এইদিন ওয়েবডেস্ক,পূর্ব মেদিনীপুর,১৬ মে : আজ বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরার জে এল স্কুল মাঠে দলীয় প্রার্থী সমর্থনে জনসভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । জনসভাতে তিনি বলেছেন ‘পুরি থেকে বড় মন্দির বানাবো দিঘায়’ । মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি পাল্টা মন্তব্য করেছেন, ‘আবোল তাবোল বকছে, মহাপ্রভু জগন্নাথদেব ওনাকে সুবুদ্ধি দিন’ । মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ভিডিওর ক্লিপিং নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেজে পোস্ট করেছেন শুভেন্দু ।
ওই ভিডিওতে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গেছে, ‘আপনারা জানেন তো, পুরীর মত বড় মন্দির তৈরি হচ্ছে দিঘাতে ? কি দেখেছেন? যাবেন কিন্তু যেদিন উদ্বোধন হবে । আমরা অসম্পূর্ণ কাজ করি না, রাজনীতিতে ছবি তোলার জন্য৷ আমাদের ঠাকুরও এসে গেছে । যেহেতু এখন ইলেকশন, আমি এখন করবো না, আমার কিছু কাজ বাকি আছে । ইলেকশনের পর ওটা তৈরি হয়ে গেলে আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে দেখাবো যে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের থেকে এটা আরো বড় মন্দির হয়েছে এবং ভোগ ঘর থেকে শুরু করে সবকিছু ।’
মমতা ব্যানার্জি এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন, ‘সারা বিশ্বের অনেকেরই মত বাঙালির প্রাণের শহর উৎকলের শ্রীক্ষেত্র; পুরীর জগন্নাথ ধাম সনাতন ধর্মের অন্যতম পীঠস্থান। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জগন্নাথ অবতারে পুরীর মন্দিরে অধিষ্ঠান করেন, সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের বড় ভাই বলভদ্র এবং ছোট বোন সুভদ্রাও একই আসনে অধিষ্ঠান করেন। পুরীর রথযাত্রা উপলক্ষে কার্যত জনসমুদ্রে পরিণত হয় রাজপথ, রথ টানার জন্য জনপ্লাবন সৃষ্টি হয় প্রতি বছর। কয়েক শতাব্দী পূর্বে নির্মিত অলৌকিক এই মন্দিরের সঙ্গে কত আশ্চর্যজনক ঘটনা জড়িত তার ব্যাখ্যা বিজ্ঞান ও দিতে ব্যর্থ। যেমন মন্দিরের চূড়ায় যে পতাকা লাগানো থাকে, সবসময় যে দিকে হাওয়া চলে তার বিপরীত দিকে পতাকাটি ওড়ে। জগন্নাথ দেবের মন্দির প্রায় ৪ লক্ষ বর্গফুট এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এবং ২১৪ ফুট উঁচু, অথচ এই মন্দিরের চূড়ার কোনও ছায়া দেখা যায় না।
মন্দিরের চূড়ায় একটি চক্র লাগানো রয়েছে, যে কোনও প্রান্ত থেকে ওই চক্রের দিকে তাকান, মনে হবে চক্রটি আপনার দিকেই ঘোরানো। চক্রটির ওজন প্রায় এক টন। ১২ শতকে মন্দির নির্মাণের সময় চূড়ায় কিভাবে বসানো হয়েছিল, তা এক রহস্য, কারণ সেই সময় প্রযুক্তি কতটা উন্নত ছিল তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।জনশ্রুতি, লোকগাথা, পৌরাণিক কাহিনী ও ইতিহাসের আবরণে মোড়া প্রাচীন ধর্মীয় তীর্থক্ষেত্র; পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের থেকেও নাকি “বড় মন্দির” বানাচ্ছেন মাননীয়া ! দম্ভ যখন মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে তখন মানুষ আবোল তাবোল বকে। মহাপ্রভু জগন্নাথ দেব ওনাকে সুবুদ্ধি প্রদান করুন এই প্রার্থনা করি। জয় জগন্নাথ ।’
প্রসঙ্গত,উড়িষ্যার পুরী হলো হিন্দুদের একটি পবিত্র তীর্থস্থান । পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দির দর্শন এবং সমুদ্র সৈকতের টানে প্রতিবছর পশ্চিমবঙ্গ থেকে হাজার হাজার পর্যটক যায় । পশ্চিমবঙ্গেও এমন একটি সম্ভাবনাময় সমুদ্র সৈকত রয়েছে যা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে । আর সেটা হল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্যতম জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকত দিঘা । কিন্তু বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের জমানায় দিঘার সমুদ্র সৈকত উপেক্ষিত ছিল । ২০১১ সালে মমতা ব্যানার্জি রাজ্য ক্ষমতা আসার পর দিঘাকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় গড়ে তুলতে একাধিক উদ্যোগ নেন । তার মধ্যে অন্যতম হলো মহাপ্রভু জগন্নাথ দেবের মন্দির নির্মাণ । নিউ দিঘা স্টেশন সংলগ্ন নন্দকুমার ১১৬ বি জাতীয় সড়কের পাশে এই মন্দিরটি তৈরি হচ্ছে।২০১৮ সালে এই মন্দির নির্মাণের কথা ঘোষণা করে রাজ্য সরকার । বরাদ্দ করা হয় ২০০ কোটি টাকা । রাজস্থান থেকে বেলেপাথর আনা হয়েছে এই মন্দিরটি তৈরির জন্য । ইতিমধ্যেই কাজ প্রায় শেষের দিকে । মুখ্যমন্ত্রীর আজকের ঘোষনা অনুযায়ী, আশা করা যাচ্ছে যে চলতি বছরেই মন্দিরের উদ্বোধন হবে ।।