প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৩ এপ্রিল : কলকাতা হাইকোর্টের নজিরবিহীন রায়ে স্কুল শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী মিলিয়ে বঙ্গে এখন প্রায় ২৬ হাজার জন চাকরি হারা ।আর এই ঘটনার জন্যে মঙ্গলবার আদালতের রায়,কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবং রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী কে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । একই সঙ্গে তিনি বলেন,’ভুল তো যে কেউ করে ফেলতে পারে। আদালত ভুল শুধরে নেয়ার কথা বললে, সেটা না হয় আমরা চেষ্টা করে দেখতাম’ । এ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,’মানুষের চাকরি খেয়ে বোমা ! ওই বোমা হজম হবে না।’
লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এদিন পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে জনসভা করেন তৃণমূল সুপ্রিয় তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কীর্তি আজাদ এবং বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনের প্রার্থী শর্মিলা সরকার সহ তৃণমূল কংগ্রেসের জেলার নেতা,নেত্রী ও বিধায়করা ওই সভায় উপস্থিত থাকেন। জনসভায় বক্তব্য রাখতে উঠে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই দিন প্রথম থেকেই বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ান। তবে সিপিএম বা কংগ্রেসকে নিয়ে তেমন কোনো চড়া কথা তৃণমূল নেত্রীর ভাষণে এদিন শুনতে পাওয়া যায়নি।
লোকসভা ভোটের মুখে কলকাতা হাইকোর্ট এসএসসি মামলার যে রায় দিয়েছে তাতে যথেষ্ট বেসামাল রাজ্যের শাসক দল।বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং মহম্মদ শাব্বর রশিদির কলমের খোঁচায় ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি চলে গিয়েছে।এই প্রসঙ্গ সামনে এনে মুখ্যমন্ত্রীর দিন বলেন,“মোদী দু -কোটি বেকারকে চাকরি দেবে বলেছিল। একটা লোককেও চাকরি দেয়নি। আজকে ভারতে বেকারের সংখ্যা সব থেকে বেশি। আমরা বাংলায় যখন চাকরি দিচ্ছি, তখন আপনারা (মোদী সরকার) কোর্ট কে দিয়ে চাকরি গুলো খেয়ে নেন। কারণ ওরা আমাদের আন্ডারে নয়, আপনাদের আন্ডারে। আপনারা চাকরিগুলো না খেয়ে নিয়ে যদি বলতেন,এখানে অসুবিধা আছে। এটা সংশোধন করো। আমরা করে দিতাম। ভুল তো যে কেউ করে ফেলতে পারে। সবটা কি আমি করি? আমি করি না,এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট আলাদা ডিপার্টমেন্ট আছে। এসএসসি আলাদা আছে। প্রাইমারি ও মাধ্যমিক বোর্ড আলাদা আছে। কলেজ কমিশন আলাদা আছে। যারা একতরফা রায় দিয়ে ২৬ হাজার ছেলে মেয়ের চাকরি খেয়ে নিল, তারাই বললেন, এক মাসের মধ্যে আট বছরের মাইনে সুদসহ ফেরত দিতে হবে। হ্যাঁ কলমের খোঁচায় সবার চাকরিতে চলে গেল“। আজ যদি কোন ছেলে মেয়ে আত্মহত্যা করে। তার দায়িত্ব আপনারা নেবেন? “আমি সেই জন্যই বলছি, ’চিন্তা করবেন না। স্কুলগুলোতে মাস্টার এখন কোথা থেকে আসবে,স্কুলের বাচ্চারা এখন স্কুলে গিয়ে বসে থাকবে! ওখানে বিজেপির লোকেরা গিয়ে পড়াবে নাকি আরএসএস-এর লোকেরা গিয়ে পড়াবে? এই প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী ।
জনসভার মঞ্চ থেকে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিশানা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,বোমা ফাটিয়েছে। মানুষের চাকরি খেয়ে বোমা! একদিন বুঝবি। আজকে খুব গায়ের জোর না। বিজেপিতে গিয়ে দালালি করছিস কেন? প্রচুর টাকা করেছিস,পাশে সিবিআই-ইডি- এনাআইয়ে ধরে বলে? সেদিন পুরুলিয়ায় কে চাকরি বিক্রি করেছিল, যদি আমি নামটা বলি। নামটা আমি বলবো না, আপনারা বুঝে নিন। আমার ইশারাই কাফি। সবচেয়ে বড় কুকর্ম করেছে যে তার নাম “বড় গাদ্দার“। কোর্ট কি রায় দেবে তুই জানলি কি করে ? তুই দু’দিন আগে বলেছিলি বোমা ফাটাবো। এতগুলো বাচ্চার জীবন কেড়ে নিয়ে নাচছিস। নেচে নেচে বেড়া। তোদের বিদায় দিন ঘনিয়ে এসেছে। ভোটের মাধ্যমে বিজেপিকে বিদায় জানানোর জন্য এবার দেশের মানুষ তৈরি আছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেন।।