হিন্দুধর্ম একটি নির্দিষ্ট ধর্মের নাম নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যা দক্ষিণ -এশীয় উপমহাদেশে হাজার হাজার বছর ধরে বিকশিত হয়েছে । নিজ গুনে বিভিন্ন ধর্মকে আলিঙ্গন করছে হিন্দু ঐতিহ্য । হিন্দুধর্মের মধ্যে রয়েছে সুপ্রাচীন আচার-অনুষ্ঠান এবং উৎসব এবং ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের জন্য বিশদ নৈতিক নিয়ম-কানুন। এ ছাড়াও রয়েছে কলা ও বিজ্ঞান। হিন্দুধর্ম কখনই দর্শন এবং ধর্মতত্ত্বের মধ্যে পশ্চিমা বৈরিতা জানত না, বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে যুদ্ধের ইতিহাসও নেই। সত্য বা বাস্তবতাকে খুঁজে বের করা হিন্দুদের সর্বোচ্চ লক্ষ্য , যা বিভিন্ন উপায়ে এবং বিভিন্ন রূপে প্রদর্শিত হতে পারে। হিন্দুদের পবিত্র গ্রন্থ বেদে আছে ভাষাবিদ্যা,চারু ও কারুশিল্প, চিকিৎসা বিদ্যা,যুক্তি ও দ্বান্দ্বিকতা, আধ্যাত্মিকতা,মহাকাশ বিজ্ঞান, রাষ্ট্র বিজ্ঞান,শিক্ষা,কৃষি বিজ্ঞান প্রমুখ । জীবন সম্বন্ধে হিন্দু ধর্মের চারটি দৃষ্টিভঙ্গি হল : প্রথমত, একজন ব্যক্তিকে সম্পদ বা অর্থ অর্জন করতে হয়, জীবনকে উপভোগ করতে হয়, নৈতিকতা ও ধর্ম অনুশীলন করতে হয় এবং চূড়ান্ত মুক্তি বা মোক্ষের অন্বেষণ করতে হয় ।
হিন্দু ঐতিহ্যের সাথে বিজ্ঞান কিভাবে যুক্ত?
হিন্দু ধর্মে মোট সাতটি গোত্র রয়েছে এবং একটি গোত্রের লোকেরা নিজেদের মধ্যে বিয়ে করতে পারে না যাতে জিনগুলি আলাদা থাকে… একজন বিজ্ঞানী বলেছিলেন যে আজ সারা বিশ্বকে মেনে নিতে হবে যে হিন্দুধর্মই একমাত্র ধর্ম যা সম্পূর্ণ বিজ্ঞান সম্মত !
হিন্দু ঐতিহ্য সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক যুক্তি
★ কান ছিদ্র করার প্রথা :-
ভারতে প্রায় সব ধর্মেই কান ছিদ্র করার প্রথা রয়েছে।
দার্শনিকরা মনে করেন যে এটি চিন্তা করার শক্তি বৃদ্ধি করে। যদিও চিকিৎসকরা বিশ্বাস করেন যে এতে স্বরযন্ত্রকে উন্নত করে এবং কান দিয়ে মস্তিষ্কে যাওয়া শিরাগুলির রক্ত সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে।
★ কপালে কুমকুম বা তিলক লাগানো :-
হিন্দু মহিলা এবং পুরুষরা কপালে কুমকুম বা তিলক লাগান। এর পিছনে বৈজ্ঞানিক যুক্তি হল – চোখের মাঝখানে কপাল পর্যন্ত শিরা চলে। কুমকুম বা তিলক লাগালে সেই স্থানের শক্তি বজায় থাকে। কপালে তিলক লাগানোর সময়, বুড়ো আঙুল দিয়ে চাপ দিলে মুখের ত্বকে রক্ত সরবরাহকারী পেশী সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর ফলে মুখের কোষে রক্ত ভালোভাবে পৌঁছায়।
★ মাটিতে বসে খাওয়া :-
ভারতীয় সংস্কৃতি অনুসারে, মেঝেতে বসে খাবার খাওয়া একটি ভাল জিনিস। এর বৈজ্ঞানিক যুক্তি :- এটি এক প্রকার যোগাসন। এই অবস্থায় বসলে মন শান্ত থাকে এবং খাওয়ার সময় মন শান্ত থাকলে হজম প্রক্রিয়া ভালো থাকে। এই অবস্থানে বসার সাথে সাথে একটি সংকেত স্বয়ংক্রিয়ভাবে মস্তিষ্ক থেকে পাকস্থলীতে চলে যায় খাবারের জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য।
★ হাত জোড় করে নমস্কার করা :-
যখন আমরা কারো সাথে দেখা করি, আমরা হাত গুটিয়ে নমস্তে বা নমস্কার বলি। বৈজ্ঞানিক যুক্তি হল :- যখন সমস্ত আঙ্গুলের ডগা একে অপরের সংস্পর্শে আসে এবং তাদের উপর চাপ পড়ে। আকুপ্রেসারের কারণে, এটি আমাদের চোখ, কান এবং মস্তিষ্কের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে, যার ফলে আমরা আমাদের সামনের মানুষটিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য মনে রাখতে পারি। দ্বিতীয় যুক্তি হল আপনি যদি হাত জোর করার পরিবর্তে করমর্দন করেন তাহলে অন্য ব্যক্তির শরীর থেকে জীবাণু আপনার শরীরে সহজেই পৌঁছে যায় ।
★ খাবার মশলাদার দিয়ে শুরু হয় এবং মিষ্টি দিয়ে শেষ হয়:-
যখনই হিন্দুদের কোন ধর্মীয় বা পারিবারিক আচার-অনুষ্ঠান থাকে, খাবারটি মশলাদার দিয়ে শুরু হয় এবং মিষ্টি দিয়ে শেষ হয়। বৈজ্ঞানিক যুক্তি – মশলাদার খাবার খেলে আমাদের পাকস্থলীর অন্দরে হজমকারী উপাদান ও অ্যাসিড সক্রিয় হয়। এর ফলে পরিপাকতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করে। সবশেষে, মিষ্টি খেলে অ্যাসিডের তীব্রতা কমে যায়। এতে পেটে জ্বালাপোড়া হয় না।
★ গাছ পূজা:-
অনেকে মনে করেন গাছের পুজো করলে ভূত পালায়। বৈজ্ঞানিক যুক্তি:- এতে গাছের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পায় এবং তারা গাছ যাতে না কেটে পরিচর্যা করে সেজন্য এটি পূজা করা হয়। বট গাছ একমাত্র গাছ যা রাতেও অক্সিজেন তৈরি করে।
★ দক্ষিণ দিকে মাথা রেখে ঘুমানো:-
কেউ যদি দক্ষিণ দিকে পা রেখে ঘুমায়, তবে লোকে বলে যে খারাপ স্বপ্ন দেখাবে, ভূতে ধরবে ইত্যাদি। তাই উত্তর দিকে পা রেখে ঘুমানোর কথা বলা হয় । কিন্তু হিন্দু রীতিতে দক্ষিণ দিকে মাথা রেখে ঘুমানো খুব শুভ বলে মনে করা হয় । এর বৈজ্ঞানিক যুক্তি হল- আমরা যখন উত্তর দিকে মাথা রেখে ঘুমাই তখন আমাদের শরীর পৃথিবীর চৌম্বক তরঙ্গের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়ে আসে। শরীরে উপস্থিত আয়রন মস্তিষ্কের দিকে সঞ্চারিত হতে শুরু করে। এটি আলজেইমার, পারকিনসন্স বা মস্তিষ্ক সম্পর্কিত রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। শুধু তাই নয়, রক্তচাপও বেড়ে যায়।
★ সূর্য নমস্কার :-
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে একটি প্রথা রয়েছে যে সকালে ঘুম থেকে উঠে জল নিবেদন করে সূর্যকে নমস্কার করা হয়। বৈজ্ঞানিক যুক্তি:- জলের মাঝখান থেকে সূর্যের রশ্মি আমাদের চোখে পৌঁছালে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হয়।
★ মাথায় টিকি রাখা :-
হিন্দু ধর্মে ঋষি-সাধুরা মাথায় টিকি রাখতেন। আজও মানুষ রাখে। বৈজ্ঞানিক যুক্তিঃ- টিকি যেখানে রাখা হয় সেখানে মস্তিষ্কের সমস্ত স্নায়ু একত্রিত হয়। এতে মন স্থির থাকে এবং ব্যক্তির ক্রোধ কম হয়, চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বৈষ্ণবদের মধ্যে এখনো এই প্রথা বিদ্যমান আছে ।
★ ব্রত রাখা :
যে কোনো পূজা বা উৎসব হলেই মানুষ ব্রত রাখে।
বৈজ্ঞানিক যুক্তি:- আয়ুর্বেদ অনুসারে, উপবাসের ফলে হজমশক্তির উন্নতি ঘটে এবং ফল খাওয়ার ফলে দেহের ডিটক্সিফিকেশন হয়, অর্থাৎ খারাপ উপাদান দূর হয়। গবেষকদের মতে, রোজা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস প্রভৃতি রোগও দ্রুত দেখা দেয় না।
★ পা স্পর্শ করে প্রনাম করা :-
হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, আপনি যখনই কোনও প্রবীণের সাথে দেখা করেন, তার পা স্পর্শ করে প্রনাম করেন । আমরা বাচ্চাদেরও এটা শেখাই, যাতে তারা তাদের বড়দের সম্মান করে ।।