এইদিন ওয়েবডেস্ক,১৭ এপ্রিল : সাম্প্রতিক সময়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যাওয়া নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় ওঠে । মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ঘুঁষ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার মত মারাত্মক অভিযোগ উঠেছিল । মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে আদানি গোষ্ঠী এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে টার্গেট করার জন্য ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানির কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। মামলাটি সংসদের এথিক্স কমিটির কাছে যায় এবং অভিযোগের সত্যতা প্রমানিত হলে মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যায় । নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করার পিছনে রাজনৈতিক কারন হলেও প্রশ্ন ওঠে যে কেন তৃণমূল, বামপন্থী, কংগ্রেস এবং দেশের তথাকথিত সেকুলাররা দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী গৌতম আদানিকে বারবার নিশানা করে ? আদানিকে নিশানা করার পিছনে কারন নিছক রাজনৈতিক না দেশকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা ?
বেশ কয়েক বছরের ঘটনাক্রম পর্যালোচনা করলে দেশের তথাকথিত সেকুলার ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলগুলির উদ্দেশ্য মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে যাবে ।
উল্লেখ্য যে ভারতে শিল্পপতিদের একটি সংগঠন রয়েছে যার নাম কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি অর্থাৎ (CII) । সিআইআই যখন তার সংবিধান তৈরি করেছিল, তখন সেই সংবিধানে স্পষ্টভাবে লেখা ছিল যে এই সংস্থাটি শুধুমাত্র ভারতীয় শিল্পের জন্য কাজ করবে। এই সংগঠনের প্লাটফর্মে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থাকবে না। ভারতীয় শিল্প থেকে আলাদা কোনো কার্যকলাপ থাকবে না । যখন থেকে এই সংগঠনটি গঠিত হয়েছে, শুধুমাত্র ভারতীয় শিল্পের সমস্যা, চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি নিয়ে এই সংগঠনের প্ল্যাটফর্মে আলোচনা করা হয়েছে… শিল্পের স্বার্থে, নিজেদের একটি দাবি সনদ তৈরি করে সরকারের কাছে তা উপস্থাপন করেছে । কিন্তু সিআইআই নিজেদের তৈরি সংবিধানকে লঙ্ঘন করে গুজরাট দাঙ্গার দুই বছর পর । সেই সময় সিআইআই এর একটি বৈঠক হয় । দেশে তখন কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকার ।
তখন কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি বা সিআইআই-এর চেয়ারম্যান ছিলেন মমতা ব্যানার্জির প্রথম ক্যাবিনেটের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র । দিল্লিতে সংগঠনের বিশেষ বৈঠকে সংস্থার নিজের তৈরি সংবিধান লঙ্ঘন করে গুজরাট দাঙ্গার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন অমিত মিত্র । চেয়ারম্যান অমিত মিত্র গুজরাটের নরেন্দ্র মোদী সরকারের ওপর বিষ উগরে দেন । অমিত মিত্র ছাড়াও থার্ম্যাক্সের চেয়ারম্যান অনু আগা,রাহুল বাজাজরাও নরেন্দ্র মোদী,হিন্দু এমনকি গোটা গুজরাটি সমাজের উপর বিষোদগার করেছিলেন ।
কিন্তু সিআইআই-এর নিজের তৈরি আইনকে লঙ্ঘন করে ব্যাবসায়িক বিষয় বাদ দিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা পছন্দ করেননি অনেকে । ফলশ্রুতি হিসাবে বৈঠকের মাঝেই ১২ জন শিল্পপতি উঠে চলে যান । যাঁদের মধ্যে ছিলেন ক্যাডিলার চেয়ারম্যান, নির্মার চেয়ারম্যান এবং গৌতম আদানি, রিলায়েন্সের প্রতিনিধি, রিলায়েন্স গ্রুপের প্রেসিডেন্ট পরিমল নাথওয়ানি, টাটা গ্রুপের প্রতিনিধি এবং গুজরাটের অনেক শিল্পপতি ।
এদিকে সিআইআই-এর এই বিতর্কিত বৈঠকের পর ২টি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল যে মনমোহন সিং এর কংগ্রেস সরকার, সোনিয়া গান্ধীর নির্দেশে অবিলম্বে রাহুল বাজাজ এবং অনু আগাকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিল, অর্থাৎ তাদের কার্যত পুরস্কৃত করেন সোনিয়া গাঁধি । অমিত মিত্র পরে মমতা ব্যানার্জির দলের নেতা হন এবং বাংলার অর্থমন্ত্রীত্ব পান ।
দ্বিতীয় বড় ঘটনাটি হল যে গুজরাটের সমস্ত শিল্পপতি আহমেদাবাদে ফিরে এসে একটি বড় সভা করেন এবং সিআইআই গুজরাট নামে তাদের নিজস্ব সংস্থা গঠন করেন। সিআইআই গুজরাট তৈরিতে গৌতম আদানি সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন । টাটা গোষ্ঠী, আম্বানি গোষ্ঠী সিআইআই গুজরাটের সাথে যুক্ত হয় । যেকারণে কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) একটি বড় ধাক্কার সম্মুখীন হয় । সিআইআই গুজরাটের বৈঠকে গৌতম আদানি বলেছিলেন যে যখন আমাদের সিআইআই সংস্থার সংবিধানে লেখা আছে যে আমরা কোনও রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলব না, তখন কেন সিআইআইকে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম করা হয়েছিল। তাই এখন আমাদের গুজরাটের শিল্পপতিদের নিজেদের সংগঠন করা উচিত কারণ সিআইআই গুজরাটের মানহানি করেছে । ভারতে এর আগেও ব্যাপক দাঙ্গা হয়েছে কিন্তু সিআইআই কখনও সেই রাজ্য বা সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে তার প্ল্যাটফর্মে বা সেখানকার লোকদের কথা উল্লেখ করেনি। সমগ্র রাজ্যের মানহানি করা হয়নি।’ এর পরে, সিআইআই সংস্থাও একটি বিবৃতি জারি করতে বাধ্য হয়েছিল যে কিছু শিল্পপতি আমাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে যা বলেছেন তার সাথে আমরা একমত নই। এই ঘটনার ঠিক পরেই, গৌতম আদানি কংগ্রেস তথা সোনিয়া গাঁধি, বামপন্থী, পরে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিদেশী মিডিয়ার লক্ষ্যবস্তু হয় ।
প্রসঙ্গত,দেশের ব্যবসায়ীরা যখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শক্তিশালী হয়, তখন দেশও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শক্তিশালী হয় । তাই অনেকে এটা মনে করছেন যে গৌতম আদানিকে আক্রমণ করে আদপে নিজের দেশকেই দুর্বল করার খেলায় মেতেছেন এক শ্রেণীর ব্যক্তিরা ও রাজনৈতিক দলগুলি ।।
তথ্যসূত্র : কৃতজ্ঞতা স্বীকার মডিফায়েড হিন্দু ৯ ।