এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,১৫ মে : বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার মতই ইসলামের নবীর ৬ বছরের শিশুকন্যাকে বিয়ে করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রী তিথি সরকার (Tithi Sarkar) । ওই হিন্দু তরুনীর বিরুদ্ধে ওঠে ধর্মনিন্দার অভিযোগ। আর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (১৩ মে) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জুলফিকার হায়াত তিথিকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে । পাশাপাশি এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের একজন প্রবেশন কর্মকর্তার পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে তাঁকে । শুধু তাইই নয়, ওই হতভাগ্য ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ।
বাংলাদেশের আইন অনুসারে প্রবেশন হলো, আদালতের দেওয়া কিছু শর্ত মেনে চললে প্রথম অপরাধের শাস্তি মকুব করা হয় । প্রবেশন কর্মকর্তা যদি সাজাপ্রাপ্ত আসামির আচরণ সন্তোষজনক মর্মে প্রতিবেদন দেন, তবে আসামির কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে না । অন্যদিকে, প্রবেশন কর্মকর্তা সাজাপ্রাপ্ত আসামির আচরণ অসন্তোষজনক মর্মে যদি প্রতিবেদন দেন তাহলে প্রবেশন বাতিল ও প্রদত্ত শাস্তি ভোগ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিশেষ পিপি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম শামীম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ।
২০২০ সালের ৫ নভেম্বর আবু মুসা রিফাত নামে এক ব্যক্তি ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে তিথি সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মনিন্দার অভিযোগ তুলে একটি মামলা দায়ের করেছল । তার অভিযোগ ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাদের নবীর সম্পর্কে কটূক্তি করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন ওই হিন্দু তরুনী । ওই ব্যক্তি অভিযোগে জানায় যে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তিথি সরকার গত ১৬ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে ধর্মানুভূতিতে আঘাত ও কটূক্তি করেছেন।
এরপর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তিথি সরকারকে গ্রেপ্তার করে। তখন তিনি ২১ মাস কারভোগ করেন । পরে জামিনে মুক্তি পান । ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগ তুলে তিথিকে তার সংগঠন ‘ছাত্র অধিকার পরিষদ’ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই অভিযোগে ওই বছর ২৬ অক্টোবর রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত আদেশে তিথি সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারও করা হয়।
উল্লেখ্য,ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী তিথি সরকার ‘বিশ্ব হিন্দু সংগ্রাম’ কমিটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একজন গুণমুগ্ধ ভক্ত । এই কারনে ২০২০ সালে তাকে হত্যার হুমকি দেয় বাংলাদেশের কট্টরপন্থী মুসলিমরা । ওই বছর ১৭ মার্চ নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের আগে হিন্দুদের উপর ব্যাপক হামলাও চালায় কট্টর ইসলামিরা । এমনকি চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায় মোদী বিরোধী প্রতিবাদ সভায় জুমার নামাজের পর প্রকাশ্যে হিন্দু মন্দিরে ভাঙচুর ও আগুন ধরানোর নির্দেশও দিয়েছিল ইসলামী সংগঠনের নেতারা । বেশ কয়েকটি মন্দিরে হামলা ও কয়েকজন হিন্দু যুবককে হত্যার চেষ্টাও হয় ।হবিগঞ্জ জেলায় এক মুসলিম জঙ্গি ৫ জন হিন্দু যুবকের উপর ছুরি দিয়ে হামলা চালায় । আহতরা প্রাণে বেঁচে গেলেও বেশ কিছুদিন হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতে হয় ।
এই ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিশ্ব হিন্দু সংগ্রাম কমিটির (World Hindu Struggle Committee) সভাপতি বাংলাদেশের ইসলামি মৌলবাদীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে ফেসবুকে লিখেছিলেন,’আমি সব কট্টরপন্থীদের বলতে চাই, দিল্লির শাহিনবাগকে কেন্দ্র করে কেউ বাংলাদেশে দাঙ্গা করার চেষ্টা করবেন না। কাপুরুষের মত কাজ করলে বাংলাদেশে কী হবে জানি না। তবে আপনাদের জানা উচিত, হিন্দুরা এখন একা নয়। হিন্দুরা ইহুদি ও দ্রুজদের সাথে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপন করেছে। তারা যেকোনো সংকটময় পরিস্থিতিতে আমাদের সঙ্গে থাকবে । তাই উগ্রবাদী মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা হিন্দুদের আছে। তাই যত্ন নিন এবং কাপড় অনুযায়ী কোট কাটুন।’।