প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৪ মে : বৈশাখেও দেখানেই কালবৈশাখীর।দহনে দগ্ধ গোটা বাংলা।রেকর্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আট থেকে আশির বহু মানুষ এখন শুধুই বৃষ্টির প্রার্থনা করছেন।কিন্তু এমনও অনেকে আছেন যাঁদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে এই তীব্র দহন ।তাঁরা এখন কিছুতেই জড় বৃষ্টি চাইছেন না।বরং তাঁরা চাইছেন রোদ আরো খাঁ খাঁ হোক,দহন চলুক আরো বেশকিছু দিন।এমন চাওয়া অবশ্য শহর বা শহর বা শহরতলীর এলিট সামাজের মানুষের নয়। যাঁরা দহন এখনও চাইছেন তাঁরা হলেন রাজ্যের শস্যগোলা বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলার বরো চাষী।কারণ তাদের চাষের জমির বরো ধান এখন সবেতো পেকে সোনালি রঙা হয়েছে।সেই ধান গাছ কেটে ধান ঝেড়ে ধান গোলায় তোলাতো একনও বাকি রয়েছে।তাই দহনে দগ্ধ হয়েও আরো বেশ কিছুদিনের জন্যে দহন চাইছেন শস্যগোলার বরো ধান চাষিরা ।
কৃষিতে পশ্চিমবঙ্গের অগ্রগণ্য জেলা গুলির মধ্যে অন্যতম পূর্ব বর্ধমান।ধান এই জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল। সুগন্ধি ধান সহ উন্নত প্রজাতির ধান চাষেও এই জেলার সুনাম রয়েছে।বরো ধানের চাষও এই জেলায় ব্যাপক পরিমানে হয় ।জেলা কৃষি দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী,’এ বছর পূর্ব বর্ধমান জেলায় ১ লক্ষ ৭১ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে বরো ধানের চাষ হয়েছে।’
মূলত আমন ধান চাষের মৌসুম শেষ হবার পরেই
বরো চাষের মৌসুম শুরু হয়।বরো ধান রোপণের কাজ সাধারণত বাংলার কার্তিক মাসের মাঝামাঝি অর্থাৎ ইংরেজির অক্টোবর-নভেম্বর মাস জুড়ে চলে। ধান গাছ কাটা ও ঝাড়ার কাজ চলে বাংলার বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ অর্থাৎ ইংরেজির এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত।আবহাওয়াও এবছর বরো ধান চাষের পক্ষে যথেষ্টই সহায়ক রয়েছে।কালবৈশাখীও পাকা ধানে মই দেয় নি।তাই দহনে দগ্ধ হতে হলেও জমিতে ধানের ভালো ফল দেখে খুশিতে ডগমগ জেলার চাষিরা।
জেলার কৃষি আধিকারিক নকুল চন্দ্র মাইতি বলেন, ‘এবছর আমাদের জেলায় বরো ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে।প্রচণ্ড গরবে অস্বস্তি বেড়েছে ঠিকই।তবুও আমি চাইবো উপরওয়ালা যেন চাষিদের প্রতি সদয় থাকেন। চাষিরা তাদের জমির ধান গাছ কেটে ধান ঝেড়ে ভালভাবে ঘরে তুলে নিক।তাতে চাষিরা লাভবান হবেন । তার পর কালবৈশাখী আসলে আসুক।’
আবহাত্তয়া ও জলবায়ু চাষিদের কখনো হাসায় আবার কখনো কাঁদায়।প্রবল ঝাড়-বৃষ্টি,শিলাবৃষ্টি কিংবা খরা বা বন্যায় চাষের ক্ষতি ,চাষিদের কাঁদিয়ে ছাড়ে। তখন আত্মহননের পথও বেছে নিতে বাধ্য হন কোন কোন চাষী। আবার আবহাওয়া ও জলবাবু যখন ধান,আলু কিংবা সবজি চাষের অনুকুল থাকে,ফসল যখন ভালো হয় তখন চাষিদের মুখে সত্যি হাসি ফোটে।যেমনটা এখন হাসছেন শস্যগোলার বরো ধান চাষিরা ।
এখন তীব্র দহন চলার জন্যে বরো ধান চাষিরা যে কতটা খুশিতে রয়েছেন সেটা বুধবার ভাতর,রায়না, মেমারি ও জামালপুরের চাষির সঙ্গে কথা বলে পরিস্কার বোঝাগেল।এইসব ব্লকে ঘুরে দেখা গেল কোন কোন জমির ধান গাছে পাক ধরেছে। আবার অন্য জায়গায় গিয়ে দেখা গেল পাকা ধান গাছ জমিতে বিছানো রেখেছে।ধান ঝেড়ে ঘরে তুলতেও দেখা গেল অনেক চাষিকে। ভাতারের প্রবীণ চাষি শেখ আবুল জানান,“তিনি এবছর প্রায় ছয় বিঘা জমিতে বরো ধান চাষ করছেন। ধানগাছে ফলনও ভালো এসেছে।তবে তাঁর সব জমির ধান গাছ এখনও সম্পূর্ণ ভাবে পাকে নি।তাই তিনি চাইছেন ঝড় বৃষ্টি না হবে এমন তীব্র তাপপ্রবাহ আরো অন্তত ১০-১২ দিন স্থায়ী হোক। হাসি মুখে তিন এও বলেন,আমার জমির দিকে তাকিয়েই আমি আরো দহন চাইছি“।একই কারণে দহনের আরো স্থায়িত্ব চাইছেন রায়না,মেমারি ও জামালপুরের অনেক বরো ধান চাষি।তাদের সবারই বক্তব্য,’এই দহন তাদের বরো চাষের পক্ষে যথেষ্টই সহায়ক। চাষিরা তাদের জীবন জীবিকার স্বার্থে তাই এই দহনকে উপরওয়ালার আশীর্বাদ হিসাবেই ধরে নিয়েছেন।’।