প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১১ জুন : পায়খানার সেপটিক ট্যাঙ্কের চেম্বারে মধ্যে পড়েগিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে দম আটকে মৃত্যু হল দুই ভাইয়ের । দুই ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে সেপটিক ট্যাঙ্কের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁদের কাকাও ।শুক্রবার দুপুরে মর্মান্তিক এই মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের নাদনঘাট থানার ধর্মতলা এলাকায় । পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম সুকতারা সেখ(২১) ও সামাদ সেখ(২৫)।ধর্মতলা গ্রামেই তাঁদের বাড়ি। মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানোর পাশাপাশি পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।পুলিশের প্রাথমিক অনুমান সেপটিক ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে দম আটকেই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। একই দিনে দুই সন্তানের এমন অকাল মৃত্যুতে শেকে ভেঙে পড়েছেন মৃতদের পরিবার পরিজনারা।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে,পূর্বস্থলী-১ ব্লকের বগপুর পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম ধর্মতলা । এই গ্রামেরই বাসিন্দা মোক্তার সেখ । তাঁর বাড়িতে থাকা পায়খানার সেপটিক ট্যাঙ্কের চেম্বারে সমস্যা দেখা দেয়। তার জন্যে মোক্তার শেখের দুই ছেলে সুকতারা ও সামাদ এদিন বেলা ১১ টা নাগাদ পায়খানার সেপটিক ট্যাঙ্কের চেম্বারের ঢাকনা খুলে পাইপ লাইন লাগানোর কাজ শুরু করে । কাজ করার সময়ে আচমকাই সামাদ সেখ সেপটিক ট্যাঙ্কের গভীর চেম্বারে মধ্যে পড়ে যায়। দাদাকে বাঁচাতে গিয়ে ওই চেম্বারে মধ্যে পড়ে যায় ভাই সুকতারা সেখও । তা দেখে দুই ভাইপোকে বাঁচাতে যান কাকা আমিরচাঁদ সেখ। তিনিও চেম্বারে মধ্যে বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন ।পরিবারের লোকজনের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে পাড়ার লোকজন সেখানে ছুটে যান ।
তাঁরা তিনজনকে সেপটিক ট্যাঙ্কের চেম্বারের মধ্য থেকে উপরে তোলার চেষ্টা শুরু করেন । অনেক চেষ্টা চালিয়ে তারা আমিরচাঁদকে বাঁচাতে পারলেও বাঁচাতে পারেন নি সামাদ ও সুকতারাকে। ঘটনার খবর পেয়ে নাদনঘাট থানার পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান ।তাঁরা মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কালনা মহকুমা হাসপাতালে পাঠান ।
আমিরচাঁদ সেখ বলেন,‘পায়খানার দুটি সেপটিক ট্যাঙ্কের চেম্বারের ঢাকনা খোলার পর দেখা যায় একটি চেম্বারে জল নেই । সেই কারণে কিছুটা ফুটো করতেই জল ভরে যায় পয়খানার চেম্বার। তারই মধ্যে পাইপ লাগাতে গিয়ে বড় ভাইপো চেম্বারে পড়ে যায়।তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে ছোট ভাইপোও চেম্বারের মধ্যে পড়ে যাওয়া । তিনি তাঁদের চেম্বার থেকে তোলার চেষ্টা করেন । ওই সময়ে তিনিও চেম্বারে পড়ে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন।চোখে অন্ধকার দেখতে থাকেন । পাড়ার লোকজন তাঁকে উদ্ধার করতে সক্ষম হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান । পরিবার সদস্যরা জানিয়েছেন,সামাদ রাজমিস্ত্রীর কাজ সহ পাইপলাইনের কাজ করতো।স্থানীয় বিদ্যালয়ে নবম শ্রেনীতে পড়তো তাঁর ছোট ভাই সুকতারা । তাঁদের বাবা শারীরিক অসুস্থতার কারণে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। সামাদই ছিল পরিবারের একমাত্র রোজগারে ব্যক্তি।দুই ছেলের মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পরিবার সদস্যরা ।।