এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,০৯ এপ্রিল : নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর, পুলিশ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা পরিচয় দিয়ে ফেসবুকে একাধিক ভূয়ো অ্যাকাউন্ট খুলেছিল বাংলাদেশের শরীয়তপুর জেলার সোহাইল ভোলার দৌলতখান উপজেলার মাওলানা বাড়ির মোহম্মদ সালাউদ্দিনের ২৭ বছরের ছেলে মোহম্মদ সোহাইল । তারপর সে একের পর এক কিশোরী, তরুনী ও বিবাহিতা মহিলাকে প্রেমের জালে ফাঁসাতে শুরু করে । ওই সমস্ত নারীদের মুখ দিয়ে অশ্লীল কথা বলিয়ে এবং তাদের অশ্লীল ভিডিও রেকর্ড করে রেখে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে ব্লাকমেলিং করতে শুরু করে ওই যুবক । এভাবে প্রায় ২১১ মহিলার কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে নেয় সে । অবশেষে রবিবার শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানা এলাকা থেকে গুনধর মোহম্মদ সোহাইলকে পাকড়াও করেছে বাংলাদেশের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। তাঁর কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন কোম্পানির ১২টি সিম কার্ড, চারটি স্মার্টফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে । সেই সব মোবাইল ফোনে অসংখ্য নারীর আপত্তিকর ছবি, নগ্ন ভিডিও ও স্ক্রিনশট রয়েছে বলে জানা গেছে ।
একটি বিবৃতিতে এপিবিএন-১২ জানিয়েছে, বাংলাদেশের শেরপুরের নড়িয়া উপজেলার একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করত মোহম্মদ সোহাইল । সে সেনাবাহিনীর মেজর, পুলিশ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা পরিচয়ে ফেসবুকে আইডি খুলে মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলত । মোহম্মদ সোহাইল মূলত মেয়েদের সঙ্গে আপত্তিকর কথা বলে রেকর্ড করে রাখত। পরে সেই কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করত । কোনো মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সময় কেউ সন্দেহ করলে তাঁকে ব্লক করে দিত সোহাইল।
এপিবিএনের পরিদর্শক এসএম মাহমুদুর রহমান জানান, সোহাইল ৫০ টিরও বেশি ম্যারেজ মিডিয়ায় নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে পাত্রী চেয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। পরে যোগাযোগকারী নারীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাঁদের গোপন ছবি, ভিডিও নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতেন। এমন প্রতারণার অভিযোগে গত বছরের ২৫ অক্টোবর ডিএমপির সবুজবাগ থানায় একই ধরনের প্রতারণার অভিযোগে করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এরপর জামিনে বেরিয়ে এসে ফের সে একই ধরনের প্রতারণা করতে শুরু করে ।
তিনি বলেন, মোহম্মদ সোহাইল ২০২১ সাল থেকে মূলত উঠতি বয়সী তরুণীদের টার্গেট করে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলত । পরবর্তীতে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য সে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অফিসারের ছবি সংগ্রহ করে তাঁর আইডিতে নিয়মিত পোস্ট করত । সেই সঙ্গে তরুণীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে আমেরিকা নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে টাকা আদায় করত । এছাড়াও সে কৌশলে বিভিন্ন বিকাশ ব্যাঙ্ক নম্বরে( টাকা আদায় করত ।
মাহমুদুর আরও বলেন, সোহাইল নিজেকে এমন ভাব দেখাত যে সে কোটিপতি। তাঁর মা আমেরিকার চিকিৎসক এবং সেখানকার নাগরিক । একজন নারীর নামের আগে ডাক্তার লিখে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে তিনি নিজেই মা সাজত সোহাইল । পরে ওই আইডি থেকেও মেজর ছেলের জন্য পাত্রী চেয়ে বিজ্ঞাপন দিত সে । তারপর আগ্রহীদের ছেলের আইডি ও ফোন নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলত । এছাড়াও সে কোনো এক অপারেশনে তাঁর অনেক সহকর্মী আহত হয়েছে, তাঁদের চিকিৎসা করাতে টাকা লাগবে বলে মহিলাদের কাছ থেকে টাকা নিত । এমনকি বহুতল বাড়ির ছবি পাঠিয়ে বলত যে বাড়ির কাজ চলছে কিন্তু সে তার মানিব্যাগ ফেলে এসেছে লেবারদের বেতন দিতে হবে, টাকা নেই। শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার নাম করে টাকা ধার নিয়েও আত্মসাৎ করত গুনধর মোহম্মদ সোহাইল ।’ এদিকে সোহাইলের এই প্রকার প্রতারণার ঘটনার কথা চাওড় হতেই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে জেলা জুড়ে ।।