শ্যামসুন্দর ঘোষ,মুর্শিদাবাদ,০১ এপ্রিল : ‘তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার থেকে ভাল বিজেপিকে ভোট দেওয়া।’ কংগ্রেস প্রার্থী মূর্তজা হোসেনের সমর্থনে একটি সভায় এই মন্তব্য করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের কংগ্রেস প্রার্থী অধীর রঞ্জন চৌধুরী। অধীরের এই বক্তব্যের একটি ভিডিও এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং তারা বিজেপি, বাম, কংগ্রেস আঁতাঁতের অভিযোগ করেছে । এদিকে আজ বুধবার দুপুরে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের নওদায় দলীয় প্রার্থী ডঃ নির্মল কুমার সাহার সমর্থনে আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে অধীর চৌধুরীর মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘কোভিডের সময় অধীর চৌধুরীর দেখা পাওয়া যায়নি । অধীর চৌধুরী কোথায় আজকে একটা বলেছে তৃণমূলের থেকে বিজেপিকে ভোট দেওয়া ভালো। একদম বিভ্রান্ত হবেন না । কেন বলছে জানেন? গতবারে অধীর চৌধুরীর নওদা, বেলডাঙ্গা, রেজিনগর, ভরতপুর, বড়োয়াতে হেরেছিল । কেবল লিড পেয়েছিল বহরমপুর আর কাঁদিতে । আপনারা জানেন, অধীরবাবু জেতার পর পার্লামেন্টে পাঁচ বছর যে ভাষায় কথা বলেছে, যে ভাষায় দেশের প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন, আপনাদের স্মরণ করাই,নর্দমার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদিকে তুলনা করেছিলেন । মনে আছে না ভুলে গেছেন? পার্লামেন্ট উত্তাল হয়েছে স্পিকার ওকে ক্ষমা চাইয়েছে৷ এই অধীর চৌধুরী বুঝে নিয়েছে যে এবারে জিততে পারবেন না ।’
এরপর তিনি বহরমপুরের তৃণমূল প্রার্থীকে নিয়ে মন্তব্য করেন,’আর একজন ইউসুফ পাঠান, মমতা ব্যানার্জি বারবার বলে বাংলা বাঙালির আর মোদীজি বহিরাগত । অমিত শাহ বহিরাগত । বিজেপি বাহারিদের পার্টি । আপনি ইউসুফ পাঠানকে কোথা থেকে এনেছেন? উনি কোন জায়গা থেকে এসেছেন? সার্টিফিকেট নিতে গেলে হিন্দিতে কথা বলবেন তো?’
দুর্নীতি ইস্যুতে রাজ্যের শাসক দলকে কার্যত তুলোধুনো করেন শুভেন্দু অধিকারী । এ বিষয়ে তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসকে লোকে এখন চোর বলে । এই পার্টি আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত একটি পার্টি । যারা মানব কল্যাণের কেন্দ্রের সমস্ত টাকা চুরি করেছে । তৃণমূলের দুটো ক্যাপিটাল একটা হল চুরি ও অন্যটা বিভাজনের রাজনীতি করা ।’
উত্তর কলকাতার বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের ভূয়সী প্রশংসা করার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কুনাল ঘোষকে রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পথ দিকে সরিয়ে দিয়েছে তৃণমূল । এই বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী কটাক্ষ করেন, ‘সাড়ে তিন বছরের জেলখাটা মালের চাকরি আজ চলে গেছে । তৃণমূল তাকে সাধারণ সম্পাদক থেকে সরিয়ে দিয়েছে ।’
এবারে রামনবমীর শোভাযাত্রায় মুর্শিদাবাদ জেলার একাধিক জায়গায় হামলার ঘটনা ঘটে । এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘মাননীয়া বড়োয়াতে বড় বড় ভাষণ দিচ্ছেন । মোবাইল ফোন কে পুকুরে ফেলেছিল? প্রাচীরে ঝুলছিল এমএল এর নাম কি ? মাননীয় জীবনকৃষ্ণ । একা জীবন নয় মুর্শিদাবাদে বড় বড় পোস্টে তৃণমূলের চোর আছে। এখানে মামা ভাগ্নার অত্যাচার । বন্ধ আমি করবই । বিরাট মস্তান না? এরা আপনাদের ওপর অত্যাচার করে মুর্শিদাবাদের যে ধর্মীয় সহিষ্ণুত আছে তাকেও নষ্ট করছে৷ শক্তিপুর এ কি ঘটেছে? কেন ঘটবে? সবাই নিজে নিজে ধর্ম পালন করবেন । মহরমের মিছিল যাবে, বিশ্ব নবী দিবসের মিছিল যাবে, যিশুখ্রিস্টের মিছিলই যাবে, জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা যাবে,বেলডাঙ্গার কার্তিক মেলা হবে, রথযাত্রা হবে, রামনবমী হবে। কেন শক্তিপুরে সিভিক ভলেন্টিয়ারের বাড়ি থেকে পুলিশের অনুমতি নেওয়া মিছিলের ওপর হামলা হবে? কি চাইছেন আপনারা?’
বীরভূমের বগডুইয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে স্থানীয় মুসলিম শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’২০২১ সালে মমতা ব্যানার্জি আসার পর কি কি করেছে শুনুন । ২১ /৩/ ২০২২, বগডুই গণহত্যা । নূর নেহার বিবি, আতাহার বিবি, মিনা বিবি, জাহানারা বিবি, রূপালী বিবি, নাজমা বিবি, রওশনারা বিবি, মর্জিনা খাতুন, উন্মিহানি খাতুন, মোহাম্মদ গাজী এবং আজিজুর রহমান দশটা মুসলমানকে পুড়িয়েছে । লজ্জা নেই মমতা ব্যানার্জি ?
পঞ্চায়েত নির্বাচনে পঞ্চান্ন জন খুন হয়েছে । তার মধ্যে ২১ জন মুসলিম । এরপরও ভোট দেবেন? গার্ডেনরিচ পুকুরের উপর বাড়ি বানিয়েছিলেন ববি হাকিম । এই বাড়ি চাপা পড়ে ১২ জন মারা গেছে । ববি হাকিম চাপা পড়েনি আর কাউন্সিলর সামস ইকবালও চাপা পড়েনি । চাপা পড়েছে বারোজন মুসলিম । আর তৃণমূলের স্লোগান হলো চুরি কর আর মাল কামাও । এরপরেও এদের ভোট দেবেন ?’
শুভেন্দুর কথায়, ‘তৃণমূল কুয়ার ব্যাঙ,ছোট ডোবা । আর বিজেপি সমুদ্র । ১১ কোটি সদস্য । ১৮ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী । লোকসভায় ৩৫০ সাংসদ । রাজ্যসভায় একশো কুড়ি জন । বিজেপি বিশ্বের মধ্যে বিরাট পার্টি ।’ এরপর তিনি দলীয় প্রার্থী ডঃ নির্মল কুমার সাহাকে দেখিয়ে বলেন, ‘ভোট দিন এই লোকটাকে । এই লোকটা মানব ধর্ম পালন করেন । তার ব্যক্তিগত আস্থা থাকতে পারে । কোভিডের সময় আমরা ইউসুফ পাঠানের নাম গন্ধ শুনিনি । আর অধীর চৌধুরী দিল্লিতে কেন্দ্র সরকারের দেওয়া বাংলায় বসেছিল৷ এই লোকটাই ঘুরে ঘুরে মানুষের সেবা করেছে । জিজ্ঞেস করেনি তুমি তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপি, হিন্দু, মুসলমান, শিখ না খ্রিস্টান ।’।