এইদিন ওয়েবডেস্ক,নিউ ইয়র্ক,১২ মে : ২০২২ সালে ইরানের রাজধানী তেহরানে ২২ বছরের কুর্দি তরুণী মাহাসা আমিনিকে পিটিয়ে মেরেছিল ইরানের নৈতিকতা পুলিশ । ওই তরুণীর অপরাধ ছিল যে তিনি সরিয়া আইন অনুযায়ী যথাযথভাবে নিজের চুল ঢেকে রাখেনি । আমিনির হত্যাকাণ্ডের পর কবে ফুঁসে ওঠে ইরান । হিজাব পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখায় ইরানি মেয়েরা । ২০২২ সাল থেকে এ যাবৎ কয়েক হাজার ইরানি মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে হিজাব বিধি না মেনে চলার জন্য । আর যার নির্দেশে এই নরসংহার চলেছে তিনি হলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু তথা শরিয়া রক্ষক আয়াতুল্লাহ খামেনি(Ayatollah Khamenei)
এদিকে আয়াতুল্লাহু খামেনির নাতনি নাঈমেহ এশরাঘির (Naeimeh Eshraghi) একটা ভিডিও ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় । ভিডিওতে খামে নিন নাতনিকে মিনি স্কার্ট ও হাই হিল জুতী পরে গাড়ি থেকে নেমে একটি ভবনের ভিতরে ঢুকে যেতে দেখা গেছে । তার আসার খবর পেয়ে আগে থেকেই সেখানে জড়ো হয়েছিল কয়েকজন ইরানি বংশোদ্ভূত নারী ও পুরুষ । তারা খামেনির নাতনির উদ্দেশ্যে ‘গো ব্যাক’ শ্লোগান তুলে বলেন,’দেখুন খামেনির নাতনি কী পরেছে যখন ইরানে হিজাবের কারণে আমাদের কন্যাদের হত্যা করা হচ্ছে ।’ ‘প্রত্যেক মোল্লা এবং তাদের আত্মীয়রা জঘন্য নোংরা ভন্ড’ বলেও তারা মন্তব্য করেছেন । বলা হচ্ছে যে নাঈমেহ এশরাঘির মেয়ে নাইমা তাহেরি (Naima Taheri) নিউ ইয়র্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে তাকেও মিনি স্কার্ট করে দেখা যায় । কিন্তু তার ফটোশপ করা হিজাব পরিহিত ছবি ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়৷ যদিও সেই চালাকি ধরে ফেলে ব্যবহারকারীরা ।
এদিকে আয়াতুল্লাহ খামেনির নির্দেশে ইরানি কর্তৃপক্ষ মহিলাদের উপর বাধ্যতামূলক হিজাব বিধি প্রয়োগ করতে হিংসাত্মক কৌশল এবং আক্রমণাত্মক নজরদারির সংমিশ্রণ ব্যবহার করছে। এটি সরকারের “নূর পরিকল্পনা” বাস্তবায়নের সাথে মিলে যায়, যার লক্ষ্য মহিলাদের পোশাকের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা। সাম্প্রতিক ৩৫ তম তেহরান আন্তর্জাতিক বইমেলায়, প্রত্যক্ষদর্শীরা হিজাব পরিধান না করা মহিলাদের লক্ষ্য করার জন্য ক্যামেরা দিয়ে সজ্জিত কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করার কথা জানিয়েছেন।
ড্রোনগুলি তাদের ছবি তোলে এবং তাদের অবস্থান প্রেরণ করে, “হিজাব প্রয়োগকারীদের” সরাসরি তাদের মুখোমুখি হতে সক্ষম করে।
হিজাব ছাড়া বইমেলায় প্রবেশের চেষ্টা করা মহিলাদের সম্পূর্ণভাবে প্রবেশ করতে অস্বীকার করা হয়েছে, প্রতিটি প্রবেশপথে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। “নূর পরিকল্পনা” বাস্তবায়নে বাধ্যতামূলক হিজাব অমান্যকারী মহিলাদের লক্ষ্য করে পুলিশ এবং বিশেষ ইউনিট দ্বারা সহিংস গ্রেপ্তারের অসংখ্য ঘটনাও দেখা গেছে। গত ১৩ এপ্রিল থেকে, ইরানের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি “নূর পরিকল্পনা” এর অধীনে হিজাব প্রবিধানের প্রয়োগকে আরও জোরদার করছে।
ইরান জুড়ে ড্রেস কোডের অনুভূত লঙ্ঘনের জন্য নারীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানির অনেক খবর পাওয়া গেছে। সামাজিক নেটওয়ার্ক জুড়ে ব্যবহারকারীরা বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরোধীদের বিরুদ্ধে সরকারের দমন-পীড়নের বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ নথিভুক্ত করতে হ্যাশট্যাগ “নারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ” ব্যবহার করে একটি স্বতঃস্ফূর্ত প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছে৷ প্রতিবেদনে দমনমূলক কৌশলের বিস্তারিত বিবরণও উঠে এসেছে, বিশেষ করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের লক্ষ্য করে। উপরন্তু, নাগরিক কর্মী, রাজনৈতিক ভিন্নমত, নারী রাজনৈতিক বন্দী এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের উপর চাপ বাড়ছে।।