এইদিন ওয়েবডেস্ক,বহরমপুর,৩০ এপ্রিল : বাংলাকে হিন্দুবিহীন করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুললেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ । আজ মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে দলীয় প্রার্থী নির্মল কুমার সাহার সমর্থনে জনসভা করেন তিনি । সভাতে রাজ্যের অনুপ্রবেশ,রামনবমীর শোভাযাত্রায় হামলা নিয়ে তিনি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে কার্যত তুলে ধরা করেন । তারই মাঝে তিনি অভিযোগ করেন যে বাংলাকে হিন্দু শূন্য করার ষড়যন্ত্র চলছে । যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘আজকের বাংলা সোনার বাংলা নেই, যে কল্পনা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা করেছিলেন । যে শস্য শ্যামলা বন্দেমাতরম গান এই বাংলা দিয়েছিল, সেই বাংলাকে দাঙ্গার মুখে ঠেলে দেওয়ার যে কুৎসিত প্রয়াস হচ্ছে, সেই বিপজ্জনক ইশারার দিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আমি বহরমপুরে এসেছি । আজ বাংলা ষড়যন্ত্রের শিকার । কংগ্রেস বার তৃণমূল কংগ্রেস একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ । এই দুই দলই বাংলাকে লোটার জন্য এবং ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য এক হয়েছে । কংগ্রেস বামফ্রন্ট এবং তৃণমূল দিল্লি তে গিয়ে সেই সেই ষড়যন্ত্রই করছে যে ষড়যন্ত্র বাংলার হিন্দুদের সঙ্গে হচ্ছে ।
আর এ কথা বলার জন্য আমি আজ এসেছি । আজ বাংলা রক্তাক্ত । বাংলা আজ উন্নয়ন থেকে বহু দূর পিছিয়ে গেছে । বাংলার মানুষ মৌলিক সুবিধার জন্য কাতর। সাত বছর আগে উত্তরপ্রদেশেও একই অবস্থা ছিল । আপনারা দেখবেন যে বিগত সাত বছরের উত্তর প্রদেশে কোন দাঙ্গা হয়নি । উত্তরপ্রদেশে কোন কার্ফু জারি হয়নি । আজ উত্তরপ্রদেশে মহিলা এবং ব্যবসায়ীরা সুরক্ষিত । কাল ক্ষমতা নেই তোলাবাজি করি । কারুর দাঙ্গা করার হিম্মত নেই । কারোর অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার ক্ষমতা নেই । গরিবের সম্পত্তি বা কোন ব্যবসায়ির কোন বিষয়ে কেউ অনাবশ্যক হস্তক্ষেপ করার কথা ভাবতে পারেনা । সরকারি যোজনা সুবিধা উত্তরপ্রদেশের সকলেই পাচ্ছেন । কিন্তু বাংলার মানুষ কেন বঞ্চিত? যে বাংলা ভারত কে রাষ্ট্র গীত দিয়েছে, যে বাংলার স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্বকে বার্তা দিয়েছিলেন যে ‘গর্ব করে বল আমরা হিন্দু’, সেই বাংলাকে হিন্দু বিহীন করার ষড়যন্ত্র কি ভাবে হচ্ছে?’
পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে জনবিন্যাসের আমূল পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যোগী আদিত্যনাথ । এই বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি তৃণমূল কংগ্রেস এবং দিল্লিতে ইন্ডি জোটের শরিক কংগ্রেস এবং বামপন্থীদের জিজ্ঞাসা করতে চাই দেশ বিভাজনের কারণ কি ছিল? আরে এটা কি সত্যি নয়, যে কারণে ১৯৪৭ সালে ভারতের বিভাজন হয়েছিল ঠিক সেই রকম পরিস্থিতি আজ কংগ্রেস বামপন্থী এবং তৃণমূল কংগ্রেস মিলে দেশের মধ্যে তৈরি করতে চাইছে ? জনবিন্যাসকে পরিবর্তন করার কুৎসিত চেষ্টা চলছে । আমি দেখে আশ্চর্য হয়ে যাই যে এই বীরভূমির তিনটে এমন বিধানসভা ক্ষেত্র আছে যে যার জনবিন্যাস পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে গেছে । আর মাত্র চারটি বিধানসভা ক্ষেত্রে হিন্দুবহুল । আমরা বাংলাকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছি?’
যোগী আদিত্যনাথ আরও বলেন,’পশ্চিমবঙ্গের এরকম অনেক বিধানসভা ক্ষেত্র আছে যেখানে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে । ভারতের জনবিন্যাস পরিবর্তন করার সাথে সাথে অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দিয়ে তাদের অরাজকতার সৃষ্টির সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে । এই চিত্র ইন্ডি জোটের শরিক কংগ্রেসের ইশতেহারেও লক্ষ্য করা গেছে ।’
যোগী আদিত্যনাথ কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণ প্রসঙ্গে বলেন, ১৫ শতাব্দীর বাংলার এক মহান কবি রামায়ণ লিখেছিলেন । ভগবান রাম এখানকার মানুষের মনের মধ্যে আছেন । রাম ছাড়া ভারতের জীবন পদ্ধতির কোন কাজই হয় না। আমরা উঠতে বসতে ভগবান রামের নাম নিই । কোন মাঙ্গলিক কাজ হলে রামায়ণ পাঠ করা হয় । শবযাত্রা বের হলে ‘রাম নাম সত্য’ বলে যেতে হয় । এখানে যেমন রামের পূজো হয় উত্তরপ্রদেশে তেমনি মা দুর্গার পূজো হয় । বাংলা থেকে যাওয়া এক কারিগরই মা দুর্গার মূর্তি তৈরি করেন । বড় বড় আয়োজন হয়, বড় বড় প্যান্ডেল হয় ।’
এরপরই রামনবমীর শোভাযাত্রায় হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন,’কিন্তু রামনবমী বা নবরাত্রির দিন উত্তরপ্রদেশে কোন দাঙ্গা হয় না । পশ্চিমবঙ্গে রামনবমী এবং পয়লা বৈশাখের দিন দাঙ্গা কেন হল? আমি এ কথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জিজ্ঞেস করতে চাই । এই সমস্ত দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে সরকার কেন কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি? যদি এই দাঙ্গাবাজরা উত্তরপ্রদেশে এই ধরনের অত্যাচার করত তাহলে তাদের উল্টোদিকে টাঙিয়ে রেখে ঠিক করে দিতাম । এবং ওদের এমন হাল করতাম যে ওদের সাত পুরুষ ভুলে যেত দাঙ্গা কি জিনিস । যদি আমরা আপনারা সোনারবাংলা করতে চান তাহলে মোদীজির নেতৃত্বে বিজেপি কি সরকারকে আনুন ।’
যোগী আদিত্যনাথ বাংলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন । এই বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘যে বাংলা ভারতের সভ্যতার সংস্কৃতিকে নয়া দিশা দেখাতো, যে বাংলা ভারতীয় সংস্কার কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, যে বাংলা এক সময় ভারতকে নবজাগরণের রাস্তা দেখিয়েছিল, সেই বাংলার রক্তাক্ত কেন? দিশাহীন কেন? যে বাংলা ভারতকে রাষ্ট্র গীত বন্দেমাতরম দিয়েছিল, রাষ্ট্র গান জনগণমন দিয়েছিল, সেই বাংলা থেকে ক্রন্দন এবং আর্ত চিৎকার কেন উঠছে? যে বাংলা ভারত কে শিখিয়েছিল গর্ব সে বল আমরা হিন্দু, সেই বাংলার হিন্দু পরম্পরার সংস্কৃতিকে পদদলিত করার প্রয়াস মমতা ব্যানার্জির প্রশ্রয়ে কিভাবে হচ্ছে? এটা দেখে আমার হৃদয় বিগলিত হয়ে যায়।’
এরপর তিনি সন্দেশখালী কান্ডের প্রসঙ্গে বলেন,’যে বাংলা দয়াময়ী মা দেবী দুর্গার পূজার সূচনা করেছিল, সেই বাংলায় সন্দেশখালি মতো ঘটনা কিভাবে হয়? সে প্রশ্ন বাংলার সরকারকে করার জন্য আজ আমি বহরমপুর এসেছি ।’
ইন্ডিজোটের শরিক হলেও বহরমপুরে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এখানে কংগ্রেসের প্রার্থী অধীর রঞ্জন চৌধুরী । অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করেছে প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা গুজরাটের বাসিন্দা ইউসুফ পাঠানকে ।।