এইদিন ওয়েবডেস্ক,১৭ মে : ১৯৬৮ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে যশোদাবেনের সঙ্গে বিয়ে হয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। বিয়ের কিছুদিন পরে যশোদাবেনকে ছেড়ে তিন বছরের জন্য সন্ন্যাসব্রত পালনের উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগ করেন তিনি । পরবর্তী জীবনের কিছু সময় তিনি তার কাকার ব্যবসায় কাজ শুরু ও সরকারি অফিসে চাকরি করেন । পরে পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের প্রচারকের দ্বায়িত্ব পালন করে৷ আরপর আর সংসারে ফিরে আসেননি মোদী । এই বিষয়ে প্রকাশ্য জনসভায় নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে প্রায়শই কটাক্ষ করতে শোনা যায় কংগ্রেসকে । কিন্তু কংগ্রেস যাকে নিজেদের আদর্শ বলে ভাবে সেই জওহরলাল নেহরু তার স্ত্রীর সাথে যা করেছিলেন তা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে তা জানার পরে নেহরু সম্পর্কে আপনাদের ধারনার আমূল পরিবর্তন ঘটবে ৷
জওহরলাল নেহরু ১৯১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী কমলা কাউলকে বিয়ে করেন । ১৯১৭ সালের নভেম্বরে তাদের একমাত্র কন্যা ইন্দিরার জন্ম হয় । কমলা ১৯২৪ সালের নভেম্বরে একটি ছেলের জন্ম দিয়েছিলেন, তবে সে মাত্র এক সপ্তাহ বেঁচে ছিল । ছেলের মৃত্যুর কয়েক বছর পর জওহরলাল নেহরুর স্ত্রী কমলা নেহরু টিউবারকিউলোসিস (টিবি) রোগে আক্রান্ত হন… সেই সময়ে, টিবি-র ভয় ছিল ঠিক আজকের এইডস-এর ভয়ের মতো… কারণ তখন টিবির কোনও নিরাময় ছিল না এবং মানুষ যন্ত্রণা ও কষ্টের মধ্যে বসবাস করত। শেষ মুহুর্তে দেহ কঙ্কালসার হয়ে মারা যেত রোগী । কেউ টিবি রোগীর কাছেও যেত না কারণ টিবি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়ায়… মানুষ পাহাড়ি এলাকায় তৈরি টিবি স্যানিটোরিয়ামে রোগীদের ভর্তি করত ।
নেহেরু তার স্ত্রীকে, অন্য একজনের সাথে, যুগোস্লাভিয়া বা আজকের চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগের একটি স্যানিটরিয়ামে ভর্তি করেছিলেন। সেখানে কমলা নেহেরু দশ বছর ধরে মৃত্যুর প্রহর গুনে গেছেন । এদিকে তখন দিল্লিতে এডউইনা মাউন্টব্যাটেন সঙ্গে জহরলাল নেহেরুর উদ্দাম প্রেম চলছে । সবচেয়ে লজ্জাজনক ব্যাপার হল এই সময়ে নেহেরু বেশ কয়েকবার ব্রিটেনে গিয়েছিলেন কিন্তু একবারও স্ত্রীর খোঁজখবর নিতে তিনি প্রাগে যাননি।
নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু যখন বিষয়টি জানতে পারেন, তিনি প্রাগে যান এবং ডাক্তারদের সাথে উন্নত চিকিৎসার কথা বলেন… প্রাগের চিকিৎসকরা জানান যে সুইজারল্যান্ডের বুসান শহরে একটি আধুনিক টিবি হাসপাতাল রয়েছে যেখানে তাকে নিয়ে গেলে ভালো চিকিৎসা পাওয়া যেত । তৎক্ষণাৎ নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু সেই সময় ৭০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন এবং তাকে বিমানে করে সুইজারল্যান্ডের বুসান শহরের হাসপাতালে ভর্তি করেন।
কিন্তু স্বামীর ব্যবহারে কমলা নেহরু খুব আঘাত পেয়েছলেন । তিনি এই কারনে দুঃখ পেয়েছিলেন যে তার স্বামী গত দশ বছরে তার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে একবারও তার কাছে আসেননি এবং অপরিচিতরা তার যত্ন নিচ্ছেন… সেখানে ২০ দিন ভর্তি থাকার পর,১৯৩৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী,মাত্র ৩৬ বছর বয়সে কমলা নেহরু বুসানে মারা যান । তাঁর মৃত্যুর দশ দিন আগে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র নেহরুকে একটি টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলেন যাতে তিনি নেহেরুকে অবিলম্বে বুসানে আসতে বলেন… কিন্তু নেহরু আসেননি… তারপর তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর খবর নেহেরুর কাছে পাঠানো হয়… তবুও নেহরু থেকে যান ইংল্যান্ডে,কিন্তু স্ত্রীকে শেষ দেখাও দেখতে জাননি । বাধ্য হয়ে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু সুইজারল্যান্ডের বুসান শহরে নেহরুর স্ত্রী কমলা নেহরুর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন।
স্ত্রীর মৃত্যুর ২৮ বছর পর,১৯৬৪ সালের ২৭ মে জহরলাল নেহেরুর মৃত্যু হয় । পাবলিক ডোমেনে দাবি করা হয় যে ওইদিন সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নাকি মৃত্যু হয়েছিল নেহেরুর । নেহরুর মৃত্যুর কারণকে করোনারি থ্রম্বোসিস বলে বর্ণনা করা হয়েছে । কিন্তু কেউ কেউ দাবি করেন যে হৃদরোগে নয়,বরঞ্চ তিনি যৌন সংক্রমণ জনিত রোগ ‘সিফিলিস’-এ মারা গেছেন । কারন নেহেরু স্ত্রীদের প্রতি আসক্তি ছিল এবং এযাবৎ গান্ধী-নেহেরু পরিবার বা কংগ্রেস নেহেরুর রোগের প্রকৃত কারন এবং ডেথ সার্টিফিকেট প্রকাশ্যে আনেনি । নেহরুর মৃত্যুর পর, কিছু নেহরু-পন্থী সমর্থক যৌন রোগের বিতর্ককে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বেশ কয়েকটি নিবন্ধ সামনে নিয়ে এসে প্রমান করতে মরিয়া চেষ্টা শুরু করে । তাসত্ত্বেও বিগত কয়েক দশক ধরে নেহেরুর রোগের বিষয়টি বেশ উল্লেখযোগ্যভাবে বিতর্কিত এবং আলোচিত হয়েছে।
রাজীব দীক্ষিত নামে একজন ইউটিবার ২০১৭ সালে তাঁর একটি প্রতিবেদনে নেহেরু, মোহাম্মদ জিন্নাহ এবং ভারতের শেষ ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেনের স্ত্রী এডউইনা মাউন্টব্যাটেন সম্পর্ক নিয়ে চমকপ্রদ দাবি করেছিলেন । তিনি দাবি করেছিলেন যে নেহেরু এবং জিন্নাহ উভয়ের সাথেই এডউইনার শারিরীক সম্পর্ক ছিল। তিনি আরও বলেন যে লেডি মাউন্টব্যাটেন নেহরুকে ব্ল্যাকমেল করেছিলেন ভারত বিভাজনের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করার জন্য কারণ তার কাছে নেহেরুর কিছু অশ্লীল ছবি ছিল । রাজীব দীক্ষিতের অনুমান সম্পর্কে কোনো প্রমাণ না থাকলেও এটা সত্য যে লেডি মাউন্টব্যাটেনের কারণে পণ্ডিত নেহরুর চরিত্রের ওপর বারবার আঙুল তোলা হয় ।
বছরের পর বছর ধরে, দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে, যা এডউইনার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। নেটফ্লিক্সে ‘দ্য ক্রাউন’ নামে একটি সিরিজও রয়েছে যা তাদের সম্পর্কের বিষয়ে বিবরণ আছে । এডউইনার মেয়ে পামেলা পর্যন্ত স্বীকার করেছিলেন যে তার মা এবং নেহরুর মধ্যে শারিরীক সম্পর্ক ছিল । ডঃ বেদিকা নামে একজন টুইটার ব্যবহারকারী ২০১৯ সালে একটি টুইটে দাবি করেছিলেন যে নেহেরুর মৃত্যুর কারন “সিফিলিটিক অ্যাওরটিক অ্যানিউরিজম” । এই রোগের শেষ পরিনতি হৃদরোগ । এমনকি নেহেরু এবং লেডি মাউন্টব্যাটেন মারা যাওয়ার পরিস্থিতির মধ্যে মিলও ছিল বলে তিনি দাবি করেন । যাই হোক, নেহেরুর রোগ নিয়ে বিতর্ক ধামা চাপা দিয়ে লেডি মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে তার আধ্যাত্মিক সম্পর্কের তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টা করে কংগ্রেসের কিছু নেতা । তবুও আজও এনিয়ে বিতর্ক রয়েই গেছে ।।