এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),০৬ এপ্রিল : নিজের খাবার হোটেলের সামনে ৫-৭ কেজি ওজনের একটা মরা কার্প জাতীয় মাছ সযন্তে বস্তা চাপা দিয়ে রেখে দিয়েছেন এক প্রৌঢ় ব্যবসায়ী । পথচলতি মানুষকে ডেকে ডেকে সেই মাছ বের করে দেখিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখে বলছেন,’দেখো, দামি দামি মাছগুলো কিভাবে মরছে ! পঞ্চায়েত আমাকে পুকুরের আগাছা পরিষ্কারের অনুমতি দিল না, আর আমার সব মাছ এভাবেই মরে যাচ্ছে । বহু টাকার ক্ষতি হয়ে গেল আমার ।’
আসলে ঘটনাটি পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার বাজারের রামকৃষ্ণপল্লি এলাকার । ব্যবসায়ীর নাম সুশান্ত দত্ত । বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কের ঠিক পাশেই বাসস্থান ও বাসস্থান সংলগ্ন খাবার হোটেল রয়েছে তার । হোটেলের ব্যবসা করে একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি । বর্তমানে স্ত্রী, এক ভাই ও ভাইয়ের পরিবার নিয়ে তার সংসার । মোটামুটি সুখেই কাটছিল জীবন । কিন্তু বাসস্থানের পাশেই ভাতাড় ব্লকের কুলচন্ডা মৌজার অন্তর্গত ১৪৩৬ এবং ১৪৭৫ খতিয়ানে ১ একর ৭৩ শতক জলকর জলকর বিশিষ্ট “সন্তোষসায়ের” নামে একটি পুকুর কেনার পর থেকেই সুশান্তবাবু অতান্তরে পড়েছেন ।
পুকুরটির মালিক বর্ধমান শহরের বাসিন্দা অমরনাথ তা । যদিও বর্তমানে তিনি আজ জীবিত নেই । ২০১৭ সালে নভেম্বরে অমরনাথ তা-এর বংশধরদের কাছ থেকে ওই পুকুরটি স্ত্রী সঙ্ঘমিত্রা দত্ত ও নিজের নামে নামে খোশকবালা করেছিলেন বলে দাবি সুশান্ত দত্তর ।
জানা যায়,পুকুরটি কেনার পর থেকেই স্থানীয় কিছু মানুষের রোষের মুখে পড়তে হয় সুশান্তবাবুকে । তাদের দাবি যে “সন্তোষসায়ের” নামে ওই পুকুরটি এক নম্বর খতিয়ানের অন্তর্গত । মাছ ধরতে গিয়ে তাদের হাতে শুশান্তবাবুকে আক্রান্তও হতে হয় বলে অভিযোগ । বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায় ।
সুশান্ত দত্তর কথায়,’কেনার দু’বছর আগে থেকে পুকুরটি লিজ নিয়ে চাষ করছিলাম । কিন্তু পুকুরটি কেনার পর থেকেই স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা মাছ তুলতে দিচ্ছে না । ভাতার ভূমি সংস্কার অফিস স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে পুকুরটির রাজ্য সরকার দখল নেয়নি অর্থাৎ ১ নম্বর খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত নয় । অথচ কোনো সহযোগিতা পাচ্ছিনা ভাতার বিএলআরও অফিস এবং ভাতার থানার কাছ থেকে । বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে বারবার জড়িয়েও কোনো সুরাহা হচ্ছে না ।
তিনি জানিয়েছেন যে কয়েক বছর আগে তিনি পুকুরে লক্ষাধিক টাকার মাছ ছেড়েছিলেন। আজও সেই মাছ তুলতে দেওয়া হয়নি । এমনকি পুকুরের জমে যাওয়া ঘন আগাছা পর্যন্ত পরিষ্কার করতে দিচ্ছে না । তাই আগাছা পরিষ্কারের জন্য সম্প্রতি তিনি ভাতার গ্রাম পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন । কিন্তু তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি । এদিকে একের পর এক বড়বড় মাছ মরছে । অধিকাংশ মাছ পুকুরপাড়ের বাসিন্দারা জল থেকে গোপনে তুলে নিচ্ছে বলে অভিযোগ তার ।
সুশান্ত দত্তর অভিযোগ,’পুকুর ভরাট করে ঘরবাড়িও হচ্ছে । শুনছি নাকি, তাদের মধ্যে কেউ কেউ সরকারি আবাস যোজনার অনুদানও পেয়েছে । তাদেরই উসকে দিয়ে আমাকে পুকুরের দখল নিতে দিচ্ছে না ভাতারে শাসকদলের এক প্রভাবশালী নেতা । অথচ ওই নেতা নিজেই ভাতার বাজারে একটা পুকুরের সিংহভাগ অবৈধভাবে বুজিয়ে ফেলেছে । প্রভাবশালী ও ধনী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার কেউ নেই ।’
বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাতার গ্রাম পঞ্চায়েতের এক সদস্য বলেন,’সন্তোষসায়ের’ নামে ওই পুকুরটি ঘিরে বহু জলঘোলা হয়েছে । বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে । তাই পঞ্চায়েত এই বিষয়ে মাথা ঘামাতে চাইছে না ।’
তাহলে ওই পুকুরটির ভবিষ্যৎ কি ? সুশান্তবাবু বলেন, ‘আমি ফের জেলা শাসককে বিষয়টি জানাব । দেখি কিছু সুরাহা হয় কিনা । এখন সব কিছুই জেলাশাসকের হাতে ।’।