এইদিন ওয়েবডেস্ক,উত্তর ২৪ পরগণা,১৩ এপ্রিল : উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালিতে মহিলাদের রাতে পিঠা করে দেওয়ার নাম করে তৃণমূলের পার্টি অফিসে ডেকে নিয়ে গিয়ে গনধর্ষণ এবং নিরীহ গ্রামবাসীদের জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে জোর করে দখল করে মাঝের ভেড়ি বানানোর মত মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে । যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কথায় সন্দেশখালিতে “ছোটখাটো কিছু ঘটনা ঘটেছে” । যদিও মুখ্যমন্ত্রীর সেই দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনার (NHRC) সাফ জানিয়েছে যে সন্দেশখালির মহিলাদের তৃণমূল পার্টি অফিসে ডেকে এনে গণধর্ষণের অভিযোগ আদপেই মিথ্যা নয় । কমিশনের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে এই বিষয়ে লেখা হয়েছে, এনএইচআরসি পশ্চিমবঙ্গের সন্দেশখালীতে ঘটনাস্থলে তদন্তে গিয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমান পেয়েছে ।’ কমিশন জানিয়েছে যে তৃণমূলের পার্টি অফিসে ডেকে মহিলাদের গণধর্ষণের অভিযোগ মিথ্যা নয়,বরঞ্চ অভিযুক্তরা রাজনৈতিক প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকেই অভিযোগ করতে পারেননি। কমিশন জানিয়েছে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ নিল, তা নিয়ে আট সপ্তাহের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে ।
আজ শনিবার (১৩ এপ্রিল ২০২৪) প্রেস রিলিজে কমিশন বলেছে,’কমিশন তার স্পট তদন্ত প্রতিবেদনটি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব এবং ডিজিপির কাছে পাঠিয়েছে যাতে প্রতিটি সুপারিশের উপর আট সপ্তাহের মধ্যে একটি অ্যাকশন টেকন রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। তথ্যের ব্যাপক প্রচারের জন্য কমিশন তার ওয়েবসাইটে স্পট তদন্ত প্রতিবেদন আপলোড করার নির্দেশ দিয়েছে।’
কমিশন বলেছে,’স্মরণ করা যেতে পারে যে চলতি বছরের ২১ শে ফেব্রুয়ারী, এনএইচআরসি, দেশের প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার রিপোর্টের স্বতঃপ্রণোদনা নিয়েছিল যে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালীতে একটি গোষ্ঠী দ্বারা নিরীহ ও দরিদ্র মহিলারা হয়রানি ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। স্থানীয় এক রাজনৈতিক ব্যক্তির দল, যার ফলশ্রুতিতে, গত কয়েকদিন ধরে স্থানীয় গ্রামবাসীরা বিভিন্ন গুন্ডা ও অসামাজিক উপাদান দ্বারা সংঘটিত ভয়ঙ্কর অপরাধের অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করলেও স্থানীয় প্রশাসন অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয় ।’
কমিশন জানিয়েছে,’এর প্রতিক্রিয়ায়, পশ্চিমবঙ্গের ডিজি এবং আইজিপির সঙ্গে ২৯ ফেব্রুয়ারী যোগাযোগের মাধ্যমে, যা প্রকাশ করেছে যে মোট ২৫ টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে যার মধ্যে ৭ টি মামলা মহিলাদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধের অভিযোগে এবং ২৪ জন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এই ঘটনায় পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারেরও চেষ্টা চলছে। পুরো সন্দেশখালী পিএস ও নাজাট পিএস এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে বর্ণনা করা হয়েছে।’
কমিশন বলেছে,’এনএইচআরসি তদন্ত দল দেখেছে যে ক্ষতিগ্রস্তদের হৃদয় থেকে এই ব্যক্তিদের ভয়কে উপড়ে ফেলা দরকার যাতে তারা তাদের পরিবারের সাথে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে এবং সমাজে মর্যাদা ও গর্বের সাথে বেঁচে থাকার আস্থা অর্জন করতে পারে । জেলা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হল এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সাধারণভাবে এবং বিশেষ করে ভুক্তভোগীদের মধ্যে আস্থা জাগ্রত করার জন্য ধারাবাহিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাতে অন্য যারা অপরাধের শিকার হয়েছে তারা এগিয়ে এসে তাদের অভিযোগ দায়ের করতে পারে।’ এন এইচ আর সির রিপোর্ট অনুযায়ী, তৃনমূল নেতা শেখ শাহজাহানের দুই সাগরেদ শিবু হাজরা, উত্তম সর্দাররা সবরকম অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল । যদিও তৃণমূলে কুণাল ঘোষ যথারীতি কমিশনের এই রিপোর্টকে “পক্ষপাতদুষ্ট” বলে অবিহিত করেছেন ।।