এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১১ জুন : অবশেষে দেবীমূর্তিকে ‘বিদায়’ দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন বেড়াগ্রামের ঘোষ পরিবার।বৌদ্ধতন্ত্র মতে একসময় পূজিতা হতেন প্রায় চারফুট উচ্চতার এই মারিচী দেবীমূর্তিটি। পুকুরের পাঁকের তলা থেকে উদ্ধার হওয়ার পর নিজেদের বাড়িতে এনে পুজোর্চ্চনা করছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থানার বেড়াগ্রামের বাসিন্দা দিলীপ ঘোষ, উদয় ঘোষরা। মারিচী মূর্তি আনার পর থেকেই একের পর এক অঘটন ঘটে যাচ্ছিল। তাই প্রায় ১৩০০ বছরের প্রাচীন প্রায় চার ফুট উচ্চতার ‘মারিচী’ মূর্তিটি আর ঘরে রাখতে চাইছিলেন না পূর্ব বর্ধমান জেলার দাঁইহাটের বেড়াগ্রামের ঘোষ পরিবার। তারা আবেদন জানানোর পর অবশেষে দেবীমূর্তির ঠাঁই হল কাটোয়া মহকুমা গ্রন্থাগারের সংগ্রহশালায়। শুক্রবার কাটোয়া মহকুমা গ্রন্থাগারের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদল বেড়াগ্রামে এসে এই মূর্তিটি নিয়ে যান কাটোয়া মহকুমা গ্রন্থাগারের সংগ্রহশালায়।
গত ২৫ মার্চ বেড়াগ্রামের দিলীপ ঘোষ , উদয় ঘোষরা পুকুর সংস্কারের কাজ করার সময় এই ‘অষ্টভূজাপিতা মারিচী’ দেবীর মূর্তিটি পাঁকের তলা থেকে পাওয়া যায়। পরিবারের দাবি, মূর্তিটি বাড়িতে আনার পর থেকেই তাদের বাড়িতে ঘটে যায় একের পর এক অঘটন। তিনদিনের মধ্যেই বাড়ির পোষ্য চারটি মোষের মৃত্যু।দশদিনের মধ্যেই বাড়ির এক যুবকের দুর্ঘটনা।আর সর্বশেষ অঘটন বাড়িতে কয়েকদিন আগে বজ্রপাত।
পরপর ঘটনার পর ঘোষ পরিবারের লোকজন আতঙ্কে ছিলেন । তাদের বিশ্বাস, শাস্ত্রীয় নিয়ম অনুযায়ী এই দেবীমূর্তির পুজোর্চ্চনা না হওয়ার কারনেই দেবী রুষ্ট হচ্ছেন। দিলীপ ঘোষরা এরপর প্রশাসনের কাছে আবেদন জানান তারা মূর্তিটি দান করে দিতে চান। সরকারি সংগ্রহশালায় সংরক্ষণ করে রাখা হোক।এদিন শুক্রবার কাটোয়া মহকুমা গ্রন্থাগারের সম্পাদক তুষার পন্ডিত সহ কয়েকজন গাড়ি নিয়ে আসেন বেড়াগ্রামে। দিলীপবাবুদের বাড়ি থেকে মূর্তিটি উদ্ধার করে গ্রন্থাগারের সংগ্রহশালায় নিয়ে যাওয়া হল।
অভীক সরকারের লেখা ‘ভোগ’ গল্পে দেখা যায় দশমহাবিদ্যার অন্যতম ‘মাতঙ্গী’ মূর্তি বাড়িতে নিয়ে এসে রাখার পর তার প্রভাব কিভাবে পড়েছিল।মৃত্যুর দোড়গোড়ায় এসে পৌছেছিলেন গল্পের নায়ক। শেষে গল্পের নায়ক অতীন সেই মূর্তি নিক্ষেপ করেছিলেন গঙ্গার জলে। তারপর নিস্কৃতি মেলে।
অনেকটা সেই গল্পের কাহিনীর সঙ্গে মিলে যায় ঘোষ পরিবারের পাওয়া মারিচী মূর্তির কাহিনী।এমনটাই বলছেন এলাকাবাসী।
কাটোয়া মহকুমা গ্রন্থাগারের সম্পাদক তুষার পন্ডিত জানিয়েছেন, বহু প্রাচীন এই মূর্তিটি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াবে।তাই সংগ্রহশালায় সংরক্ষণ করে রাখা হচ্ছে।”এদিন দেখা যায় ঘোষবাড়ির মহিলারা গলায় কাপড় দিয়ে হাতজোড় করে দেবীমূর্তিকে বিদায় জানাচ্ছেন। বিদায় দেওয়ার আগে মূর্তিটি জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটিও করছেন বাড়ির মহিলারা। তবুও মনখারাপের মাঝেও কিছুটা স্বস্তির ছায়া দেখা যায় তাদের চোখেমুখে ।।