এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),০৮ এপ্রিল : একদিকে পুকুর ভর্তি আগাছার জঙ্গল । তার ওপর তীব্র দাবদহে হু হু করে কমছে জল । ফলে অক্সিজেনের অভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে বড় বড় মাছ জলের উপর উঠে খাবি খাচ্ছে । আর সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার পুকুরের পাড়ের বাসিন্দারা করছে বলে অভিযোগ । এখন পুকুরের মাছ বাঁচাতে বিনিদ্র রাত কাটছে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার বাজারের সন্তোষসায়ের পাড়ের বাসিন্দা সুশান্ত দত্ত নামে এক হোটেল ব্যবসায়ী ও তার পরিবারের ।
ভাতারে বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কের পাশে বাড়ি সুশান্ত দত্তর । তার বাড়ির সংলগ্ন রয়েছে ভাতাড় ব্লকের কুলচন্ডা মৌজার অন্তর্গত ১৪৩৬ এবং ১৪৭৫ খতিয়ানে ১ একর ৭৩ শতক জলকর বিশিষ্ট “সন্তোষসায়ের” নামে একটি পুকুর। ২০১৭ সালে নভেম্বরে বর্ধমান শহরের বাসিন্দা স্বর্গীয় অমরনাথ তা-এর বংশধরদের কাছ থেকে ওই পুকুরটি স্ত্রী সঙ্ঘমিত্রা দত্ত ও নিজের নামে নামে খোশকবালা করেছিলেন সুশান্তবাবু । পুকুর কেনার পর প্রায় এক লক্ষ টাকার চারা মাছ ছাড়েন তিনি । কিন্তু তারপর থেকেই স্থানীয়দের একাংশের বিরোধিতায় তিনি পুকুরের দখল পাননি । স্থানীয়দের অভিযোগ যে পুকুরটি এক নম্বর খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত বা ভেস্টেট এবং সেটি বেআইনিভাবে কেনাবেচা হয়েছে । যদিও সুশান্তবাবু জানিয়েছেন যে সাম্প্রতিক সময়ে ভাতার ব্লক ভূমি সংস্কার অফিসে আরটিআই করা হয়েছিল এবং ভূমি দপ্তর সাফ জানিয়েছে যে পুকুরটি রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করেনি ।
জানা গেছে,বিগত প্রায় সাত বছর ধরে চলায় বিবাদের নিষ্পত্তি আজও হয়নি । এমনকি মাছ ধরতে গেলে সুশান্ত দত্তকে আক্রান্ত হতে হয় বলে অভিযোগ । সেই ভয়ে দীর্ঘ প্রায় সাত বছর পুকুরের সংস্কারের কাজ করতে পারেননি তিনি । এদিকে বিগত কয়েকদিন ধরে তীব্র তাপ প্রবাহ চলায় পুকুরের জল হু হু করে কমতে শুরু করেছে । তারপর পুকুরের জলের ওপর জমে থাকা ঘন আগাছার জঙ্গলের কারণে জলে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিয়েছে । আর অক্সিজেনের অভাবে রবিবার থেকে পুকুরের ৫ থেকে ১০ কেজি ওজনের মাছের ঝাঁক জলের ওপরে উঠে খাবি খাচ্ছে। সুশান্তবাবু অভিযোগ,’এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে পুকুর পাড়ের বাসিন্দারা । এমনকি রাতের বেলায় বড় বড় ইঁট ছুঁড়ে তারা পুকুরের জলের মাছ মারার চেষ্টা করছে । পুকুরের ওপার থেকে এত জোরে ইঁটপাটকেল ছোড়া হচ্ছে যে আমার বাড়ির ছাদে এসে পড়ছে । সারারাত জেগে মাছ আগলাচ্ছি । কিন্তু আমি ও আমার ভাই অসুস্থ । বাড়িতে দুই মহিলা রয়েছে । তাদের পক্ষে মাছ আগলানো সম্ভব নয় । আর আমরা আর কতদিন এভাবে রাত জেগে মাছ পাহারা দেব ? দামি দামি মাছগুলো হয়তো আর বাঁচাতে পারবো না । আমাকে বহু টাকার খতির মুখে পড়তে হবে ।’
জানা গেছে, পুকুর পাড়ের বাসিন্দা ৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে জানা গেছে,আজ ভাতার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন সুশান্ত দত্ত। অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন যে বেশ কিছু মাছ মরে গিয়ে পুকুরের জলে ভাসছে । আর তা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে । তাই তিনি দূষণ থেকে বাঁচতে মরা মাছগুলি পুকুরের জল থেকে তোলার চেষ্টা করেছিলেন । আর তখনই পুকুর পাড়ে অবৈধভাবে বসবাস করা ওই তিন ব্যক্তি তাকে অস্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছে । তাকে এবং তার বাড়ির লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি ইঁটপাটকেল ছোড়ে । এ বিষয়ে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি পুলিশের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ।
সুশান্তবাবু বলেন, পুকুরপাড়ের বাসিন্দাদের দাবি যে পুকুরটি এক নম্বর খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত । যদি তাই হবে তাহলে ভূমি দপ্তর পুকুরটি এক নম্বর খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করছে না কেন ? যতবারই আমরা সার্চিং করেছি ততবারই বিএলআরও অফিস থেকে বলা হয়েছে যে আরএস খতিয়ান অনুযায়ী পুকুরের জায়গাটি রাজ্য সরকারের ভেস্টেড কালিকাভুক্ত নয়।’ তিনি অভিযোগ তুলেছেন ভাতার বাজারের এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার ইন্ধনে পুকুরপাড়ের বাসিন্দাদের একাংশ তাকে পুকুরের দখল নিতে দিচ্ছে না । তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নেতাকে ভাতারের ‘শেখ শাহজাহান’ বলে অবিহিত করেছেন ।।