এইদিন ওয়েবডেস্ক,আবুজা(নাইজেরিয়া),১৪ মে : ইসলামি ফুলানি পশুপালকরা রবিবার (৫ মে ২০২৪) নাইজেরিয়ার দক্ষিণ কাদুনা রাজ্যের একটি গ্রামে নাশকতা চালিয়ে ৬ খ্রিস্টানকে হত্যা করেছে। আহত হয়েছে আরও অন্তত ৮ জন । মধ্যরাতে সাঙ্গা কাউন্টির খ্রিস্টান আম্বে গ্রামের বাসিন্দারা যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন বিপুল সংখ্যক ইসলামি ফুলানি পশুপালকরা হামলা চালায় । সন্ত্রাসীদের অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারাল অস্ত্রে সজ্জিত ছিল । স্থানীয় বাসিন্দা জাকারিয়া সাঙ্গা ক্রিশ্চিয়ান ডেইলি ইন্টারন্যাশনাল-মর্নিং স্টার নিউজকে বলেছেন, সন্ত্রাসীরা ঘরবাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি এবং পালানোর চেষ্টা করা গ্রামবাসীদের কুপিয়ে হত্যা করে।’ ছয় খ্রিস্টান নিহত হওয়া ছাড়াও আরও আটজন আহত হয়েছেন বলে তিনি জানান।
নাইজেরিয়ার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য ড্যানিয়েল আমোস সোমবার (৬ মে ২০২৪) একটি প্রেস বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছেন যে ছয়জন নিরপরাধ মানুষ নিহত হয়েছেন এবং আরও আটজন আহত হয়েছেন । আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে ।আমোস বলেন,’আমি এই জঘন্য কাজের তীব্র নিন্দা করছি, যা আমার নির্বাচনী এলাকা এবং আমাদের প্রিয় রাজ্যের শান্তি ও নিরাপত্তাকে অস্থিতিশীল করার আরেকটি প্রচেষ্টা। এটা অগ্রহণযোগ্য যে আমাদের জনগণ এই অপরাধীদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ভয় ছাড়া শান্তিতে থাকতে পারে না।’ বিধায়ক নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে কাদুনা রাজ্যে খ্রিস্টানদের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন,’আমি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে তারা এই ঘৃণ্য কাজের অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে এবং তাদের বিচারের আওতায় আনতে। আমাদের জনগণের নিরাপত্তাকে অবশ্যই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমরা অপরাধীদের দায়মুক্তির সাথে কাজ চালিয়ে যেতে দিতে পারি না।’ পাশাপাশি কাদুনা রাজ্য পুলিশ কমান্ডের মুখপাত্র মানসির হাসান একটি প্রেস বিবৃতিতে বলেছেন যে গ্রামবাসীরা একজন হামলাকারীকে আটক করেছে এবং পুলিশ তদন্ত করছে।
ওপেন ডোরস-এর ২০২৪ ওয়ার্ল্ড ওয়াচ লিস্ট (WWL) রিপোর্ট অনুসারে, নাইজেরিয়া খ্রিস্টকে অনুসরণ করার জন্য বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক স্থান হিসাবে চিহ্নিত রয়ে গেছে । ২০২২ সালের পয়লা অক্টোবর, থেকে ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য ৪,১১৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় খ্রিস্টানদের বেশি অপহরণের ঘটনা নাইজেরিয়ায় ঘটেছে, যার সংখ্যা ৩,৩০০। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গির্জা এবং অন্যান্য খ্রিস্টান ভবন যেমন হাসপাতাল, স্কুল এবং কবরস্থানে হামলার সংখ্যায় নাইজেরিয়া তৃতীয় সর্বোচ্চ দেশ ছিল, যার সংখ্যা ৭৫০। সংস্থার ২০২৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের যে দেশগুলিতে খ্রিস্টান হওয়া সবচেয়ে কঠিন, নাইজেরিয়া সেই তালিকার ৬ নম্বরে ছিল, যেমনটি আগের বছরের মতো ছিল।
নাইজেরিয়া এবং সাহেল জুড়ে লক্ষাধিক সংখ্যায়, মুসলিম ফুলানির পশুপালকের শত শত চরমপন্থী গোষ্ঠী রয়েছে । ওই গোষ্ঠীগুলির সিংহভাগই নাশকতার সঙ্গে যুক্ত । যুক্তরাজ্যের সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপ ফর ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিডম বা বিলিফ (এপিপিজি) ২০২০ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে,তারা বোকো হারাম এবং আই এস ডবলু পি-এর মত কুখ্যাত ইসলামি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির সাথে তুলনামূলক কৌশল গ্রহণ করে এবং খ্রিস্টানদের এবং খ্রিস্টান পরিচয়ের শক্তিশালী প্রতীকগুলিকে মূলত নিশানা করে ।
নাইজেরিয়ার খ্রিস্টান নেতারা বলেছেন, তারা বিশ্বাস করেন যে নাইজেরিয়ার মধ্যাঞ্চলে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপর ইসলামি পশুপালকদের আক্রমণ খ্রিস্টানদের জমি জোর করে দখল করার এবং ইসলাম চাপিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা থেকে অনুপ্রাণিত । কারণ দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে গোচারণ ভূমি ক্রমশ সীমিত হয়ে যাওয়ায় পশুপালকে টিকিয়ে রাখা কঠিন করে তুলেছে।।