প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৭ মে : মহিষাসুর নিধনে উদ্যতা হওয়া দেবী মহিষমর্দিনীর মূর্তি মন্দির থেকে চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল চোর। আরাধ্য দেবীকে হারিয়ে বড়ই শোকাতুর হয়ে পড়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির মহিষডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দারা। বিষন্নতার আবহেই দেবীর মূর্তি ছাড়াই বৃহস্পতিবার মন্দিরে হয় দেবীর পুজো অর্চনা। এদিকে অষ্টধাতুর মূর্তিটি চুরি করেও দেবীর মাহাত্মের কথা জেনে সম্ভবত চোর বাবাজি মূর্তিটি আর অন্যত্র পাচার করার স্পর্ধা দেখাতে পারে না। শুক্রবার সকাল গ্রামের অদূরে নির্জন জায়গায় থাকা পুকুর পাড় থেকে দেবীর মূর্তিটি উদ্ধার হয়।সেই খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়তেই শঙ্খ ধ্বনি ও উলু ধ্বনিতে ভরে যায় গোটা গ্রাম। কাঁসর ঘন্টা আর বাদ্যি বাজিয়ে দেবীর মূর্তি এদিন মূল মন্দিরে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে ধূমধাম করে হল পূজো পাঠ ।
দেবী মহিষ্মর্দিনীর নামেই মেমারির মহিষডাঙ্গা গ্রামের পরিচিতি। গ্রামের মন্দিরেই অধিষ্ঠিতা থাকেন দেবী। নিয়ম মেনে তাঁর পুজো পাঠও হয় । দেবীর প্রতি এই গ্রামের প্রতিটি মানুষের অগাধ ভক্তি। মহিষ্মর্দিনী দেবীকে স্মরণ না করে এই গ্রামের কোন মানুষ কোনও শুভকর্মে সামিল হন না । এহেন দেবীর মন্দিরে মঙ্গলবার গভীর রাতে হানা দেয় চোর । তা নিয়ে মন্দির কমিটির সম্পাদক চিন্ময় যশ বুধবার মেমারি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন । পুলিশকে তিনি জানান,তাঁদের গ্রামের মহিষমর্দিনী মন্দিরের সেবায়েত
শ্যমলী বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার সকালে মন্দিরে গিয়ে দেখেন মন্দিরের দরজার তালা ভাঙা। সেবায়েত এও দেখেন মন্দিরের সিংহাসনে নেই দেবী মহিষমর্দিনীর অষ্টধাতুর মূর্তিটি।এছাড়াও পিতলের গোপাল ঠাকুরের মূর্তি এবং তার পিতলের সিংহাসনটিও মন্দিরে আর দেখতে পান না সেবায়েত।চোরেরাই মন্দিরে থেকে দেব দেবীর মূর্তি ও সামগ্রী চুরি করে নিয়ে গেছে বলে চিন্ময় বাবু পুলিশকে জানান ।
এদিকে পুজোর ঠিক আগের দিন মন্দির থেকে দেবী মহিষমর্দিনীর অষ্টধাতুর মূর্তি চোরেরা চুরি করে নিয়ে যাওয়ায় গ্রামের সকল মানুষজন শোকাতুর হয়ে পড়েন। পুজোতা আর বন্ধ রাখা যায় না,তাই ওইদিন দেবীর প্রতিকৃতি মন্দিরে রেখেেই হয় পুজো পাঠা । দেবীকে পুণরায় মন্দিরে ফিরে পাওয়ার জন্য গ্রামের মানুষজন প্রার্থনা করেন । অনেকে দেবীর জন্য কেঁদে ব্যাকুলও হন ।
দেবীর পুজো মেটার পর ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতে ঘটে যায় বিস্ময়কর ঘটনা।শুক্রবার সকালে গ্রামের অদূরে নির্জন জায়গায় থাকা পুকুর পাড়ের তাল গাছের নিচে একটি ব্যাগে ভরে রাখাা অবস্থায় অষ্টধাতুর মহিষমর্দিনী মূর্তিটি উদ্ধার হয়। দেবী মূর্তি উদ্ধার হওয়ার খবর জানাজানি হতেই গ্রামের সকলে উচ্ছাসে ফেঠে পড়েন। শঙ্খ ধ্বনি ও উলু ধ্বনি জোয়ার বইতে শুরু করে গ্রামে । কাঁসর ঘন্টা ও বাদ্যি বাজিয়ে চরম উল্লাসের সঙ্গে গ্রামের মানুষজন দেবীর মূর্তি পুকুরপাড় থেকে মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয় । পুঢরায় মন্দিরে শুরু হয় দেবীর পুজো পাঠ । পুজোপাঠ চলার সময় মন্দির চত্তরে আনন্দ উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন গ্রামের আট থেকে আশি সকল বাসিন্দা । বিকেলে মা মহিষমর্দিনীকে নিয়ে গ্রাম পরিক্রমণ করানো হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা । গ্রামের সবার বক্তব্য জাগ্রত দেবীর মাহাত্মের কথা জানতে পেরেই হয়তো চোর দেবী মহিষমর্দিনীর অষ্টধাতুর মূর্তি পাচারের স্পর্ধা হারিয়ে ফেলে। তাই চোরই পুকুর পাড়ে তাল গাছের নিচে দেবীর মূর্তিটি ফেলে রেখে পালানো ছাড়া আর পথ পায়নি ।
দেবী মূর্তি উদ্ধারর হওয়ার খবর পেয়ে মেমারি থানার পুলিশ এবং স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানও সেখানে পৌছায় ।গ্রামবাসীদের কথা অনুযায়ী,পুলিশ মূর্তি চরির ঘটনায় জড়িত চরে ধরার আশ্বায় দিয়েছে । আর পঞ্চায়েত প্রধান মন্দির সংলগ্ন জায়গায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও বাতি স্তম্ভ বসানোর আশ্বাস দিয়ে গেছেন।।