এইদিন ওয়েবডেস্ক,জম্মু-কাশ্মীর,০৮ এপ্রিল : জম্বু কাশ্মীরের মুসলিমদের পাকিস্তান প্রেম আজকের নয় । জম্বু কাশ্মীরের শেষ ডোগরা রাজা হরি সিং-এর সময় থেকেই তার সেনাবাহিনী ‘ফতেহশিবজি’-এর ২ কোম্পানি মুসলমান সেনা শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল । এমনকি দেশ ভাগের পর থেকেই জম্মু-কাশ্মীরের মুসলিম নেতাদের একটি অংশ নো-ট্যাক্স প্রচার শুরু করেছিল । বিশেষ করে পুঞ্চ অঞ্চলে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে দিয়েছিল মুসলমানরা । ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে অবিভক্ত জম্মু-কাশ্মীরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং আফ্রিদি বংশের লোকেরা ৫০০ ট্রাকে চড়ে ভারী অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর আক্রমণ করলে বিশ্বাসঘাতকতা করে দেয় হরি সিং এর ‘ফতেহশিবজি’ বাহিনীর ২ কোম্পানি মুসলমান সেনা । আজ সেই ইতিহাস অনেকেরই অজানা ।
১৯৪৭ সালের ২১-২২ অক্টোবর মধ্যবর্তী রাতে, কাশ্মীরকে সংযুক্ত করার জন্য চুক্তি সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করে ‘অপারেশন গুলমার্গ’ শুরু করে পাকিস্তান , প্রায় ৫,০০০ পাকিস্তানি মুসলিম হানাদার আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত, পাকিস্তানি অফিসারদের নেতৃত্বে জম্মু ও কাশ্মীরের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করে এবং ঘুমন্ত শহর মুজাফফরাবাদে হামলা চালায়। কয়েক ঘন্টার মধ্যে নগরীকে কার্যত নরকে পরিনত করে তারা । জম্মু-কাশ্মীরের বাহিনীর প্রাচীনতম ব্যাটালিয়ন, যা ‘ফতেহশিবজি’ নামে পরিচিত,এতে চারটি কোম্পানি ছিল- দুটি ডোগরা এবং দুটি মুসলমান সেনাবাহিনী । মুসলিম সেনার বেশিরভাগই মিরপুর-পুঞ্চ এলাকার।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে সহযোগিতায় ব্যাপক নাশকতা এবং গনধর্ষণের পরিকল্পনা সম্পর্কিত বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের কারণে, মহারাজা হরি সিং তার সেনাকর্তা নারায়ণ সিং-এর ব্যাটালিয়নের মুসলিম কোম্পানিগুলির আনুগত্য সম্পর্কে শঙ্কিত ছিলেন। কিন্তু কর্নেল নারায়ণ সিং ধর্মের ভিত্তিতে সৈন্যদের আনুগত্যকে কখনোই অবিশ্বাস করতে পারেননি । বহু অভিজ্ঞ মানুষ ডোগরা আর্মির মুসলিম সেনাকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার সময় ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন । কিন্তু ডোগরা আর্মির প্রধান কর্নেল নারায়ণ সিং তার ব্যাটালিয়নের মুসলিম সৈন্যদের অবিশ্বাসের আশঙ্কাকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন । কারণ তিনি গত ছয় বছর ধরে রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীর মুসলিম সৈন্যদের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।অধিকন্তু, চতুর্থ ব্যাটালিয়নের সম্ভবত সমস্ত পদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের সেরা রেকর্ড ছিল। যাইহোক, নারায়ণ সিংকে বারবার সতর্ক করা হয়েছিল এবং পাকিস্তানের প্রতি মুসলিম সেনার ধর্মীয় ঝোঁক সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি নিজের মুসলিম সেনার প্রতি তার পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছিলেন। পরবর্তীকালে মুসলিম সৈন্যদের প্রতি বিশ্বাসের জন্য ভারী মূল্য দিতে হয়েছিল তাকে এবং জম্মু-কাশ্মীরের হিন্দুদের ।
একই রাতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আসলাম খান কর্নেল নারায়ণ সিংকে হত্যা করে। মহারাজা হরি সিং এর মোমিন সেনারা বিশ্বাসঘাতকতা করে ‘ফতেহশিবজি’-এর ২ কোম্পানি ডোগরা সেনাকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করে এবং পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের সাথে তারা প্রথম জয়লাভ করে।
মিরপুরে প্রায় ২০,০০০ হিন্দুকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী… মহারাজার বাহিনীর মুসলিম সৈন্য ও অফিসাররাও হিন্দুদের ওপর একের পর এক ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড চালায়! মিরপুর কালেক্টরেটে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করে তারা ।
এই বিষয়ে মহারাজা হরিসিংকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছিল । ফলে তার পরেও মহারাজা রাজৌরিকে বাঁচাতে আরেকজন কর্নেল রহমতুল্লাহ ও ডোগরা বাহিনীর মেজর নাসরুল্লাহর নেতৃত্বে ডোগরা বাহিনী পাঠান। কিন্তু তারা রাজা হরি সিং এবং কাশ্মীরের পিঠে আবার ছুরিকাঘাত করে । কর্নেল রহমতুল্লাহ এবং মেজর নাসরুল্লাহ এবং তাদের মোমিন সৈন্যরা মহারাজার ডোগরা সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত সমস্ত গোর্খা সৈন্যদের হত্যা করে এবং ২৭ অক্টোবর রাজৌরির বাইরে ছাচেরা বন দখল করে পাকিস্তানি সেনা । পাশাপাশি চলে নির্মম গণহত্যা আর গনধর্ষণের ঘটনা ।
মহারাজার ডোগরা বাহিনীর এই সমস্ত মুসলিম সেনা অফিসাররা সরাসরি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল এবং পাকিস্তানের হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল । এই বিশ্বাসঘাতকরা পরিনতি হিসাবে জম্মু-কাশ্মীরের প্রায় ৫০ শতাংশ পাকিস্তানের দখলে চলে যায় ।
ভারত ও মহারাজা হরি সিং-এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং হাজার হাজার হিন্দুকে হত্যা ও ধর্ষণের বিনিময়ে পাকিস্তান মোহাম্মদ আসলাম খানকে ‘ফকর-ই-কাশ্মীর’ এবং ‘হিলাল-ই-জুররাত’ উপাধি দেয় । কর্নেল রহমতুল্লাহকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার হিসেবে নিয়োগ করা হয় ।।