রাহুল রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১৪ মে : দেবী সতীর একান্ন পীঠের মধ্যে অন্যতম পীঠ হচ্ছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রাম । দেবীর শিলামূর্তি সারাবছর মন্দিরের অদূরে ক্ষীরদিঘি নামে পরিচিত একটি জলাশয়ের জলে নিমজ্জিত রাখা হয় । শুধুমাত্র বৈশাখ মাসের শেষ দিনে দেবীকে জল থেকে তুলে মূল মন্দিরে আনা হয় । এই দিনেই দেবীকে দর্শন বা স্পর্শ করা যায় । দেবীকে দর্শন করার জন্য কাতারে কাতারে পূণ্যার্থীরা ভিড় জমায় ক্ষীরগ্রামে । আজ ৩১শে বৈশাখ, মঙ্গলবার ছিল সেই পূণ্য তিথি । দেবীকে এক ঝলক দর্শনের জন্য ক্ষীরদিঘি ও দেবী যোগাদ্যোর মন্দিরে লক্ষাধিক পূণ্যার্থী ভিড় জমায় ।
মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রামের মা যোগাদ্যাকে জাগ্রত দেবী বলে মনে করা হয় । রামায়ণে উল্লিখিত মহীরাবণের আরাধ্যা দেবী ভদ্রকালী হিসেবেই এখানে পূজিতা হন দেবী । দেবী এখানে রত্নবেদীতে কালীমন্ত্রে পূজিতা হন। থাকে আমিষ ভোগ। কথিত আছে মহীরাবণকে কৌশলে বধ করে হনুমান যখন ফিরে আসছিলেন, সেই সময় মহীরাবণের আরাধ্যা দেবী ভদ্রকালী রামচন্দ্রের সঙ্গে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন । সেই সময় তিনি, হনুমানের কাঁধে চেপে এসেছিলেন মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রামে । সেই থেকে এই সতীপীঠে দেবী ভদ্রকালীই নামে পূজিতা হয়ে আসছেন দেবী যোগাদ্যা । পণ্ডিত রঘুনন্দন গোস্বামীর পরম ভাগবতে এর উল্লেখ পাওয়া যায় । কথিত আছে এই সতীপীঠে দেবীর ডান পায়ের বুড়ো আঙুল পড়েছিল। দাবি করা হয় যে এই পুজো চলছে ১,৫০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে । মূল মন্দিরের সংস্কার, ক্ষীরদিঘির মাঝে নতুন মন্দির নির্মান ও মন্দির সংলগ্ন এলাকার সৌন্দার্যয়নের কাজ হয় ২০১১ সালে ।
দেখুন ভিডিও 👇
ক্ষীরগ্রামের মা যোগাদ্যার মূর্তি হল কষ্টি পাথরের মহিষাসুরমর্দিনী রূপ । আজ দেবীকে ক্ষীরদিঘি থেকে তুলে মূল মন্দিরে এনে ধুমধাম সহকারে পূজো করা হল । দেবীকে দেখতে এদিন কাতারে কাতারে ভক্তদের ঢল নামে। গোটা গ্ৰামে শুরু হয়েছে উৎসব। মেলা বসেছে । মা যোগাদ্যাকে দেখতে রাজ্যোর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু ভক্তদের সমাগম হয়েছে। পুজো ঘিরে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে । নির্ঘন্ট মেনে বৈশাখ মাসের সংক্রান্তিতে জল থেকে তুলে পুজো দিয়ে আবার জলে ডুবিয়ে রাখা হয় দেবী মূর্তিকে । দেবীর পূজো উপলক্ষে চার দিন ধরে উৎসব চলে ক্ষীরগ্রামে ।।