এইদিন ওয়েবডেস্ক,বার্লিন,০৪ এপ্রিল : ইউরোপের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি জার্মানিতে মুসলিম শরণার্থী মূর্তিমান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে । নিত্যদিন অভিবাসীরা কোন না কোন অপরাধ সংগঠিত করছে । এবারে অভিবাসীদের প্রতীক করা মনোভাব নিতে শুরু করেছে জার্মান সরকার । তারই প্রতিফলন দেখা গেল গত মাসের শেষের দিকে বার্লিন সেন্ট্রাল রেলস্টেশনে । সন্ত্রাসী হামাসের সমর্থনে বেশ কিছু হিজাবি মুসলিম মহিলা রেল স্টেশনে বিক্ষোভ দেখাতে এসছিল । চাঁদের হাতে ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা এবং ইজরায়েল বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান লেখা ফেস্টুন । যদিও পুলিশ করা হাতে তাদের বিক্ষোভকে দমন করে ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে যে একাধিক পুলিশ অফিসারকে হিজাব পরা এক মহিলাকে ধরে মাটিতে ফেলে দিয়েছে । একজন পুলিশ কর্মী ওই মহিলাকে টিপে ধরে আছে এবং অপরজন তাই হিজাব টেনে খুলে ফেলে দিচ্ছে । মহিলাকে চিৎকার করে বলতে শোনা গেছে, ‘এটা কি হচ্ছে ? কি করছ তোমরা ?’ জানা গেছে যে অন্য বিক্ষোভকারীদের পাশাপাশি ওই মহিলা কাউকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । পুলিশের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে বিক্ষোভটি অননুমোদিত ছিল এবং ট্রেন যাত্রীদের সমস্যার সৃষ্টি করছিল,কিছু বিক্ষোভকারীকে অপরাধমূলক স্লোগান দেওয়ার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে ।
প্রসঙ্গত, জার্মানিতে ইজরায়েল বিরোধী বিক্ষোভ বা সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে । তার পরেও গত শনিবার ফিলিস্তিনি ভূমি দিবসের বার্ষিকী বিক্ষোভে এবং গাজায় ইসরায়েলের অভিযান বন্ধের দাবিতে ইউরোপের বিভিন্ন শহর লন্ডন, প্যারিস, আরহাস, কোপেনহেগেন, হেলসিংবার্গ, মিলান সহ জার্মানির বার্লিনসহ একাধিক শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে মুসলিম মহিলা পুরুষরা ।
লন্ডনে, বিক্ষোভকারীরা গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ফিলিস্তিনি পতাকা এবং ব্যানার বহন করে বিখ্যাত ট্রাফালগার স্কোয়ারে মিছিল করে । বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রির কারণে ব্রিটিশ সরকারকে গণহত্যায় জড়িত বলে অভিযুক্ত করেছে । ইসরায়েলকে অস্ত্র রপ্তানি অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে । জার্মানির বার্লিনে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার জন বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে । এছাড়াও স্টুটগার্ট, মিউনিখ এবং কোলনে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ।আমস্টারডামে, বিক্ষোভকারীরা ড্যাম স্কয়ারে জড়ো হয়েছিল এবং তারপরে কেন্দ্রীয় ট্রেন স্টেশনের দিকে রওনা হয়েছিল । তাদের হাতে ছিল “দুর্ভিক্ষ বন্ধ করুন” এবং “নেদারল্যান্ডস, লজ্জা অনুভব করুন, আপনার হাত রক্তে রঞ্জিত” প্রভৃতি লেখা পোস্টার ।
সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভের আয়োজক গোষ্ঠীগুলির মধ্যে একটি, ইউরোপীয় যুব সমিতির (এজিডি) নেদারল্যান্ডস কর্মকর্তা মুরাত গোক তার বক্তৃতায় ইসরায়েলের কথিত ‘দখলদারিত্ব এবং সংযুক্তি নীতি’র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইসরায়েল গাজায় ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। গত ছয় মাসে, ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় তার হামলায় ১৪,০০০-এরও বেশি শিশু সহ ৩২,০০০ – এরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং এখন আরও লক্ষাধিক ক্ষুধার্ত রয়েছে ।’
প্রসঙ্গত,ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গত বছরের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটায় । ১,২০০ জন শিশু,নারী ও পুরুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে । ২৫০ জনের অধিক মানুষকে পনবন্দি করে গাজায় নিয়ে যায় । তারপরেই গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল । যা এখনো অব্যাহত আছে । সন্ত্রাসী হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে যে ইজরায়েলী অভিযানে এযাবৎ ৩২,৭০৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং ৭৫,১৯০ জন আহত হয়েছে। এছাড়া অন্তত ৭,০০০ লোকের জন্য হিসাব নেই,আশঙ্কা করা হচ্ছে যে পুরো স্ট্রিপ জুড়ে ওই লোকজন তাদের বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে মৃত অবস্থায় চাপা পড়ে আছে । ফিলিস্তিনি সংস্থাগুলো বলছে, নিহত ও আহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। যদিও ইজরায়েল জানিয়েছে যে অধিকাংশ মৃতরা হল হামাসের সন্ত্রাসী ।।