এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১০ জুন : পুকুর সংস্কারের কাজ করার সময় উদ্ধার হয়েছিল প্রাচীন দেবীমূর্তি । পরে জানা যায় ওই শিলামূর্তিটি ‘অষ্টভূজাপিতা মারিচী’ দেবীর মূর্তি । মূর্তিটি উদ্ধারের পর বাড়ির ঠাকুরঘরে রেখে সকাল-সন্ধ্যা ভক্তিভরে পুজোর্চ্চনাও করছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার দাঁইহাট পূর এলাকার বেড়াগ্রামের বাসিন্দা জনৈক ঘোষ পরিবার । কিন্তু তারপর থেকেই পরিবারে একের পর এক অঘটন ঘটতে শুরু করে । স্থানীয়রা বিষয়টি কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দিলেও তা মানতে নারাজ ওই পরিবারের লোকজন । তাঁদের দাবি পূজোর ত্রুটির কারনেই অঘটন ঘটছে । এই কারনে আড়াই মাস আগে উদ্ধার হওয়া মূর্তিটি নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে পরিবারটি । এখন তাঁরা প্রাচীন মূর্তিটি সরকারকে হস্তান্তর করতে চাইছেন ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,গত মার্চ মাসে বেড়াগ্রামের বাসিন্দা জনৈক উদয় ঘোষ, দিলীপ ঘোষদের একটি পুকুর সংস্কারের কাজ শুরু হয় । দাঁইহাট পুরসভা যাওয়ার রাস্তার কিছুটা পাশেই রয়েছে ওই পুকুরটি । গত ২৫ মার্চ মেশিন দিয়ে পুকুরের পাঁক তোলার সময় প্রায় সাড়ে চারফুট উচ্চতার ওই প্রাচীন শিলামূর্তিটি পাঁকের সঙ্গে উঠে আসে । মূর্তিটি আদপে এক দেবীর । দেবীর তিনটে মাথা, আটটি হাত আছে । দেবীর প্রতিটি মুখে আছে তিনটে করে চোখ । দেবীর মধ্য মুখটি শান্ত । ডান দিকের মুখ ক্রুদ্ধ ভঙ্গিমায় । বাম দিকের মুখাবয়ব বরাহ আদলের । দেবীর আটটি হাতে সূচ, সুতো, অঙ্কুশ, রজ্জু, তীর, ধনুক, বজ্র এবং অশোক গাছের ডাল।সম্পূর্ণ দেবীমূর্তিতে দাঁড়িয়ে একটি রথের উপর । সেই রথটা টেনে নিয়ে যাচ্ছে সাতটা বরাহ । ইতিহাস গবেষকরা জানিয়েছেন,শাস্ত্রের ভাষায় এই দেবী অষ্টভুজাপিতা মারিচী । মূর্তি প্রায় ১৩০০ বছরের প্রাচীন বলে জানিয়েছেন দাঁইহাটের বাসিন্দা ইতিহাসবিদ লেখক অশেষ কয়াল ।
এদিকে মূর্তি উদ্ধারের পর সেটি নিজেদের কাছেই রেখে দেন উদয়বাবুরা । সকাল সন্ধ্যা দু’বেলা ভক্তিভরে পুজোর্চ্চনাও করে যাচ্ছেন তাঁরা । উদয় ঘোষ,দিলীপ ঘোষদের কথায়, ‘দেবীমূর্তি নিয়ে আসার তিন দিনের মাথায় আমাদের বাড়ির চারটে মোষ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যায় । দশ দিনের মাথায় ঘরের চাল ছাওয়ানোর সময় পড়ে গিয়ে গুরুতর জখম হয় বাড়ির ছেলে বাসুদেব(৩০) । তারপর একদিন ঝড়বৃষ্টির সময় বাড়িতে বাজ পড়ে । তার আওয়াজে আমাদের বাড়ির এক শিশুর শ্রবন শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে । আমাদের ধারনা মূর্তিটি আনার জন্যই এই সমস্ত ঘটনা ঘটছে ।’
যদিও স্থানীয়দের একাংশের দাবি,সমস্ত পরিবারেই কিছু না কিছু বিপদ আপদ ঘটে থাকে । তার সঙ্গে মূর্তি পুজোর কোনও যোগ থাকতে পারে না । তবে উদয়বাবুরা বলেন, ‘গ্রামের অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বলছেন শাস্ত্র মেনে পূজো না করার জন্যই বাড়িতে এইসব অঘটন ঘটছে । তাই আমরা মূর্তিটি আর বাড়িতে রাখতে চাই না । প্রশাসন মূর্তিটি নিয়ে গিয়ে কোনও সংগ্রহশালায় রেখে দিক । আমরা এনিয়ে আবেদনও জানিয়েছি ।’
এই বিষয়ে কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন,” বেড়াগ্রামের একটি পরিবারের পক্ষ থেকে প্রাচীন দেবীমূর্তি উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে । মূর্তিটি কাটোয়া মহকুমা গ্রন্থাগারে রেখে দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে ।’।