কর্মীসভায় উপস্থিত ছিলেন বর্ধমান শহর সভাপতি অভিজিৎ সিং, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি স্বরাজ ঘোষ, গলসি ২ নম্বর ব্লক যুব সভাপতি হেমন্ত পাল, মহিলা সভানেত্রী শেখ শাহনাজ বেগম, আইএনটিটিউসির সভাপতি সুবোধ ঘোষ, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি লিলি মোল্লা, পঞ্চায়েত সমিতির সকল সদস্য ও জেলা পরিষদ পরিষদের সদস্য, যুব নেতা বাপ্পা চ্যাটার্জ্জীও আশীষ চ্যাটার্জ্জী এবং সমস্ত শাখা সংগঠনের সভাপতিরা । তারা বসে জেতার গেমপ্লান তৈরি করেন । কর্মী সম্মেলনে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
বিধায়ক খোকন দাস বলেন,’আমি দলনেত্রীর নির্দেশে এখানে এসেছি। এই এলাকা থেকে দলের প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করার জন্য আগামী দু’তিন দিন দলের সমস্ত স্তরের নেতা-কর্মীদের প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। মাথায় রাখতে হবে সুজাতা দিদির স্নহধন্যা প্রার্থী।’
সুজনবাবু বলেন,’দলনেত্রীর হাত শক্ত করতে আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রচার করছি। দলীয় প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
বিদায়ী সাংসদ সৌমিত্র খান ২০১৪ সালে তৃণমূলের টিকিটে এই আসনটি প্রথম জিতেছিলেন এবং তারপরে ২০১৯ সালে বিজেপির টিকিটে জেতেন । তবে এবারে জেতার বিষয়ে আশাবাদী সুজাতা । সুজাতা মনে করেন যে তিনি “স্থানীয় মেয়ে” এবং তৃণমূলের উন্নয়নমূলক কাজ তার জয় নিশ্চিত করবে ৷ অন্যদিকে সৌমিত্র খাঁও নিজের আসন ধরে রাখার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী । এখন এই প্রাক্তন দম্পতির লড়াইয়ে কে জয়মালা পড়েন সেদিকেই তাকিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল ।।

