প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৬ জুন : বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে শুভেন্দু অধিকারীর হাতধরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন সাংসদ সুনীল মণ্ডল । তার পর ভোটের প্রচারে নেমে তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে লাগাতার হুঁশিয়ারীও দিয়ে গিয়েছিলেন। বিধানসভা ভোটে বিজেপির ভরাডুবির পর বর্ধমান পূর্বের সেই সাংসদ সুনীল মণ্ডল-ই এখন বেসুরো ।
শোনা যাচ্ছে তিনি নাকি ফের তৃণমূল কংগ্রেসে ফেরার জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন । নিজের লোকসভা এলাকার বিভিন্ন ব্লকের তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের তিনি এখন ফোনও করছেন ।ফোনকরে তিনি তাদের অনুরোধ করছেন তাঁকে তৃণমূলে ফেরানোর ব্যাপারে দলের কাছে সুপারিশ করার জন্যে । যদিও বর্ধমান পূর্ব লোকসভা এলাকার সকল তৃণমূল নেতা কর্মী ও বিধায়করা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সুনীল মণ্ডল একজন আদর্শহীন সুবিধাবাদী রাজনীতির ব্যাপারী ।দলনেত্রী যাতে আর কোনও দিন সুনীল মণ্ডলকে তৃণমূলে জায়গা না দেয় ।
ভোল বদলু সুনীল মণ্ডল মঙ্গলবার বর্ধমানের
সাংবাদিকদের মুখোমুখি প্রথমে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন । তিনি বলেন ,শুভেন্দু তাঁকে বিজেপিতে যোগদান করানোর আগে যা যা প্রতিজ্ঞা করেছিল তার একটাও মানেনি । একই সঙ্গে বলেন, তৃণমূল থেকে যারা বিজেপিতে গিয়েছে তাঁদের কে বিজেপি নেতারা সহ্য করতে পারে না ।ভেটের প্রচারে প্রবাসী যেসব বিজেপি নেতারা বাংলায় এসেছিলেন তাঁদের রাজনৈতিক জ্ঞানও ছিলনা বলে সুনীল বাবু মন্তব্য করেন ।
এরপর আধঘন্টার মধ্যে ফের ভোলবদল করেন সাংসদ সুনীল মণ্ডল।ফের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি তথাগত রায়ের কথা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ।একইসাথে তিনি জানান,শুভেন্দুকে নিয়ে তার নতুন আর কিছু বলার নেই।মুকুল রায়ের সিদ্ধান্ত তার নিজের। তবে ৩৫৬ ধারা নিয়ে যারা বেশি নাড়াচাড়া করতে চাইছেন সেটা ঠিক হচ্ছেনা। দুই তৃতীয়াংশ মানুষের বেশি সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। সেটাকে তিনি সম্মান জানাতে চান ।সুনীল বাবু আপনি কি এখন বেসুরো? এই প্রশ্নে সুনীল বাবু সরাসরি কিছু বলেন নি।এই ভাবেই তৃণমূলে ফেরার জল্পনা জিইয়ে রাখলেন সুনীলবাবু । রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল বলছে ,বারবার দল বদল করে এখন জনমানসে সুনীল মণ্ডল নিজেই “ত্রিশঙ্কু “।
এদিকে সুনীল মণ্ডল তৃণমূলে ফেরার জল্পনা তৈরি হতেই বর্ধমান পূর্ব লোকসভার বিভিন্ন ব্লকের তূণমুল নেতারা প্রতিবাদে স্বোচ্চার হয়েছেন ।রায়না ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বামদেব মণ্ডল বলেন ,“ সুনীল মণ্ডল আসলে একজন রাজনীতির ব্যাপারী ।ওনার নীতি আদর্শ বলে কিছু নেই ।উনি গিরগিটির থেকেও উন্নত প্রজাতির প্রাণী বলেই রায়নার তৃণমূল কর্মীরা মনে করে ।বিজেপিতে যোগ দিয়ে সুনীল মণ্ডল প্রকাশ্য জনসভা মঞ্চ থেকে যে ভাষায় তৃণমূলের নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে বদলা নেওয়ার হুঁশিয়ারী দিয়েছিলেন তা কেউ ভোলেনি ।অথচ এখন উনি বিভিন্ন ব্লকের তৃণমূল নেতাকে ফোন করে তৃণমূলে ফেরার ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ করে চলেছেন । গদ্দার সুনীল মণ্ডলকে যাতে দলে কোনও ভাবেই আর জায়গা দেওয়া না হয় তার আবেদন দলের উচ্চ নেতৃত্বের কাছে রাখবেন বলে বামদেব মণ্ডল জানান“ । মেমারি বিধানসভার তৃণমূল নেতারাও এদিন সুনীল মণ্ডলকে নিয়ে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ।
অন্যদিকে জামালপুর বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক অলোক মাঝি বলেন,“ সুনীল মণ্ডল নীতি আদর্শহীন রাজনীতিক ।উনি নিজে যে এলাকায় বসবাস করেন সেখানেও ওনার কোন জনভিত্তি নেই ।সেখানেও বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে । বিজেপি গো- হারা হরেছে বলেই এখন সুনীল মণ্ডল বেসুরো গাইছেন ।
কারণ উনি ক্ষমতা লোভী । জামালপুরের তৃণমূলের কোনও কর্মী সমর্থক চান না ওনার মত গদ্দার ফের তৃণমূলে জায়গা পাক “। একই ভাবে কাটোয়ায় তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন,“ভোটের সময়ে প্রকাশ্য জনসভা থেকে তাঁর নাম করে সুনীল মণ্ডল হুঁশিয়ারী দেয় ।সুনীল মণ্ডল নিদান দিয়েছিলেন, ’ভোটের ফল সম্পূর্ণ প্রকাশের আগেই রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় কে ঘিরে ধরে ফেলতে হবে । যাতে আমি পালাতে না পারি ।
ওই দিনই জনআদালতে আমার বিচার করবেন বলে সুনীল মণ্ডল হুঁশিয়ারী দিয়েছিলেন ’। রবিবাবু বলেন , এখন সুনীল মণ্ডল ভোল বদলাচ্ছে দেখে তিনিও বিস্মিত । তবে ওনার মতো বিশ্বাস ঘাতকে কাটোয়ায় তৃণমূলের কেউ মেনে নেবেন না।’ তৃণমূলের রাজ্যের মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন , “সুনীল মণ্ডলের সাংসদ পদ খারিজের জন্য তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভার স্পিকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন । তৃণমূলের সকল কর্মী ও সমর্থকরা চাইছেন সুনীল মণ্ডলের সাংসদ পদ খারিজ হোক । সুনীল বাবুকে বলবো তৃণমূলে ফেরার স্বপ্ন ছেড়ে দিয়ে ওনি বিজেপিতেই থাকুন ।’
জেলা বিজেপি নেতারা সুনীল মণ্ডলের বক্তব্য নিয়ে কোন গুরুত্ব দিতে চান নি ।।