এইদিন ওয়েবডেস্ক,লন্ডন,০৫ মে : আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশ থেকে কাতারে কাতারে মুসলিম শরণার্থীর দল ভিড় জমাচ্ছে ইউরোপীয় দেশগুলিতে। ফলে ওই দেশগুলির জনবিন্যাসের যেমন আমূল পরিবর্তন ঘটছে, পাশাপাশি তেমনি বাড়ছে অপরাধ মূলক কাজকর্ম এবং অর্থনীতির ওপর চাপ । যে কারণে মুসলিম শরণার্থীদের আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক । এদিকে বহু বাংলাদেশী ট্যুরিস্ট, স্টুডেন্ট, কেয়ার ভিসা, ওয়ার্ক পারমিটসহ বিভিন্নভাবে ব্রিটেন গিয়ে বসবাস করছে । তারা এখন রুয়ান্ডায় পাঠানোর সরকারি সিদ্ধান্তে চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে ।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার থাবায় দেশের বিভিন্ন সেক্টরে যখন হতাশা চলছিল, তখন বাংলাদেশের বিভিন্ন পেশা যুক্ত হাজার হাজার মানুষ স্বাচ্ছন্দের আশায় ব্রিটেনে পাড়ি দিয়েছিল । তাদের একটি বড় অংশ দ্রুত নাগরিকত্ব পাওয়ার আশায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনও করে। তবে এখন তারা ভয়াবহ সঙ্কটে পড়েছেন ।
বছর দশেক আগে ট্যুরিস্ট ভিসায় লন্ডন পাড়ি জমান বাংলাদেশের সিলেটের যুবক কামরুল ইসলাম। সেখানে গিয়ে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন। তিনি বলেন, ১০ বছর হলো রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করে এই দেশে বসবাস করছি। তবে ভবিষ্যতে কী হবে কিছুই জানিনা। এখন অনিশ্চিত জীবনযাপন করছি।
এক বছর আগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যুক্তরাজ্য পাড়ি দিয়েছেন আরাফাত হোসেন। তবে সেখানে গিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটছে তার। তিনি বলেন, উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে এ দেশে এসেছি। কিন্তু আসার আগে যতটা স্বপ্ন দেখেছি, আশা করেছি, এসে দেখি পুরোই ভিন্ন। এখানে বৈধ না হলে ঠিকমতো কাজ পাওয়া যায় না। তবে কিছু ক্যাশ জব পাওয়া গেলেও বেতন কম। কিন্তু যে টাকা আয় করি তা দিয়ে ঠিকমতো ঘর ভাড়াও হয় না। কারণ এখানে ঘর ভাড়া অনেক বেশি। দৈনন্দিন জিনিসপত্রের দামও বেশি। কীভাবে কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় যুক্তরাজ্য সেলের বিনিয়োগ বোর্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর পলি রহমান জানান, যারা সম্প্রতি বিভিন্ন ভিসায় যুক্তরাজ্য গিয়েছেন তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ব্রিটেনের রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার কর্মী আয়েশা চৌধুরী বলেন, যুক্তরাজ্য তাদের অর্থনৈতিক চাপ কমাতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাজ্যে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে ৫ হাজার ৭০০ জনকে এ বছর রুয়ান্ডায় পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। ২৯ এপ্রিল এক আশ্রয়প্রার্থীকে রুয়ান্ডা পাঠানোও হয়েছে। এ অবস্থায় যারা উন্নত জীবনযাপনের আশায় যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন বা যাচ্ছেন তাদের আশায় গুড়েবালি।
জানা গেছে,ইতিমধ্যেই অভিবাসীদের পাঠানোর লক্ষ্যে ২০২২ সালের এপ্রিলে আফ্রিকার দেশ রোয়ান্ডায় সঙ্গে ২৭২ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করে যুক্তরাজ্য। চুক্তির আওতায় পাঁচ বছরে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসন প্রত্যাশীদের জায়গা দেবে রুয়ান্ডা । তবে তারা অনুপ্রবেশকারীদের থাই নাগরিকত্ব দেবে কিনা তা জানা যায়নি । ফলের রুয়ান্ডাতে গিয়েও কঠিন সংগ্রামের মুখে পড়তে হবে শরণার্থীদের ।।